ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

রিমান্ডে মুখ খুলছে সুমাইয়া

‘বেহেশতের’ আশায় আত্মঘাতী হয় গোদাগাড়ীর জঙ্গীরা

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৬ মে ২০১৭

‘বেহেশতের’ আশায় আত্মঘাতী হয় গোদাগাড়ীর জঙ্গীরা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বেনীপুর জঙ্গী আস্তানা থেকে দুই শিশুসহ আত্মসমর্পণকারী জঙ্গী সুমাইয়াকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। জেলার গোদাগাড়ী থানা পুলিশ রিমান্ডে নিলেও তাকে অন্য একটি থানায় রেখে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্র্তারা পর্যায়ক্রমে রবিবার রাত থেকেই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন। পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে মুখ খুলতে শুরু করেছে সুমাইয়া। অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য আপাতত দিতে অপারগতা প্রকাশ করছে পুলিশ সূত্র। নিরাপত্তা ও কৌশলগত কারণে জেলার অন্য একটি থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাকে। এরই মধ্যে তাদের একজন গুরুর নামও পেয়েছে পুলিশ। এ গুরুসহ সাজ্জাদের বড় ছেলে সোয়েবকেও এখন খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সূত্র। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অপারেশন সান ডেভিল শুরুর পরপরই ওই আস্তানায় থাকা তিন নারী ও দুই শিশুসহ সবাই আত্মঘাতী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একসঙ্গে তারা বাড়ি থেকে বের হলেও মাঝপথে থেমে যায় সুমাইয়া। তার সঙ্গে দুই শিশু থাকায় সে আর আত্মঘাতীর পথে পা বাড়ায়নি। গোদাগাড়ী থানার ওসি হিফজুল আলম মুন্সি বলেন, দুই শিশুর কথা ভেবেই হয়ত নিজে আত্মঘাতী হয়নি জঙ্গী সুমাইয়া। এরই মধ্যে জঙ্গী সম্পৃক্ততার অনেক তথ্যই পুলিশকে দিয়েছে সে। আত্মঘাতী হলে নিশ্চিত বেহেশত পাবে এ আশায় সবাই মিলেই ওই দিন আত্মঘাতী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। অন্য পাঁচজন সে পথে অগ্রসর হয়ে পরিকল্পনা মোতাবেক আত্মঘাতী হলেও শুধু কোলের দুই শিশুর কারণে সিদ্ধান্ত বদলায় সুমাইয়া। পুলিশকে তারা ‘কাফের’ আখ্যা দিয়ে তাদের খতম করেই নিজেরাও মৃত্যুর পথ বেছে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গোদাগাড়ী থানার ওসি (তদন্ত) আলতাফ হোসেন বলেন, সুমাইয়াকে জিজ্ঞাসাবাদে ‘অপারেশন সান ডেভিল’ চলাকালে ফায়ারম্যান ও পুলিশের ওপর পরিকল্পিত হামলা এবং তার জঙ্গীসংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে সে। এছাড়া আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে সে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করতে এবং নতুন নতুন তথ্য পেতে সুমাইয়াকে আরও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন। তথ্য উদ্ঘাটনের জন্যই তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। আরও ৯ দিন তাকে বিভিন্ন কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এরপর প্রয়োজনে আরও রিমান্ডের জন্য আবেদন করা হবে। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সুমাইয়ার বাবা আত্মঘাতী বোমায় নিহত সাজ্জাদ আলীর বাড়িতে আর কোন্ কোন্ জঙ্গী আসা-যাওয়া করত, রাজশাহী অঞ্চলের আর কারা এ জঙ্গী আস্তানায় আসত, সে বিষয়েও অনেক তথ্য পেয়েছে পুলিশ। সুমাইয়ার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ তাকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযানও পরিচালনা করছে। তবে তদন্ত এবং জঙ্গীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার স্বার্থে এ নিয়ে এখনই বিস্তারিত কিছু জানাতে চাননি পুলিশ কর্মকর্তারা। রাজশাহী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, রিমান্ডে নেয়ার পর সুমাইয়াকে নানা কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সেও মুখ খুলছে। বিভিন্ন তথ্য এরই মধ্যে দিয়েছে। একদিকে জিজ্ঞাসাবাদ, অন্যদিকে তার দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাইও করা হচ্ছে। পুলিশ জানায়, তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য জঙ্গী সুমাইয়াকে রবিবার আদালতে হাজির করে ১৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। তবে শুনানি শেষে আদালত তার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করে। এরপর থেকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়েছে। তার সঙ্গে উদ্ধার দেড় মাসের শিশু সুমাইয়ার কাছে থাকলেও অপর শিশুকে তার চাচার জিম্মায় রাখা হয়েছে। এদিকে জঙ্গী সাজ্জাদ সম্পর্কে আরও তথ্য মিলেছে। বেনীপুরে জঙ্গীবিরোধী অভিযানে নিহত সাজ্জাদ আলীর পরিবার প্রায় একঘরে থাকত বলে জানা গেছে। এলাকার কারও সঙ্গে মিশত না, মানত না গ্রামের রীতিনীতি। এ তথ্য নিশ্চিত করে আত্মঘাতী সাজ্জাদের শ্বশুর লুৎফর রহমান জানান, আগে তার জামাই সাজ্জাদ ও মেয়ে বেলী আক্তার স্বাভাবিক জীবনযাপন করত। কিন্তু ৫-৬ বছর থেকে তারা পাল্টে যায়। তারা গ্রামের কোন মানুষের সঙ্গেই মিশত না। তার সঙ্গেও (শ্বশুর) যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল সাজ্জাদ।
×