ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

নেত্রকোনার ৫২ হাওড়ে ৫০ কিমি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ;###;বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ ;###;সময়মতো কাজ হয় না

চার শ’ কোটি টাকা বরাদ্দের অভাবে হাজার কোটি টাকার ফসল নষ্ট

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৬ মে ২০১৭

চার শ’ কোটি টাকা বরাদ্দের অভাবে হাজার কোটি টাকার ফসল নষ্ট

রাজন ভট্টাচার্য/সঞ্জয় সরকার, আবুল কাসেম আজাদ, হাওড়াঞ্চল থেকে ফিরে ॥ নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার শষ্য ভা-ার হিসেবে পরিচিতি ডিঙ্গাপোতা হাওড়। চলতি বছরে এই হাওড়ে প্রায় ২০ হাজার একর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছিল। এখানকার ফসলের ওপর প্রায় দুই লাখ মানুষের জীবন জীবিকা নির্ভর করে। চলতি বছর এই হাওড়ের চরহাইজদা বেড়িবাঁধ ‘জালালের কুড়’ নামক অংশের প্রকল্পের সংস্কার কাজের জন্য জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড সাড়ে ১২ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ দেয়। কাজের জন্য যথাযথ নিয়ম মেনে গঠন করা হয় কমিটি। স্থানীয়দের অভিযোগ দায়সারা কাজ হওয়ায় গত তিন বছরের ন্যায় এবারও বাঁধটি ভেঙ্গে যায়। যার প্রেক্ষিতে মোহনগঞ্জ থানায় এজাহার দায়ের করেন নেত্রকোনা জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান রতন। চলতি বছরের পঁাঁচ এপ্রিল থানায় দায়ের করা এজাহারে আরও বলা হয়, ‘বাঁধ রক্ষায় গঠিত কমিটি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। তারা বালু দ্বারা ডিঙ্গাপোতা হাওড়ের চরহাইজদা বেড়িবাঁধ জালালের কুড় এর অল্প কিছু স্থানে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে অনুমান এক লাখ টাকার কাজ করিয়ে বাকি অর্থ আত্মসাত করে। গত দুই এপ্রিল রাত আড়াইটায় বাঁধ ভেঙ্গে হাওড়ে পানি প্রবেশ করে। এতে প্রায় ৭০ কোটি টাকার ফসল তলিয়ে যায়।’ এজাহারে অভিযুক্ত ৬ সদস্যের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বাদীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে থানায় ৪০৬/৪২০ ও ৪২৭/৩৪ দ-বিধিতে মামলা দায়ের করা হয়। ইতোমধ্যে মামলাটির তদন্তও শুরুর কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন। জেলার হাওড়গুলোর বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে কমবেশি অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ সবখানেই। ভাটির দেশ হিসেবে পরিচিত নেত্রকোনা জেলায় হাওড়ের সংখ্যা ৫২টি। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এ জেলায় মোট ২শ’ ৭০ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ (ডুবন্ত) আছে। এর মধ্যে ৫০ কিলোমিটার বাঁধ আগাম বন্যার ঝুঁকিতে থাকে। এমন চিত্র প্রায় প্রতি বছরের। প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, মূলত প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের অভাবেই স্থায়ী ও মজবুত বাঁধ নির্মাণ সম্ভব হয় না। বছরে যা বরাদ্দ হয় তা দিয়ে মাটি ফেলাও কষ্টকর। তবে ভুক্তভোগী কৃষক থেকে শুরু করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দাবি, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ইজারাদারদের অনিয়ম, দুর্নীতিসহ কাজে গাফলতির কারণেই বাঁধ ভাঙ্গে। বারবার তলিয়ে যায় কৃষকের স্বপ্নের ফসল। বিপন্ন জনপদে শুরু হয় হাহাকার। অভাব। নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট ২শ’ ৭০ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ (ডুবন্ত) আছে। এর মধ্যে ৫০ কিলোমিটার বাঁধ আগাম বন্যার ঝুঁকিতে থাকে। এ বাঁধগুলোর মধ্যে রয়েছে- মোহনগঞ্জের চর হাইজদা, খালিয়াজুরি