ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

৩শ’ কেজি সোনা ও হীরার গহনা জব্দ

আপন জুয়েলার্স মালিকের অবৈধ সম্পদের খোঁজে গোয়েন্দারা মাঠে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৫ মে ২০১৭

আপন জুয়েলার্স মালিকের অবৈধ সম্পদের খোঁজে গোয়েন্দারা মাঠে

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ রাজধানীর বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ মামলার তিন আসামিকে ৮ দিনেও পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। এ ঘটনায় ভিডিও করার দৃশ্যগুলো এখনও উদ্ধার হয়নি। এদিকে নানা ‘বিতর্ক’ সৃষ্টি করে পাঁচদিনের পারিবারিক ছুটিতে যাওয়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিএম ফরমান আলী কাজে যোগদান করেছেন। এ সময় পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের গঠিত তদন্ত দল তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়। অন্যদিকে এই মামলার প্রধান আসামি গ্রেফতারকৃত সাফাত আহমেদের বাবা দিলদার আহমেদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে মাঠে নেমেছে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। তার মালিকানাধীন দেশের শীর্ষস্থানীয় অলঙ্কার ব্র্যান্ড আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি বিক্রয় কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে একটি শোরুম সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। এ সময় এসব দোকান থেকে তিন শত কেজি সোনা ও হীরার গহনা জব্দ করা হয়, যার বাজার মূল্য ৮৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এদিন দিলদার ও তার ছেলে সাফাত আহমেদের সব ব্যাংক হিসাব চেয়ে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এদিকে বহুল আলোচিত বনানীর হোটেল রেইন ট্রি থেকে বিদেশী মদ, ড্রিংস, লিকার, বিয়ারসহ নানা স্মাগলিং পণ্য ধরা পড়েছে। এ ঘটনার আলোচিত এই হোটেলের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। ডিবি পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃত প্রধান আসামি সাফাত আহমেদ ও অপর আসামি সাদমান সাকিফকে রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনে জিজ্ঞাসাবাদে নানা ধরনের তথ্য দিয়েছে। পিকাসো রেস্তরাঁর অন্যতম মালিক ও রেগনাম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ হোসেন জনির ছেলে সাদমান সাকিফ সাদমান। ইতোমধ্যে তদন্ত দল ঘটনাস্থল হোটেলের ৭০১ ও ৭০২ নম্বর রুম পরিদর্শন, হোটেলের কয়েকজন কর্মকর্তাচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটনার দিন হোটেলের সিটিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলাচ্ছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর একাধিক টিম। আসামিদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। এখনও পর্যন্ত তাদের হসিদ পাওয়া যায়নি। তবে পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের সফলতার জন্য তার আত্মীয়স্বজনকে আটক করা হতে পারে। এদিকে বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় নানা ‘বিতর্ক’ সৃষ্টি করে পাঁচদিনের পারিবারিক ছুটিতে যাওয়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিএম ফরমান আলী কাজে যোগদান করেছেন। শনিবার সন্ধ্যার দিকে তিনি থানায় প্রবেশ করে নিয়মিত কাজ শুরু করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের গঠিত তদন্ত দল। ওসির মোবাইলে বার বার চেষ্টা করলে তার মোবাইলটি ধরেননি। তবে বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মতিন জনকণ্ঠকে জানান, ৫ দিনের ছুটি শেষে শনিবার সন্ধ্যার দিকে ওসি স্যার কাজে যোগ দিয়েছেন। জরুরী মিটিংয়ে থাকার কারণে স্যার মোবাইলটি ধরতে পারেননি। তবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কিনা তা তিনি জানেন না বলে ওসি তদন্ত জানান। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত ২৮ মার্চ রেইন ট্রি হোটেলে জন্মদিনের পার্টিতে এসে ধর্ষণের শিকার দুই তরুণীর মামলা নিতে বিলম্বের অভিযোগ রয়েছে ওসি ফরমান আলীর বিরুদ্ধে। ওই দুই তরুণী অভিযোগ করেন, মামলা দায়েরের জন্য তারা দুইদিন ঘুরলেও ওসি নানান অশ্লীল প্রশ্ন করে তাদের বিব্রত করার চেষ্টা করেছেন। এমনকি নিজের মোবাইল ফোনে তরুণীদের ছবিও তুলে রাখেন। এমনকি মামলা দায়েরের পর অভিযুক্ত সাফাত আহমেদের বাবা আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা নিয়ে আসামিদের গ্রেফতারে গড়িমসি করারও অভিযোগ রয়েছে ওসি ফরমান আলীর বিরুদ্ধে। এসব নিয়ে গুঞ্জন যখন তুঙ্গে তখনই একদিনের তড়িত নোটিসে পারিবারিক কারণ দেখিয়ে সোমবার পাঁচদিনের ছুটিতে যান তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হতে পারে। এরপর পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে ধর্ষণের মামলা নিতে বনানী থানার কর্তব্যে কোন অবহেলা রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। কমিটির প্রধান করা হয়েছে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারকে (ক্রাইম এ্যান্ড অপারেশন্স)। অপর দুইজন হচ্ছেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন ও ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণ পদ রায়। তিন শত কেজি সোনা ও হীরা আটক রবিবার বেলা ১১টার দিকে দেশের শীর্ষস্থানীয় অলঙ্কার ব্র্যান্ড আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি বিক্রয় কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে তিন শত কেজি সোনা ও হীরার গহনা আটক ও একটি শোরুম সিলগালা করে দিয়েছে শুল্ক ও গোয়েন্দা দল। তারা আপন জুয়েলার্সের মৌচাক, উত্তরা, জিগাতলার সীমান্ত স্কয়ার ও গুলশানের দুটি বিক্রয় কেন্দ্রে একযোগে অভিযান শুরু করেন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ শাখার ভ্যাট কর্মকর্তারা ছাড়াও র‌্যাব সদস্যরা যোগ দেন এই অভিযানে। আপন জুয়েলার্সে অভিযান চালিয়ে প্রায় তিন শ’ কেজি সোনা ও হীরার গহনা আটক করেছেন শুল্ক গোয়েন্দারা। স্বর্ণ ও রতœ সংগ্রহের তথ্যে অস্বচ্ছতা এবং মালিকের ‘অবৈধ সম্পদের’ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবেই রোববার এই অভিযান চালানো হয় বলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক মইনুল খান জানান। বেলা ১১টার দিকে দেশের শীর্ষস্থানীয় এই অলঙ্কার ব্র্যান্ড আপন জুয়েলার্সের মৌচাক, উত্তরা, জিগাতলার সীমান্ত স্কয়ার এবং গুলশানের দুটি বিক্রয় কেন্দ্রে একযোগে অভিযান শুরু হয়। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ শাখার ভ্যাট কর্মকর্তারা ছাড়াও র‌্যাব সদস্যরা যোগ দেন এই অভিযানে। অভিযান শেষে রাতে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক দীপা রানী হালদার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পাঁচটি শাখার চারটি থেকে মোট ২৮৬ কেজি স্বর্ণালঙ্কার এবং ৬১ গ্রাম হীরা ‘আটক’ করা হয়েছে। এর সর্বমোট মূল্য ৮৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। আটক স্বর্ণালঙ্কার শুল্ক আইনের বিধান অনুসারে প্রতিষ্ঠানগুলোর জিম্মায় রাখা হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। শুল্ক গোয়েন্দারা জানান, এই সোনার গহনা এখন তাদের কাছে থাকবে, তবে তারা বিক্রি করতে পারবেন না। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসব পণ্যের কাগজপত্র গভীরভাবে যাচাই করা হবে, অনুসন্ধানে কোন অনিয়ম প্রমাণিত হলে প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠান মালিকের বিরুদ্ধে চোরাচালান ও মানি লন্ডারিং আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযানকারী দলের প্রাথমিক অনুসন্ধানে আপন জুয়েলার্সের সব শাখা কর্তৃক উপস্থাপিত দলিলাদির সঙ্গে পাওয়া সোনার গরমিল পাওয়া গেছে বলে শুল্ক গোয়েন্দারা জানান। দুপুরে অভিযানের পর গুলশানের সুবাস্তু টাওয়ারে আপন জুয়েলার্সের শোরুমটি বন্ধ করে দেয়ার কথা জানান অধিদফতরের যুগ্ম কমিশনার শাফিউর রহমান। তিনি বলেন, আমরা এটা সিলগালা করেছি। এখন এটা খুলতে হলে তাদের প্রতিনিধি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। তখন বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মহাপরিচালক মইনুল খান বলেছিলেন, দেশে তো স্বর্ণের আমদানি নেই। তারপরও তারা এগুলো কোথা থেকে কীভাবে এনেছে বৈধ উপায়ে আনলে ভাল, না হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। সীমান্ত স্কয়ারে আপনের শোরুমে অভিযানে থাকা শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের উপ-পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, ওদের কাছে ডায়মন্ডের যে অর্নামেন্টসগুলো পেয়েছি সেগুলোর তথ্য উপাত্ত চেয়েছি। কিন্তু তারা পূর্ণাঙ্গভাবে দাখিল করতে পারেননি, সেখানে কিছুটা অস্বচ্ছতা রয়েছে। আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ বনানীতে দুই ছাত্রী ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদের বাবা। অভিযানের বিষয়ে দিলদার আহমেদ বলেন, “আমরা ৪০ বছরের পুরানো প্রতিষ্ঠান। এখানে প্রায় পাঁচ লাখ লোক কাজ করে। শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ আমাদের কাছে যে যে কাগজপত্র চেয়েছে, তা আমরা আগেই দিয়েছি। ধর্ষণের শিকার এক ছাত্রী বলেছেন, ধর্ষণের পর সাফাত তাকে বলেছিলেন, তারা সোনা চোরাচালান করেন। দুই একটা খুন বা ধর্ষণ করে পুলিশকে টাকা দিলে তাদের কেউ কিছু করতে পারবে না। শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের মহাপরিচালক মইনুল খানও জানান, আগামীকাল আপন জুয়েলার্সের মালিক বা তার প্রতিনিধির উপস্থিতিতে সিল করা দোকানটি খুলে এতে থাকা সোনাদানার পরিমাণ পরীক্ষা করা হবে। এর আগে তিনি জানান, রবিবারের অভিযানের উদ্দেশ্য হচ্ছে, স্বর্ণ ও হীরার বৈধ উৎস। এসব জিনিস তারা যে পরিমাণে আমদানি করে তার শুল্ক-কর ঠিক মতো পরিশোধ করে কিনা। সে বিষয়ে খোঁজ নেয়া হবে। রেইন ট্রি হোটেলের বিরুদ্ধে তিন মামলা রাজধানীর বনানীর রেইন ট্রি হোটেলের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি আইনে তিনটি মামলা দায়ের করা হচ্ছে। মামলাগুলো হচ্ছে, মানি লন্ডারিং, কালোবাজারি এবং শুল্ক ফাঁকি। রবিবার দুপুরে আকস্মিক অভিযান শেষে শুল্ক গোয়েন্দার যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ শফিউর রহমান হোটেলটির অভ্যর্থনাকক্ষে সাংবাদিকদের জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে অপারেশন্স কাজ শুরু করেছে দ্য রেইন ট্রি হোটেল। কিন্তু হোটেলটি ভ্যাট দেয়া শুরু করে মার্চ থেকে। ফেরুয়ারি মাসের আট লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে রেইন ট্রি। শুল্ক গোয়েন্দার এ কর্মকর্তা জানান, রবিবার সকালে অভিযানে বিদেশী মদ, ড্রিংস, লিকার ও বিয়ার এই হোটেলে পাওয়া গেছে। জব্দকৃত পণ্যগুলো আমদানিযোগ্য। কিন্তু তারা সরাসরি আমদানি করেনি। সঠিকভাবে ভ্যাট দিয়ে তারা আমদানি করেনি। অন্য কারও কাছ থেকে অথবা অন্য মাধ্যমে তারা ভ্যাট ছাড়া ক্রয় করেছে। আমদানির ক্ষেত্রে এলসি করতে হয়। কিন্তু তাদের এলসির কোন ডকুমেন্ট আমরা পাইনি। আপাতত এসব স্মাগলিংয়ের পণ্য বলে প্রতীয়মান। এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। আমরা কিছু ডকুমেন্ট জব্দ করেছি। তাতে দেখা গেছে, এখানে তারা প্রচুর পরিমাণ বিয়ার বিক্রি করে। কিন্তু তাদের কোন বার নেই। বারের ডিক্লেয়ার নেই। কোন পণ্য বিক্রি করলে রাজস্ব কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করবে। পণ্যের মূল্য তালিকা তৈরি করবে। নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করতে পারবে। ফেব্রুয়ারি মাসে শুধু আট লাখ টাকা ভ্যাট তারা ফাঁকি দিয়েছে। হিসাব করলে আরও বেশি হবে। প্রাথমিকভাবে এসব ডকুমেন্ট সঠিক বলে মনে হচ্ছে না। এসব ডকুমেন্ট আমরা পরীক্ষা করে দেখব। এখানে এভিয়েন ব্র্যান্ডের সফট ড্রিংস ৫০০ মিলি ৩০০ টাকায় বিক্রি করছে তারা। এগুলো ফ্রান্স থেকে আসে। এসব আমদানি ছাড়া দেশে আসার সুযোগ নেই। কিন্তু তারা আমদানির কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি। কারা এসব তাদের সাপ্লাই করছে, যারা সাপ্লাই করছে তারা সঠিক নিয়মে আমদানি করছে কি না তা আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করে দেখব। শুল্ক গোয়েন্দার যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ শফিউর রহমান বলেন, দেশে ব্যবসা করতে হলে ভ্যাটের আওতায় থাকতে হবে। যেহেতু তারা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে সে জন্য তাদের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির মামলা হবে। যেসব পণ্য এখানে পাওয়া গেছে সেসব আমদানিযোগ্য। কিন্তু তারা চোরাচালানের মাধ্যমে এখানে এলসি ছাড়া নিয়ে এসেছে। বিকল্পপথে ক্রয় করায় তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হবে। হোটেল কর্তৃপক্ষ একাধিকবার দাবি করেছেন, হোটেলে কোনো মদ বিক্রি হয় না, বার নেই, বারের লাইসেন্স নেই এমন প্রশ্নের উত্তরে মোহাম্মদ শফিউর রহমান বলেন, আমরা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করব। তারা কী ধরনের ডকুমেন্ট পেয়েছে তা শুনব। এরপর বার না থাকা সত্ত্বেও মদ বিক্রির বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় আলোচনায় আসা হোটেলটির কক্ষে শনিবার অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। কিন্তু কোন মাদক না পেলেও গুলশান জোনের পরিদর্শক জানান, মদ মেলেনি তবে অভিযোগ থাকায় নজরদারি অব্যাহত থাকবে। আপন জুয়েলার্সের মালিক ও ছেলের সব ব্যাংক হিসাব চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের পর এবার বাংলাদেশ ব্যাংক আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ ও তার ছেলে সাফাত আহমেদের সব ব্যাংক হিসাব চেয়ে পাঠিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ একথা জানিয়েছেন। তিনি জানান, ‘আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দারা বেশ কয়েকদিন ধরে কাজ করছেন। এরই অংশ হিসেবে তাদের লেনদেনের যাবতীয় তথ্য চাওয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোর কাছে। শুধু ব্যাংক হিসাবই নয়। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের কোন ঘটনা ঘটেছে কিনা। তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর বাইরে তারা চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত কিনা সেটাও দেখা হচ্ছে। এর আগে বৃহস্পতিবার (১১ মে) শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দিলদার আহমেদ ও তার ছেলে সাফাত আহমেদের আর্থিক লেনদেনের যাবতীয় তথ্যাদি চেয়ে চিঠি দেয়। একই দিন পুলিশও তাদের যাবতীয় তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়েছে। চিঠি প্রসঙ্গে দেবপ্রসাদ দেবনাথ বলেন, চিঠির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক অপেক্ষা করে না। যখন গণমাধ্যমে আপন জুয়েলার্স নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে আমরা তখন থেকেই কাজ শুরু করে দিয়েছি। গত সপ্তাহে প্রত্যেক ব্যাংককের সংশ্লিষ্ট বিভাগে টেলিফোন করে মালিক দিলদার আহমেদ ও সাফাত আহমেদের লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। উল্লেখ্য, ধর্ষণের অভিযোগ এনে গত ৬ মে বনানী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন দুই তরুণী। মামলার এজাহারে বলা আছে, ২৮ মার্চ পূর্বপরিচিত সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ ওই দুই তরুণীকে জন্মদিনের দাওয়াত দেয়। এরপর তাদের বনানীর ‘কে’ ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বরে রেইন ট্রি হোটেলে নিয়ে যায়। সেখানে দুই তরুণীকে হোটেলের একটি কক্ষে আটকে রেখে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ধর্ষণ করে সাফাত ও নাঈম। এই দৃশ্য সাফাতের গাড়িচালক বিল্লালকে দিয়ে ভিডিও করানো হয় বলেও উল্লেখ্য করা হয় এজাহারে। ধর্ষণ মামলার আসামিরা হলো সাফাত আহমদ, নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ। বৃহস্পতিবার সিলেট থেকে সাফাত ও সাদমানকে গ্রেফতার করে ঢাকায় নিয়ে আসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শুক্রবার সাফাত আহমেদের ছয় ও সাদমান সাকিফকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালত।
×