ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গীতাঞ্জলি হালদার

আজকের নারী এবং তাদের অবদান

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ৯ জুন ২০১৭

আজকের নারী এবং তাদের অবদান

আমি একজন নারী। আছি শিক্ষকতা পেশায়। সংসারের কাজের সঙ্গে এই যে পেশা, এই অবস্থায় শুধু আমি নই লাখো বাঙালি নারী এখন সংসার সামলিয়েও বিভিন্ন কর্মসংস্থানে জড়িয়ে আছে। ভোর থেকে মাঝরাত পর্যন্ত চলে নারীদের কাজ। তিন বছর আগে ঢাকায় এসেছি। এসেই যুক্ত হয়েছি সংসারের সঙ্গে কর্মজীবনে। রাস্তার যানজটে কাজের অবিরাম চাপে নিজেকে সামিল করেছি যান্ত্রিক এই জীবনে। এই তিনটি বছর কোথায় যে হারিয়ে গেল, নিজস্ব অনুভূতি সেটা বুঝতেই পারেনি। সকাল থেকেই ছুটছি তো ছুটছি। মাঝরাত পর্যন্ত চলে কাজ। এ তো গেল নিজের জীবনের কিছু কথা। রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে দেখা যায় আমার মতো হাজারো নারী সেখানে যারা পথে-ঘাটে ফুটপাথে অবিরাম পরিশ্রম করে চলেছে। যারা অফিস-আদালতে বিভিন্ন পেশায় নিজেকে নিযুক্ত করেছে, তারাও ছুটে চলেছে প্রতিনিয়ত। রাস্তায় বের হলে দেখা যায় পুরুষের পাশে নারীর জীবনপ্রবাহ। ডাব বিক্রি করা, রিক্সা চালানো, বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিক, মুদির দোকান, ফুলের দোকান, শপিংমল এমনকি ফুটপাথসহ রাস্তায় রাস্তায় ফেরি করেও নারীরা জীবিকা নির্বাহ করছে। এ তো গেল নিরক্ষর নারীদের জীবন কাহিনী। এছাড়াও রয়েছে সমাজে শিক্ষিত নারীগণ। তাদের আসলে বাইরে থেকে বোঝা যায় না, তারা ঠিক কতটা পরিশ্রম করে। যে নারী ভাল অবস্থানে চাকরি করে, সে নারীর জীবন সংগ্রামও কম নয়। সকালে উঠে সংসারের কাজ সেরে ছেলে-মেয়েকে স্কুল-কলেজে পাঠানো, স্বামীর সঙ্গে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে অফিসে যাওয়া, আবার সেই সন্ধ্যায় এসে সন্তান-স্বামীসহ নিজের যতœ নেয়া সবই করতে হয় তাকেই। এই যে কাজকর্ম, আসলে কোনটাই কম বা ছোট নয়। আজ আমাদের দেশের নারীরা বিভিন্নভাবে স্বামীদের পথ চলার সঙ্গী হলেও মূলত তাদের মূল্যায়ন সেভাবে হয় না। প্রতিটি ঘরের নারীই কম-বেশি হয়রানি হয়। হয়ত সেটা বাকস্বাধীনতায়, নয়ত অন্য অধিকারের প্রশ্নে। ঘরের বাইরে নারীরা যে পরিমাণ শ্রম দিচ্ছে, তা সত্ত্বেও আমাদের এই সমাজে তাদের নিরাপত্তা খুবই অল্প। নারীর অধিকারের জন্য আইন করা হয়েছে, আদৌ কি সেই আইন সকলে মান্য করে? নারীদের এগিয়ে যাওয়ার নিরাপত্তা নেই বললেও ভুল হবে না। প্রতিনিয়তই বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। একটু পত্রিকার পাতায় চোখ বুলালেই তা বোঝা যায়। বর্তমানে নারীদের জন্য নানামাত্রিক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হওয়ায় তারা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছে বা হতে পারছে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিমানের পাইলট, খেলোয়াড় এমনকি নাজনীনদের মতো হিমালয় পর্বত আরোহনকারীও রয়েছে নারীদের বিশেষ পদচারণায়। এমনও