উপজেলার কীর্তনখোলা, চৌতারা, ঝালখালি, নাওটানা, লক্ষীপাশা, রাঙ্গামাটিয়া, আশারানী, গঙ্গাবদর, মায়ায়রানী, জয়পুর, গছিখাই, কলমাকান্দার গোড়াডোবা, গণেশ্বরী কেন্দুয়ার জালিয়ার হাওড়ের বাঁধসহ মদনের কয়েকটি আরও বাঁধ। এসব বাঁধের যে অংশগুলো নদ-নদী বা খাল-নালার পাড়ে বা কাছাকাছি স্থানে পড়েছেÑ সাধারণত সেসব স্থানেই পাহাড়ী ঢলের কারণে ভাঙ্গন দেখা দেয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় নির্বাহী প্রকৌশলী আবু তাহের জনকণ্ঠকে বলেন, ৫০ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ পাকা ও উঁচু করে স্থায়ীভাবে নির্মাণ করতে গেলে অন্তত ৪শ’ কোটি টাকা প্রয়োজন। কিন্তু বছর বছর বরাদ্দ আসে মাত্র ৮-১০ কোটি টাকা। এ সামান্য টাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ তো দূরের কথা মাটি দিয়েও মেরামত করা যায় না। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, এবারের অকালবন্যায় শুধুমাত্র নেত্রকোনা জেলাতেই সরকারী হিসাবে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার ফসলহানি ঘটেছে। অর্থাৎ ৪শ’ কোটি টাকা বরাদ্দের অভাবে কৃষকের ফসল নষ্ট হয়েছে প্রায় হাজার কোটি টাকার। এছাড়া কৃষকদের ত্রাণ বা পুনর্বাসন করতে গিয়েও সরকারকে গুনতে হচ্ছে বিপুল অঙ্কের টাকা। বাঁধ রক্ষায় অর্থ বরাদ্দ না হবার অভিযোগ যেমন বিস্তর তেমনি যা বরাদ্দ হয় তাও সঠিকভাবে কাজে লাগানো হয় না, এমন অভিযোগ আরও বিস্তৃত। বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ এই অঞ্চলের মানুষের মুখে মুখে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালকসহ শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরাও হাওড় অঞ্চলে বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম দুর্নীতির কথা দুর্নীতি দমন কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। হাওড় অঞ্চলের বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার কাজের সঙ্গে যুক্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তিন প্রকৌশলীকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সিলেটের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ নুরুল ইসলাম সরকার, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (উত্তর-পূর্বাঞ্চল) মোঃ আব্দুল হাই এবং সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আফসার উদ্দীনকে (আগেই প্রত্যাহারকৃত) বরখাস্ত করে সোমবার আদেশ জারি করে পাউবো। আদেশে বলা হয়েছে, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের হাওড় রক্ষা বাঁধের নির্মাণ ও সংস্কার কাজে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ধীরগতির ‘গুরুতর অভিযোগ তদন্তের জন্য তদন্তের স্বার্থে’ তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে। এদিকে হাওড় রক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ধীর গতির অভিযোগ তদন্তে গত ৯ এপ্রিল গঠিত তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার পুনর্গঠন করেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, প্রত্যেক জায়গায় একটা ক্ষোভ আছে যে (হাওড়ের বাঁধ নির্মাণে) দুর্নীতি হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী হাওড়াঞ্চলের ছয় জেলায় মোট দুই লাখ ১৯ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আট লাখ ৫০ হাজার ৮৮টি পরিবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৩০ এপ্রিল সুনামগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত হাওড় এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে বলেন, বাঁধ নির্মাণে কারও গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অন্যদিকে সুনামগঞ্জ, সিলেট