ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভগ্নকুটিরে আলোর দিশারি সোনিয়া ডাক্তার হতে চায়

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ৮ মে ২০১৭

ভগ্নকুটিরে আলোর  দিশারি সোনিয়া  ডাক্তার হতে চায়

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর, ৭ মে ॥ সোনিয়া ইয়াসমিন গরিবের মেয়ে। প্রাইমারী স্কুলে পড়ার সময় মাতৃহারা হয় সে। ভাঙ্গা কুটিরে পরিবারের সদস্য সংখ্য সাতজন। তার ওপর বাবার দ্বিতীয় বিয়ে। বাবার অল্প উপার্জনে টানাপোড়েনের সংসারে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা সোনিয়ার মতো মেয়ের পক্ষে কতটা চ্যালেঞ্জিং তা বলার অপেক্ষা রাখে না। স্বপ্ন তো ধনী-গরিব সবাই দেখতে পারে। তাই ভাঙ্গা কুটিরে থেকেই অনেক স্বপ্ন দেখেছে সে। নিজের অদম্য ইচ্ছা আর চেষ্টায় অবশেষে আশার আলো জ্বালিয়েছে নিজের এবং তার পরিবারের মাঝে। পরিবারের আর্থিক দীনতার কারণে ক্লাস নাইনে পড়াকালীন সোনিয়ার স্বপ্ন ভেস্তে যেতে বসেছিল। বাবা বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন আদরের মা মরা মেয়েকে। কিন্তু ততক্ষণে সোনিয়া বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করে এবং তাকে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে তার সুন্দর উজ্জ্বল ভবিষ্যতকে গলাটিপে নষ্ট না করার জন্য বাবাকে অনুরোধ জানায়। হতদরিদ্র চা বিক্রেতা বাবা মেয়ের কথা শুনে নিজের ভুল বুঝতে পারেন এবং আদরের মেয়ের ইচ্ছাতেই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে উৎসাহ দেন। বাবার উৎসাহ ও সহযোগিতা পেয়ে সোনিয়া এগিয়ে চলে। বড়াইগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সে জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে। বড়াইগ্রামের লক্ষ্মীকোল বাজার এলাকায় সোনিয়ার বাড়ি। বাবা সাজেদুর রহমান একই বাজারে একটি টংঘরে চা বিক্রি করে যা আয় করেন তাই দিয়ে অভাবী সংসার চলে। ছয় বছর আগে সোনিয়ার মা মারা গেলে দ্বিতীয় বিয়ে করেন পিতা। দ্বিতীয়পক্ষের ঘরে জন্ম নেয় আরও তিন বোন। সঙ্গে আছেন দাদি। ভগ্নকুটিরে আশার আলোর দিশারি সোনিয়া ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে চায়। তার মতে, ডাক্তারি পেশা একটি মহান পেশা। এ পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করে সারাজীবন গরিব-অসহায় ও দুস্থ মানুষের সেবা করতে চায় সে। সোনিয়ার পিতা সাজেদুর রহমান উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে ধীরকণ্ঠে বলেন, আমি অতিগরিব মানুষ। আমার মেয়ের মাথা ভাল। আমি জানি সে একটু সুযোগ পেলেই অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু মেয়ের ইচ্ছাপূরণের সামর্থ্য আমার নেই। আমাদের মতো মানুষের স্বপ্ন কেবল স্বপ্নই থেকে যায়।
×