ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

শৈবাল পয়েন্টে

বৃষ্টিভেজা সমুদ্র স্নান আর নাচে গানে বর্ষা উৎসব

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ১৩ জুন ২০১৭

বৃষ্টিভেজা সমুদ্র স্নান আর নাচে গানে বর্ষা উৎসব

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ বৃষ্টিভেজা, সমুদ্র স্নান আর নাচ-গানের নানা আনন্দ-আয়োজনের মধ্য দিয়ে সমুদ্র সৈকতের ঝাউবীথির বালিয়াড়িতে শুরু হয়েছে রাখাইন সম্প্রদায়ের বর্ণিল বর্ষা উৎসব। শৈবাল পয়েন্টে তিন মাস ধরে চলবে এই উৎসব। প্রতি শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তরুণ-তরুণী, আবালবৃদ্ধবনিতার মহামিলন মেলা বসে এখানে। প্রতিবছর বৌদ্ধদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান আষাঢ়ী পূর্ণিমার আগে (আষাড়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত) সৈকতে এ উৎসব পালন করে থাকে রাখাইন সম্প্রদায়। পর্যটন শহরে বসবাসকারী কয়েকজন রাখাইন জানান, এটি তাদের কোন সামাজিক বা ধর্মীয় উৎসব নয়, শুধু সবাই মিলেমিশে মজা করার জন্যই এই আয়োজন। বিশেষ করে বর্ষায় বৃষ্টি এবং সাগরের জলে সিক্ত হয়ে আনন্দে মেতে ওঠা উৎসবের প্রধান লক্ষ্য। রাখাইন নেত্রী মাটিন টিন জানান, শতাব্দীকাল ধরে রাখাইন সম্প্রদায় এ উৎসব পালন করে আসছে। একসময় মেরিন ড্রাইভ সড়কের হিমছড়ির অরণ্যে এ উৎসব উদ্যাপন করা হতো। রাখাইন তরুণ-তরুণীরা নানা রকমের খাবার নিয়ে যেত সেখানে। গত কয়েক বছর থেকে সমুদ্র আর প্রকৃতিকে আরও নিবিড়ভাবে কাছে পেতে সৈকতের মন মাতানো বাতাসের স্থান ঝাউবাগানে পালন করা হচ্ছে মন রাঙ্গানো বর্ষা উৎসব। রাখাইন ফ্রি-স্টাইল রিলেশনশিপের উথিন য়ে, বাওয়ান, মংহ্লা ওয়ান, মংসি আই, মংথেন নায়, ক্যওয়ান, চ লাইন, মংবাসেন, জনি ও থেন থেন নাই জানান, এ উৎসবের সঙ্গে ধর্মীয় উৎসবের কোন সম্পৃক্ততা নেই। তবে তিন মাসব্যাপী চলে অন্যরকম আনন্দ। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সকল বয়সী মানুষ উৎসবে আসে। আনন্দ, হাসি ও আর গানে মেতে ওঠে সবাই। জানা যায়, প্রতি শুক্রবার তারা সৈকতের ঝাউবাগানে আসবে। গত শুক্রবারও দুপুরে তপ্ত রোদ উপেক্ষা করে মহেশখালী, রামু, চকরিয়া, টেকনাফ ও বিভিন্ন রাখাইন পল্লী থেকে শিশু-কিশোর, যুবক, বৃদ্ধাসহ পরিবার-পরিজন নিয়ে এক কাতারে শামিল হয়। কেউ নাচছে, কেউ গাইছে, আবার অনেকে নিজেদের রান্না করা মজার মজার খাবার-দাবার নিয়ে ব্যস্ত। রয়েছে ঐতিহ্যবাহী পানীয়। রৌদের প্রখরতা হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝাউবীথিজুড়ে রাখাইন সম্প্রদায়ের মিলনমেলা বসে। রামু থেকে আসা অ জ রাখাইন উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে জানালেন, এ উৎসবে এলে অনেক পুরনো বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখা হয়। তাই প্রতিবছর এখানে আসার লোভ সামলাতে পারি না। খুব মজা হয় বলে আসি। রাখাইন হ্যাংগিং গার্ডেনের ওয়ানশে, কিংজ, ববি, মং মং, ওয়ান জ্য, জওয়ান, কমংটেন, উচ্য থেন বলেন, বিশাল সমুদ্র সৈকতকে সামনে রেখে ঝাউ বাগানে চলে এ আনন্দ আয়োজন। সবকিছু মিলে আসলে অসাধারণ আনন্দ উৎসব। যে যাই বলুক। আমরা বলব বর্ষা উৎসব। বৃষ্টির সঙ্গে এ উৎসবের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। কারণ যে দিন বৃষ্টি বেশি হয়, ওই দিন মজা হয় বেশি। উৎসবে এসে কেমন লাগছে? এমন প্রশ্নে হাগই জনগোষ্ঠীর জ জ, আক্য, জ জ ইয়ুদি, মং ম ও আবুরী জানান, সবাই মিলেমিশে বৃষ্টি এবং সাগরের জলে সিক্ত হয়ে আনন্দে মেতে ওঠার জন্যই মূলত এখানে আসা। এটিকে বর্ষাকালীন পিকনিকও বলা যায়। ঝাউ বাগানে দিনভর আনন্দ-উল্লাসের পর বিকেলে দল বেঁধে সবাই নামেন সমুদ্র স্নানে। সমুদ্র স্নান শেষে সবাই নিজ নীড়ে ফেরে।
×