ও নেত্রকোনা জেলার হাওড় এলাকায় আগাম বন্যা ও হাওড়ের ফসল বিনষ্ট হওয়ার কারণ এবং বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে গত ৯ এপ্রিল পাউবোর অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পূর্বাঞ্চল) এ কে এম মমতাজ উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে আরেকটি তদন্ত কমিটি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রান্তিক কৃষকদের কথা ‘বছর বছর রিলিফ চাই না। পাক্কা বান (পাকা বাঁধ) চাই। বানডা একবার ভালা কইরা বানলে (বাঁধলে) ফসল নিয়া আমরার আর চিন্তা করন লাগদো না। এই কথাডা একটু ভালা কইরা লেখুইনযে সাম্বাদিক ভাইয়েরা’। শাহ্ আলমের চায়ের দোকানের এক প্রান্তে বসে জোরে জোরে কথাগুলো বলছিলেন এখলাছ মিয়া (৫৫)। তার কথার রেশ ধরে একে একে আলোচনায় যুক্ত হন সাখাওয়াত হোসেন খোকা, শাহ আলম, আলম মিয়া, নাসিম, বিপুল মিয়া, খোকনসহ আরও অনেকে। এরা সবাই নেত্রকোনার হাওড়াঞ্চল খ্যাত মোহনগঞ্জ উপজেলার গাগলাজুর ও তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের কৃষক। হাতে কাজ না থাকায় তেঁতুলিয়া বাজারের শাহ আলমের চায়ের দোকানে বসে সময় কাটাচ্ছিলেন তারা। প্রান্তিক চাষী কৃষক এখলাছ মিয়া এবার ডিঙ্গাপুতা হাওড়ে পাঁচ কাঠা জমি চাষ করেছিলেন। কিন্তু এক ছটাক ধানও কাটতে পারেননি। নিজের জমি চাষাবাদের পাশাপাশি তিনি বৈশাখ মাসে ধান কাটার শ্রমিক হিসেবেও কাজ করতেন। কিন্তু এবার আর তার সুযোগ পাননি। কারণ, পুরো হাওড়ই তলিয়ে গেছে পাহাড়ী ঢলের পানিতে। সাখাওয়াত হোসেন খোকা চাষ করেছিলেন ৪ একর ৮ কাঠা জমি। সবকিছু ঠিকটাক থাকলে অন্তত ৩শ’ মণ ধান পেতেন। ফসল-পুঁজি সব হারিয়ে তিনি এখন ধার করে চাল কিনে খাচ্ছেন। একইভাবে নাসিম মিয়া ৫ একর, শাহ আলম ২ একর, আলম মিয়া ৩ একর জমি চাষ করে এখন নিঃস্ব। কার ঘরে এক মুঠো ধান বা চাল নেই। কথা প্রসঙ্গে এই নিঃস্ব ফসল হারা কৃষকরা জানালেন, গতবারও ডিঙ্গাপুতা হাওড়ে অকালবন্যা হয়েছে। কিন্তু তখন ধান প্রায় পাকা ছিল। এ কারণে ক্ষতি হলেও তড়িঘড়ি করে কিছু ধান ঘরে তুলতে পেরেছিলেন তারা। এবার ধান পাকার আগেই চর হাইজদা বাঁধ ভেঙ্গে পুরো হাওড় ডুবে যায়। বাঁধ ভাঙ্গার ব্যাপারে অনেক অভিযোগ তাদের। তাদের মতে, বাঁধে এমন সময়ে মাটি কাটা হয়Ñ যখন পানি আসতে শুরু করে। পানি চলে আসলে কৃষকরাই স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধে মাটি কাটতে যায়। ঠিকাদার বা বাঁধ মেরামত কমিটি (পিআইসি কমিটি) তখন বসে বসে বিল তুলতে পারে। এছাড়া পানি আসার আগ মুহূর্তে কাঁচা মাটির বাঁধ কোন কাজেই আসে না। দুর্বল বাঁধ সহজেই পানির তোড়ে ভেঙ্গে যায়। এতে অর্থ অপচয় বা লোপাট ছাড়া আর কিছুই হয় না। নাসিম মিয়া বললেন, যদি পৌষ মাস থেকে বাঁধে মাটি কাটা হয়Ñ তাহলে বৈশাখ নাগাদ বাঁধের মাটি ঠিকমতো বসে শক্ত হয়ে যাবে। সহজে তা ভাঙ্গবে না। আমরা নিরাপদে ফসল তুলতে পারব। ওই কৃষকরা জানান, আমরা প্রত্যেকবারই এই কথাগুলো বলি। কিন্তু কেউ শোনে না। হাওড়পারের এ কৃষকরা জানান, চর হাইজদা বাঁধের সব অংশ ভাঙ্গে না। ধনু নদীর পাড় এবং পাড়ের কাছাকাছি কয়েকটি অংশই বরাবর ভাঙ্গে। বিশেষ করে বাঁধের গাগলাজুর বাজার থেকে দেড় কিলোমিটার উত্তরে জালালের কুড় পর্যন্ত অংশটিই ঝুঁকিপূর্ণ। যতবার বাঁধ ভেঙ্গেছে ততবার এই অংশ দিয়েই তলিয়েছে কৃষকের স্বপ্নের ফসল। কাজেই এই ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করে পাকা বাঁধ নির্মাণ করলে ডিঙ্গাপুতা হাওড়ের সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর জমির ফসল রক্ষা করা সম্ভব। হাওড়ের অকালবন্যা পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান প্রসঙ্গে আরও কিছু করণীয় বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছেন পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু তাহের। তিনি বলেন, হাওড় এলাকায় উজানের পানি আসবেই। তাই শুধু বাঁধ দিয়ে ফসল রক্ষা করা যাবে না। হাওড়ের পানি ধারণক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ জন্য প্রতিবছর হাওড় এলাকায় প্রবহমান নদ-নদী-খাল-নালাগুলো ড্রেজিং করতে হবে। এছাড়া অনেক সময় দেখা যায় মাছ ধরার সুবিধার কথা চিন্তা করে কিছু মানুষ রাতের আঁঁধারে বাঁধ কেটে দেয়। এরকম ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে রেগুলেটর বসানো যেতে পারে। এছাড়া লোকালয়ের কাছাকাছি যেসব বাঁধ আছে সেগুলোতে বাঁধ কাম ভিলেজ প্লাটফর্ম তৈরি করে দেয়ার কথা চিন্তা করা যেতে পারে। এতে মানুষের বসাবসের সুবিধার পাশাপাশি নিজেদের বাঁধ নিজেরা রক্ষণাবেক্ষণও করতে পারবে। তথ্যানুসন্ধানকালে বাঁধ রক্ষায় আরও কিছু পরামর্শ পাওয়া গেছে এলাকার কৃষকদের পক্ষ থেকে। তারা জানান, অনেক সময় দেখা যায়Ñ বাঁধের খুব কাছাকাছি জায়গা থেকে মাটি কাটা হয়। এতে বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়ে। এছাড়া বৃষ্টি হলে মাটি আবার যথাস্থানে ফিরে যায়। কাজেই মাটি কাটতে হবে বাঁধের অনেক দূর থেকে। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই মাটি কাটার কাজ শুরু করতে হবে। আর এর টেন্ডার বা অফিসিয়াল প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে বর্ষা মৌসুমের মধ্যেই। এছাড়া বাঁধের পাশে হিজল, করচ, ইকর, বিন্না প্রভৃতি গাছ লাগিয়ে বাঁধের শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। যদি সুষ্ঠু পরিকল্পনায় নির্মাণ করা হয়Ñ তাহলে অনেক এলাকায় সেই বাঁধ একই সঙ্গে হাওড়বাসীর রাস্তা হিসেবেও কাজে লাগতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৭ জেলার প্রায় ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৪৬১ হেক্টর জমি হাওড় এলাকায়। হাওড় বোর্ডের হিসাব মতে, মোট হাওড়ের সংখ্যা ৩৭৩টি। সুনামগঞ্জে ৮৫, হবিগঞ্জে ১৪, নেত্রকোনায় ৫২, কিশোরগঞ্জে ৯৭, সিলেটে ১০৫, মৌলভীবাজারে ৩ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৭টি হাওড় রয়েছে। এই এলাকায় ৩৭৩টি হাওড়ের মাঝে ৪৭টি বড় হাওড় রয়েছে। হঠাৎ ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে সুনামগঞ্জের ২ লাখ ৬৮ হাজার ৫৩১ হেক্টর, হবিগঞ্জের ১ লাখ ৯ হাজার ৫১৪ হেক্টর, নেত্রকোনার ৭৯ হাজার ৩৪৫ হেক্টর, কিশোরগঞ্জের ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪৩ হেক্টর, মৌলভীবাজারের ৪৭ হাজার ৬০২ হেক্টর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২৯ হাজার ৬১৬ হেক্টর হাওড়ের জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এতে সাত জেলায় প্রায় ৩ কোটি মানুষ এখন বিপর্যয়ের মুখোমুখি। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে হাওড় ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ মজিবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, প্রাকৃতিকসহ নানা কারণে অন্যান্য এলাকার মতো সমানভাবে হাওড়াঞ্চলের উন্নয়ন সম্ভব হয় না। এই অঞ্চলে উন্নয়নের ভিন্নতা জরুরী। এ জন্য ২০ বছর মেয়াদী ১৫৪ প্রকল্প নিয়ে হাওড় মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যা ২০১৬ সাল থেকে শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে এ কথা জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, এ ক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্ব শুধু প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি সুপারভিশন করা। তিনি বলেন, প্রকল্পগুলো কাজ শেষ হলে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ১৯ ভাগ দরিদ্র হাওড়বাসীর জীবনমানের উন্নয়ন হবে।
×