ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিএমডিএ-পবিস দ্বন্দ্ব

বরেন্দ্রে বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন ॥ আউশ আবাদ হুমকিতে

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ১৩ জুন ২০১৭

বরেন্দ্রে বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন ॥ আউশ আবাদ হুমকিতে

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ নিয়মিত বিদ্যুত বিল পরিশোধ করেও বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ায় রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে এবার আউশ চাষাবাদ নিয়ে শুরুতেই বিপাকে পড়েছেন কৃষক। বরেন্দ্র অঞ্চলে কয়েক শ’ গভীর নলকূপে বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন করে দেয়ায় এবার শুধু রাজশাহী জেলায় ৪৬ হাজার হেক্টর জমির আউশ আবাদ হুমকির মুখে পড়েছে। ফলে ১ দশমিক ৭ টন আউশ ধান উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। বিএমডিএ সূত্র জানায়, বোরো মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট ‘ফ্ল্যাশ ফ্লাডে’ হাওড় অঞ্চলে বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। ফলে ধান ও চালের দাম বেড়েছে। এ ঘাটতি পূরণের একমাত্র নিরাপদ ও নিশ্চিত এলাকা বরেন্দ্র অঞ্চল। সঠিকভাবে এ অঞ্চলে আউশ আবাদ করা সম্ভব হলে সেই ঘাটতি অনেকটাই পূরণ করা সম্ভব। তবে বরেন্দ্র অঞ্চলের রাজশাহী, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের কয়েক শ’ গভীর নলকূপে বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় চলতি আউশ চাষ পুরোপুরি হুমকির মুখে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজশাহী ও নাটোর জেলা নিয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) রাজশাহী জোন। এ জোনের অধীনে ৩ হাজার ২৬২টি সেচযন্ত্রের মাধ্যমে ১ লাখ ৮০ হাজার ৪৮৬ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া হয়। এবার আউশ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৪৬ হাজার হেক্টর জমি। তবে শুরুতেই গভীর নলকূপের বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন করে দেয়ায় শুরুতেই চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হোচট খাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিএমডিএ সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে ৩ হাজার ২৬২ সেচযন্ত্রের বিপরীতে এপ্রিল পর্যন্ত পল্লী বিদ্যুত সমিতিকে প্রায় ১৭ কোটি ৫৬ লাখ ২৮ হাজার ৬৭২ টাকা নিয়মিত বিল পরিশোধ করা হয়েছে। তবে ১৬ লাখ টাকার আপত্তিকৃত ‘পাওয়ার ফ্যাক্টর মাসুল’ অপরিশোধিত রয়েছে। এ আপত্তিকৃত বিলের বিষয়ে বিএমডিএ ও পল্লী বিদ্যুত সমিতির মধ্যে আলোচনার জন্য বিএমডিএ চেয়ারম্যান আরইবি চেয়ারম্যানকে চিঠিও দিয়েছেন। তবে সে আলোচনার প্রস্তাব উপেক্ষা করে পল্লী বিদ্যুত সমিতি এ অঞ্চলের গভীর নলকূপের বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন অব্যাহত রেখেছে। জেলার তানোর উপজেলার চন্দনকোঠার কৃষক মিজান, মোহনপুরের সিদ্দিকুর রহমান ও গোদাগাড়ির মজিবর রহমান জানান, গভীর নলকূপের আওতায় বর্তমানে বীজ বপন ও ধান রোপণের কাজ চলছে। এছাড়াও রয়েছে সবজির আবাদ। কিন্তু বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় ফসল নষ্ট হতে চলেছে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বীজতলার প্রস্তুতি ও ধান রোপণের কাজ । বিএমডিএ রাজশাহী জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান খান জানান, সরকার ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষকদের কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছেন। অথচ আপত্তিকৃত কিছু বিদ্যুত বিলের কারণে পল্লী বিদ্যুত সমিতি বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের গভীর নলকূপের বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে। প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান আরও জানান, বিএমডিএ কর্তৃক নির্মিত ও পল্লী বিদ্যুত সমিতির নিকট হস্তান্তরিত ১১ কেভিএ বিদ্যুত লাইনের জন্য বিএমডিএ ১০ শতাংশ প্রদত্ত বিলের ওপর বাট্টা পেয়ে থাকে। কিন্তু ২০০৭ সাল থেকে পল্লী বিদ্যুত সমিতি বিএমডিএকে বাট্টা না দেয়ায় পল্লী বিদ্যুতের নিকট বিএমডিএ’র পাওনা প্রায় ২৫ কোটি টাকা। এ নিয়ে অডিট আপত্তিও হয়েছে। তাছাড়া পল্লী বিদ্যুত সমিতি বিভিন্ন সময় বিএমডিএ ট্রান্সফরমার, পোল, পোল ফিটিংস ধারে গ্রহণ করেছে যা এখনও ফেরত দেয়নি। অফেরতযোগ্য এসব মালামালের মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। অথচ আপত্তিকৃত বিল অপরিশোধিত থাকার কারণে জোর করে তারা (পল্লী বিদ্যুত সমিতি) বিএমডিএর গভীর নলকূপের ঢালাওভাবে বিদ্যুত লাইন বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। ফলে বরেন্দ্র অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষক আউশ আবাদ শুরুই করতে পারছেন না। এসব বিষয়ে রাজশাহী পল্লী বিদ্যুত সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) এসএম মোজাম্মেল হক জানান, ‘পাওয়ার ফ্যাক্টর শুদ্ধিকরণ চার্জ পরিশোধ না করায় লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন এখন পর্যন্ত শুধু রাজশাহী পল্লী বিদ্যুত সমিতি ৫৫টি গভীর নলকূপের লাইন বিচ্ছিন্ন করেছে। আরও ৪৩২ গভীর নলকূপে বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
×