ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্ক

প্রকাশিত: ০৭:০২, ১২ জুন ২০১৭

কর্মক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্ক

ভাল থাকা আর ভাল রাখা তথা সার্বিক উন্নতির মাধ্যমে নিজের অস্তিত্ব তুলে ধরার প্রয়োজনে আমাদের করতে হয় কাজ। সংসার,সমাজ ও রাষ্ট্রের চাহিদা পূরণের তাগিদেই যেতে হয় কর্মক্ষেত্রে। সেখানে খুলে যায় সম্পর্কের এক নতুন দুয়ার। কাজের মধ্য দিয়ে কেটে যায় দিনের অধিকাংশ সময়। একবার কাজের চাপে পড়লেই আমরা জীবনের গতানুগতিক প্রয়োজনাদি ভোলার উপক্রম হই। আপন হয়ে যায় কর্ম, কর্মক্ষেত্র এবং তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা প্রতিটি মানুষ । কর্মক্ষেত্রের প্রথম দিনে যার সঙ্গে আলাপচারিতা বেশি হয় শুরুতেই তার সঙ্গে একটা ভাল সম্পর্ক সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। পরবর্তীতে তা স্থায়ী হবে এমন কোন কথা নেই। পরিচয় ঘটে আরও কিছু নতুন মানুষের সঙ্গে। তাদের মধ্য থেকে নিজের মানসিকতার সঙ্গে মিলে যায় সে রকম কাছের জন্য, সার্পোটের মানুষ খোঁজার চেষ্টা চলতে থাকে ভিতরে ভিতরে। আপনি যে সিটে বা রুমে বসেছেন তার পাশের সিটের বা রুমের সহকর্মী, যে বিভাগে আপনি আছেন সেই বিভাগের সহকর্মী, কর্মকর্তা সকলের সঙ্গেই তুলনামূলক একটা ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেটা একই বিষয়ে কাজের জন্য, অধিক সময় পাশাপাশি থাকার কারণে, আবার কাজ চলাকালীন ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা শেয়ার করার কারণেও হতে পারে। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ট্রান্সফার হলে সেখানকার সহকর্মীদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া, কাজ সংক্রান্ত খবর নেয়া ইত্যাদি কারণে সে পরিবেশও আপন হয়ে যায়। কর্মক্ষেত্রে এমন কেউ থাকতে পারে যে আপনার পূর্ব পরিচিত, বন্ধু , কাছের মানুষ বা আত্মীয় কিন্তু চেষ্টা রাখুন সে সম্পর্ক যেন অফিসে প্রকাশ না পায়। যা অন্য সহকর্মীর মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া না ফেলে। একই সঙ্গে কাজ করতে করতে কারও প্রতি আপনার ভাললাগার জন্ম হতেই পারে কিন্তু অফিসিয়াল পরিবেশে তা সামাল দিয়ে চলুন। বিষয়টি যেন আপনার ইমেজ খারাপ না করে। আপনি যেন সহকর্মীদের সমালোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত না হন। কোন সেনসেটিভ বা গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব পালন করতে হলে সেখানে যতই কাছের মানুষ থাকুক না কেন,সমস্ত কিছু বুঝে নিয়ে কার্য সম্পাদন করুন। যাতে আপনি কাজের বিষয়ে পরিষ্কার থেকে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুস্পষ্টভাবে তা ব্যক্ত করতে পারেন। কেউ যেন কোন প্রকার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আপনাকে কোন রকম বিপদের সম্মুখীন করতে না পারে এ বিষয়ে সদা সতর্ক থাকুন। কাজ করা, কাজ বোঝা বা বোঝানো এবং কর্মক্ষেত্রে নিজ যোগ্যতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে সুনামের সঙ্গে টিকে থাকার জন্য সকলের সঙ্গে ভাল ব্যবহার, সহযোগী মনোভাব, বিচক্ষণ দৃষ্টি নিয়ে চলুন। একই বিভাগীয় সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্ক কর্মক্ষেত্রে যোগদান করার পর যারা আপনার বিভাগের সহকর্মী, মূলত সম্পর্কটা গাঢ় হয় তাদের সঙ্গেই। আবার কোন সমস্যার উদ্ঘাটন হলে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের মধ্য থেকে হয়। তারা আপনার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষকে কমপ্লেন করতে পারে অথবা কোন সমস্যার উৎপত্তি ঘটিয়ে আপনাকে দায়ী করে দিতে পারে। তাই কোন কাজ করার পূর্বে অথবা ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে