ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

হাজার বছরের ইতিহাসের প্রত্নপালানাট ‘মহাস্থান’

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৬ জুন ২০১৭

হাজার বছরের ইতিহাসের প্রত্নপালানাট ‘মহাস্থান’

মনোয়ার হোসেন ॥ হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এক ভূখ- বাংলাদেশ। বাঙালী জাতিসত্তার গৌরবময়তার সাক্ষ্যবহ সেসব ইতিহাসের নানা নিদর্শন ছড়িয়ে আছে দেশের নানা প্রান্তে। তেমনই এক পুরাকীর্তিসংবলিত স্থান ও প্রতœনগর বলে বিবেচিত বগুড়ার মহাস্থানগড়। আড়াই হাজার বছরের পুরনো সংস্কৃতি ও সভ্যতার সম্মিলনে পু-্রনগর নামের এ জনপদ ঘিরে গড়ে উঠেছিল প্রাচীন বাংলার রাজধানী। সেই প্রাচীন বাংলার রাজধানী গত বছর অর্জন করেছে সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানীর মর্যাদা। যিশু খ্রিস্টের জন্মের আগে নির্মিত প্রাচীন নগরের কথা এবার উঠে আসবে নাটকের গল্পে। সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানীর মযার্দাপ্রাপ্তি এবং নিয়মিত প্রতœনাটক নির্মাণের অংশ হিসেবে প্রযোজনাটি প্রযোজনা করবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। নির্মিত হবে পু-্রনগরের মহাস্থানকে নিয়ে একাডেমির প্রতœ-পালানাট ‘মহাস্থান’। সেলিম মোজাহার রচিত নাটকটির নির্দেশনা দেবেন নাট্যজন ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। আগামী অক্টোবর মাসে বগুড়ার বাসু বিহারে প্রযোজনাটির প্রদর্শনী। ইতোমধ্যে মহাস্থান প্রতœপালানাট নির্মাণের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সেগুনবাগিচার শিল্পকলার একাডেমিতে চলছে প্রযোজনাটির জন্য নাট্যকর্মী সংগ্রহের কাজ। সোমবার দুপুরে একাডেমির নাট্যশালার ৫০৭ নম্বরে কক্ষে গিয়ে চোখে পড়লো নাটকটিতে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক নাট্যকর্মীদের তালিকা। নাচ-গান ও বাদনে পারদর্শিতাসম্পন্ন অভিনয়শিল্পীরা প্রতœনাটকটিতে অংশগ্রহণের অভিপ্রায়ে লিখিয়েছেন তাদের নাম। মূলত রাজধানীর বিভিন্ন নাট্যদলের নাট্যকর্মীরাই রয়েছেন সেই তালিকায়। এছাড়া কোন নাট্যদলের বাইরেও অনেকে আবেদন করেছেন প্রযোজনাটির অংশ হতে। ৮ জুন পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করে ৯ জুন বাছাইপর্বের সাক্ষাত শেষে চূড়ান্ত হবে প্রযোজনাটিতে ঠাঁইপ্রাপ্ত শিল্পীদের নাম। প্রতœ-পালানাট মহাস্থান প্রসঙ্গে শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা বিভাগের সহকারী পরিচালক আলী আহমেদ মুকুল জনকণ্ঠকে বলেন, এ প্রযোজনার মাধ্যমে আমাদের আড়াই হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্বরূপটি তুলে ধরা হবে। মহাস্থান প্রতœ-পালানাটের মাধ্যমে মেলো ধরা হবে দক্ষিণ এশিয়ার বিস্তৃত-ঐতিহ্যে বাঙ্গালের পরিচয় ও অস্তিত্বের রূপরেখা। বাংলার দেশজ নাটপ্রকরণের আশ্রয়ে নির্মিত হবে দুই ঘণ্টাব্যাপ্তির এই মহাকাব্যিক প্রযোজনাটি। অভিনয়শিল্পী ও বাদ্যযন্ত্রী মিলে এতে অংশ নেবেন প্রায় ৮০ জন শিল্পী। ইতোমধ্যে প্রযোজনাটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। ৯ জুন নাটকের নির্দেশক ও নাট্যকারের উপস্থিতিতে শিল্পীদের চূড়ান্ত বাছাই শেষে শুরু হবে মহড়া পর্ব। একাডেমির মহড়াকক্ষে চলবে এ মহড়া। পরবর্তী সময়ে অক্টোবর মাসে বগুড়ার বাসু বিহারের উন্মুক্ত আঙিনায় হবে প্রযোজনাটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী। ওই প্রদর্শনীর পাঁচদিন আগে সেখানে শিল্পীদের নিয়ে ক্যাম্প করা হবে। যাতে প্রতœনাটকটি আরও বেশি মানসম্পন্নভাবে দর্শকদের কাছে উপস্থাপন করা যায়। মহাস্থান একইসঙ্গে একটি পালানাটক এবং আরও বিশেষ করে বললে প্রতœপালানাটক। এর আখ্যান ভাগ গড়ে উঠেছে ইতিহাস, পুরাণ, লোকশ্রুতি ও কিংবদন্তির মিশেলে। বাংলার প্রাচীন রাজধানী মহাস্থানকে কেন্দ্র করে সম্রাট আলেকজান্ডারের গঙ্গাঋদ্ধি জয়ের বাসনাকাল থেকে ১৯৭১-এর স্বাধীনতা পর্যন্ত বিস্তৃত হবে এ নাট্য-আখ্যান। ইতিহাস-পুরাণের মিলিত আশ্রয়ে ওই সময়কালের বাংলার রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় পটপরির্তনের ইতিহাসের জানা ও জনপ্রিয় গল্পপ্রবাহ হচ্ছে এ নাটকের আখ্যান ভাগ। একটি বন্দনা গীতিসহ মোট ১৩টি আখ্যানকে ঘিরে প্রাসঙ্গিকতা পাবে ‘মহাস্থান’ প্রতœপালানাটকের মহাকাব্যিক রঙ্গভূমি।
×