ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঘৃণা না ঐক্যের জয়!

প্রকাশিত: ০৪:০১, ৮ মে ২০১৭

ঘৃণা না ঐক্যের জয়!

জাতিকে চরমভাবে বিভক্ত করে দেয়ার মতো এক অপ্রত্যাশিত প্রচারাভিযানের পর ফরাসী জনগণ দ্বিতীয় দফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য তাদের চূড়ান্ত রায় দিয়েছেন। ঘৃণা না ঐক্যÑ এটাই নির্ধারিত হবে এ নির্বাচনে। প্রথম দফায় এগিয়ে থাকা সাবেক ব্যাংকার ইমানুয়েল ম্যাক্রন (৩৯) লড়েছেন জাতীয়তাবাদী মারিন লি পেনের (৪৮) বিরুদ্ধে। খবর বিবিস-এএফপি-নিউইয়র্ক টাইমসের। দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মধ্যপন্থী ম্যাক্রন ও উগ্র ডানপন্থী লি পেনের মধ্যে নীতিগতভাবে ন্যূনতম মিল নেই বললেই চলে। বরং বৈদেশিক ও প্রতিরক্ষা নীতিতে দুই প্রার্থীর ফারাক আকাশ-পাতাল। দেশটির প্রথাগত নির্বাচনী ধারাবাহিকতার সঙ্গেও এবারে বেশ অমিল পরিলক্ষিত হচ্ছে। নির্বাচনী লড়াইয়ে এমন নীতিগত ব্যবধান আর কখনও চোখে পড়েনি। একেবারে দুই মেরুর দুই প্রার্থীর লড়াই হচ্ছে। দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রধান ফারাক হলো, একজন ঘোর জাতীয়তাবাদী, অন্যজন আন্তর্জাতিকতাবাদ সমর্থন করেন। মুসলিমবিদ্বেষী লি পেন স্পষ্টভাবে একজন জাতীয়তাবাদী প্রার্থী। তার সব রাজনৈতিক পছন্দ-অপছন্দ নির্ধারিত জাতীয়তাবাদ দিয়ে। সার্বভৌমত্ব আরও সংহত করে ও অন্যদেশ কিংবা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক কমিয়ে তিনি ফ্রান্সকে আরও শক্তিশালী করতে চাচ্ছেন। তার রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ফ্রন্টের (এফএন) সেøাগান হচ্ছে, ফ্রান্সই প্রথম। নির্বাচিত হলে দেশটির পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে তার মনোভাব কেমন হবেÑ তা জানতে এটাই যথেষ্ট। বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে তিনি এক ‘শাশ্বত ফ্রান্সকে’ জয়ী দেখতে চান। পররাষ্ট্রনীতিতে ম্যাক্রন দেশটির বর্তমান অবস্থা বহাল রাখতে চান। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিকতাবাদের প্রবল সমর্থক। তিনি রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চরম বিরোধী। ২০১৪ সালে ইউক্রেন থেকে ক্রিমিয়া দখলের পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ তিনি সমর্থন করে যাচ্ছেন। রুশ পররাষ্ট্রনীতিকে তিনি বিপজ্জনক হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তার ভাষায়, রুশ পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছেÑ এমন যে তা যে কোন আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনে দ্বিধা করে না। ম্যাক্রনের রাজনৈতিক আন্দোলন এন মার্শের প্রচারশিবিরের কম্পিউটারে সাইবার হামলা করে নথিচুরির ঘটনায় রুশ হ্যাকাররা জড়িত বলে দাবি করা হয়েছে। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে লি পেনের মনোভাব পুরো আলাদা। সম্প্রতি তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের ঘটনায় আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হয়েছে বলে তিনি মনে করেন না। তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মস্কোর সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহী লি পেন। ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যমে এমন তথ্যও প্রচার হয়েছে যে, লি পেনের ন্যাশনাল ফ্রন্ট রাশিয়ার ব্যাংক থেকে ঋণসুবিধা নিয়েছে। যদিও লি পেনের দাবি, রাশিয়ার সঙ্গে তার দলের সম্পর্ক অর্থনৈতিক সুবিধার ওপর নির্ভরশীল না। যেহেতু ফরাসী ব্যাংক তার দলকে ঋণ দিতে অপারগ বলে জানিয়েছে, তাই বিদেশ থেকে ঋণ গ্রহণে তিনি বাধ্য হয়েছেন। ম্যাক্রনের দাবি, যুদ্ধাপরাধের জন্য সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। গেল এপ্রিলে সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলার ঘটনায় লি পেনের দল ন্যাশনাল ফ্রন্ট জানায়, কারা এ হামলা চালিয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। এসব সত্ত্বেও এফএন জানায়, প্রেসিডেন্ট আসাদই পারে জিহাদি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে। একজন অর্থমন্ত্রীর অধীনে ম্যাক্রন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিজস্ব বাজেট দেয়ার পাশাপাশি ইউবিরোধী মনোভাবের বিরুদ্ধে প্রচারাভিযান বাড়াতে চান। এছাড়া ইউরোপীয় প্রকল্পগুলো নতুন করে শুরু করতেও আগ্রহী সাবেক এ অর্থমন্ত্রী। লি পেন সবসময় ইউরো থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলে আসছেন। নির্বাচিত হয়ে ইউরো ছাড়তে গণভোট দেয়ার প্রস্তাব আছে তার ইশতেহারে। ইউরোকে তিনি একটি লাশ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ম্যাক্রন বিদেশের মাটিতে সহায়তা বাজেট বাড়াতে আগ্রহী। আফ্রিকায় সামরিক ঘাঁটির কথা তিনি পুর্নবিবেচনা করবেন। আফ্রিকার দেশগুলো প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে যাতে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারে সে জন্য সহায়তা বাড়াতে চাচ্ছেন। লি পেনেও বিদেশে সহায়তা বাজেট বাড়াতে আগ্রহী, তা কেবল জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে। বিশেষভাবে, অভিবাসী ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণে আনতে।
×