বুঝে পদক্ষেপ নিন। আপনার সঙ্গের সহকর্মী আপনাকে অন্য কোন সহকর্মী সম্বন্ধে কোন আপত্তিজনক কথা বা ব্যক্তিগত বিষয়ে বলতে পারেন। আবার অন্য কোন সহকর্মী আপনাকে ঘিরে কি বলেছে তার বিশদ বিবরণ দিতে পারেন। ফলে হঠাৎ করে উত্তেজিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে য়ায় । সমস্ত কিছু না জেনে, বুঝেই সেই সহকর্মী সম্বন্ধে বিরূপ ধারণার জন্ম হতে পারে আপনার মধ্যে। যা একত্রে কাজ করার ক্ষেত্রে এক অদৃশ্য বাধার জন্ম দিতে পারে যার প্রভাব পরতে পারে আপনার পারফরমেন্সের ওপর । একটা বিষয় স্মরণ রাখবেন কেউ যদি আপনাকে অন্য সহকর্মীর অবর্তমানে কিছু বলতে পারে তাহলে আপনার অবর্তমানে আপনার সম্পর্কে অন্যকেও কিছু বলতে পারে। তাই অফিসিয়াল কথা ব্যতীত কারও ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলা , শোনা এমনকি বিষয়গুলোকে প্রশ্রয় দেয়াও ঠিক না। তবুও একই সঙ্গে দীর্ঘ সময় থাকার কারণে কখন যেন পাশের সহকর্মীটি জেনে যায় আপনার পরিবার, আপনার মধ্যে চলতে থাকা মানসিক চাপ, শরীরিক অবস্থা, আপনার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেও। তবে এমন কোন কথা বলা উচিত না যা পরে আপনার ওপর ভারি হয়। যেহেতু এটা আপনার কর্মক্ষেত্র তাই এখানে প্রতিযোগিতা, পারফরমেন্স, প্রমোশন , ইনক্রিমেন্টের একটা বিষয় রয়েছে। প্রয়োজনের তাগিদে, সময়ে বলা দুর্বলতার কথাটিই আপনাকে পিছিয়ে দিতে পারে আপনার সহকর্মী বন্ধুটি থেকে। কখনও কখনও এমন অনাকাক্সিক্ষত পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে যখন আপনার সহকর্মী না চাইলেও পরিস্থিতির চাপে পরে আপনার বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে তথ্য দিতে হয়। সুতরাং কোন কথা বলার আগে ভেবে নিন। আবার কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত রিজার্ভ থাকাটাও আপনাকে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দিতে পারে। অফিসে একজনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দেখে অন্য কেউ আপনার প্রতি ঈর্ষান্বিত হতে পারে , আর এর প্রভাব গিয়ে পড়বে তখনই যখন কোন কাজে ওনার সঙ্গে মতের অমিল হবে। আবার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক থাকার কারণে কেউ কেউ আপনার সঙ্গে সেধে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে পারে। আপনার মাধ্যমে তার কোন কাজ কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরা বা করিয়ে নেয়ার কথা বলতে পারে। যে কাজটি আপনি সেই মুহূর্তে করতে প্রস্তুত না কিন্তু ‘না’ বলতেও পারছেন না। ফলে তার সঙ্গে সম্পকের্র অবনতি ঘটতে পারে। যদিওবা আপনি কর্তৃপক্ষকে বললেন, আর ওই সময়ে উনি বিষয়টি শুনতে প্রস্তুত না, তখন অপনার খারাপ লাগবে। আর ওনারও আপনার সম্পর্কে একটা ভিন্ন ধারণার সৃষ্টি হতে পারে। আবার কেউবা ভাল সম্পর্কের কারণে নিজের কর্তব্যকে অতি সহজেই অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়। কারও সঙ্গে ভাল সম্পর্কের সদ্ব্যবহার করার পূর্বে জেনে নিন ওই সময়ে উনি ব্যস্ত আছেন কিনা? একত্রে একই কাজ করার জন্য মাঝে মাঝে ইয়ারকি, হাসিঠাট্টা,আর ছোট ছোট খুনসুটিত চলতেই পারে না হলে কাজের চাপে এক গুয়েমিতা চলে আসবে, কমে যাবে কাজের স্পিড। পরিবেশ হয়ে উঠবে গুরুগম্ভীর। সকলে মিলে কাজ করা, নিত্য নতুন কাজের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ কর্মক্ষেত্রে আপনার সফলতাকে যেমন বাড়িয়ে দিবে, কোম্পানিও তার টার্গেট পূরণে হবে সক্ষম। অন্য বিভাগের সহকর্মী সঙ্গে সম্পর্ক অন্য বিভাগের সহকর্মীর সঙ্গে হাই হ্যালো করা ,কুশলাদি জানা কাজের বিষয়াদি সম্পর্কে খবর নেয়া, আলোচনা করা তথা সকলে একই পরিবারভুক্ত এই মানসিকতা থাকা উচিত। কিন্তু অফিসিয়াল প্রয়োজন ছাড়া