অনেক নারী আছে যারা নিজে উদ্যোক্তা হয়ে হাতের কাজের মাধ্যমে পরিবারকে করেছে স্বাবলম্বী। হাস-মুরগি, শাক-সবজি এমনকি ফুল চাষ করেও নারীরা এগিয়ে চলেছে ক্রমাগতভাবে। নারীরা যেমন বিভিন্ন কর্মযোগে তাদের পেশার মর্যাদা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনি পুরুষের সঙ্গেও সমান তালে হাতে হাত রেখে এগিয়ে চলেছে। তারা আজ হাত গুটিয়ে বসে নেই। বিবাহিতা নারীরা স্বামীর অধীনে না থেকে বরং তাদের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে, এমন উদাহরণ হরহামেশাই পাওয়া যায়। একজন নারী যদি পুরুষের পাশে থেকে পথচলার সাথী হয় তাহলে পুরুষও অনায়াসে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। পুরুষ আর নারীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ভাল, সুন্দর এবং সুস্থ্য জীবন পাওয়া সম্ভব। পুরুষরাও দেখেছে নারীদের মধ্যে সম্ভাবনার প্রদীপ। তাই তো আজ তারা নারীদের ঘরের চার দেয়ালে আটকে না রেখে তাদের সঙ্গে চলতে সাহায্য করছে। একজন পুরুষ যদি না চাইত, তাহলে আজও নারীদের বন্দীজীবন কাটাতে হতো। তাই নারীর এই যে সাফল্য-অবদান, তার পেছনে পুরুষের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। একজন নারী যতই সফলতা পাক না কেন, তার শেষ অবলম্বনই পুরুষ অর্থাৎ তার স্বামী। আর একজন পুরুষ যতই সচ্ছল হোক না কেন, তাতে নারীর অবদান সবসময়ই ছিল, এখনও আছে, ভবিষতেও থাকবে। বর্তমানে বেশিরভাগ নারী তাদের মূল্যবান শ্রম বিনিয়োগ করছে এবং এ সমাজকে তাদের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। নারীরা তাদের পরিশ্রম আর বুদ্ধি দিয়ে আজ বিশ্বকে জয় করছে, এমনকি বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে সংসদ সদস্যদের পদও অলঙ্কৃত করছেন। ফলে নারীই আজ উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে রয়েছে। তাই তো কালজয়ী সে প্রবাদ আজও সকলের মুখে মুখে ‘সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে।’ বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নারী জাগরণের অগ্রদূত হয়ে সমাজের নারীদের যে উন্নতিসাধন করেছিলেন, তার সেই জাগরণই আজও নারীর এগিয়ে চলার হাতিয়ার হয়ে রয়েছে। সকল পরিশ্রমী আর বুদ্ধিমতি নারীর কাছে একটাই প্রার্থনা, তারা যেন যুগে যুগে কর্ম দ্বারাই সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। এই বিশ্বে নারী আর প্রকৃতির মধ্যে রয়েছে এক নিবিড় মিলবন্ধন। প্রকৃতি যেমন সকল মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে দেয়, তেমনি একজন কোমলমতি নারীর আচরণ ও কার্যকলাপেও জগতে শান্তি বর্ষিত হয়। আমি বলতে চাই, একমাত্র নারীর ভালবাসার টানেই এ জগত সজীবতা পায়, ঠিক বৃক্ষ যেমন সকল প্রাণীদের দেয়। নারীই জগত সংসারের আশীর্বাদ। নারীই পারে সঠিক পথ দেখাতে। যেখানে নারী যত সজীব, সেখানে সমাজব্যবস্থাও ততই গতিময়। তাই আজ নারীদের সফলতা এবং সকলের আশীর্বাদ কামনা করে লেখাটি নিবেদন করলাম। মনে রাখবেন, নারীই সত্তা।
×