নিজের প্রয়োজনে এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে হুুটাহুটি করে গিয়ে অন্যের কাজে সমস্যা সৃষ্টি করা ঠিক না। এ বিষয়টিও আপনার উর্ধতন কর্মকর্তার কাছে গিয়ে আপনাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করতে পারে। বিভাগীয় কর্মকর্তার সঙ্গে সম্পর্ক আপনার স্যারের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক হওয়া উচিত শ্রদ্ধার, সম্মানের, বিশ্বাসের এবং কাজ সংক্রান্ত। তার সঙ্গে অন্য সহকর্মী সম্পর্কে সমালোচনা না করা, অতিমাত্রার ইয়ারকি, বিনা কাজে বেশি সময়ব্যাপী গল্প করা ঠিক না। আপনি বললে উনিও এক সময় আপনার সঙ্গে এমন কোন বিষয়ে কিছু বলতে পারেন যা তৎক্ষণাৎ মেনে নেয়া আপনার পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে। উনি আপনার আত্মীয় বা কাছের লোক হলেও অফিসের পরিবেশে তা মেইন্টেন করে চলা উচিত। কোন আন্তরিক সম্পর্ক থাকলেও তা সকলের সামনে তুলে ধরা ঠিক নয়। আবার কর্তৃপক্ষেরও তার সহকর্মীদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা, তাদের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখা, লিডারশিপ মনোভাব থাকা যাতে সকলের মধ্যে কাজের স্পৃহা বাড়িয়ে, সঠিক সময়ে কাজ আদায় করতে পারেন। তিনি তাদের খবরাখবর অবশ্যই রাখবেন কিন্তু একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা না বলাই শ্রেয়। অন্য বিভাগীয় উর্ধতন কর্মকর্তার সঙ্গে সম্পর্ক কর্মক্ষেত্রে আপনার ডিপার্টমেন্টের বস ছাড়া অন্য উর্ধতন সকল বসের সঙ্গে অফিসিয়াল প্রেক্ষাপট বজায় রেখে শ্রদ্ধা,সম্মানের সঙ্গে কাজ সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলা উচিত। সর্বোচ্চ উর্ধতন কর্মকর্তার সঙ্গে সম্পর্ক সর্বোচ্চ উর্ধতন কর্মকর্তাকে সম্মান করা, তার দেয়া দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা, সময়ে কাজ সুসম্পন্ন করে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা উচিত। আবার স্যারেরও উচিত তার কোম্পানি বা সংস্থার কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে লেভেল রেখে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখা। যাতে করে কর্মকর্তা, কর্মচারীরা তার আদেশ মেনে নিজেস্ব উদ্যোগে দ্রুততার সঙ্গে কাজ করতে বাধ্য হয় এবং সম্পন্নকৃত কাজটি নির্ভয়ের সঙ্গে তার সামনে তুলে ধরতে পারে। তাদের সকল সুবিধা , অসুবিধার দিকে লক্ষ্য রাখা। তারা যাতে কাজে উৎসাহী হয় এমন কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা। কাজের স্বার্থেই সকলের মধ্যে সুসম্পর্কের জাল তৈরি করা। যাতে করে সকলে একই পরিবারভুক্ত এমন একটি বন্ধনে থেকে একে অপরের সহযোগিতার মাধ্যমে সঠিক এবং দ্রুততার সঙ্গে কাজ সম্পন্ন করতে পারে। যা কোম্পানির উন্নয়নে সকলকে উৎসাহের সঙ্গে একযোগে কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগাবে। অফিস সহযোগীর সঙ্গে সম্পর্ক অফিস সহযোগী, যারা আপনার কাজের সঙ্গে সংযুক্ত বিষয়গুলো এগিয়ে দেয়, আপনাকে কাজে সতেজ রাখার জন্য চা, পানি, জলখাবার এনে দেয়, কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে সাহায্য করে তাদের সঙ্গে নিজের ভারোত্ব বজায় রেখে ভাল ব্যবহার করা উচিত। তাদের সুবিধা অসুবিধাগুলো খেয়াল রাখা, তাদের দিয়ে এমন কোন কাজ করানো উচিত নয় যা তাদের কাজের সঙ্গে না যায়। তাদেরও উচিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্মানের সঙ্গে কথা বলা এবং তাদের দেয়া কাজগুলো সঠিক সময়ে সম্পন্ন করা। একাগ্রতা, উদ্যমতা, সৃষ্টিশীলতা, সুকৌশলী নেতৃত্ব, বিচক্ষণ দৃষ্টিভঙ্গি,বন্ধুপ্রতিম মনোভাব কর্মক্ষেত্রে আপনার সফলতার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের সাফল্য আনতে সক্ষম।
×