ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে ঝড়ে কৃষকের স্বপ্ন ভঙ্গ

প্রায় আমশূন্য বাগান, ধানে চিটা

প্রকাশিত: ০৪:২০, ৪ মে ২০১৭

প্রায় আমশূন্য বাগান, ধানে চিটা

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ গত রবিবার সন্ধ্যায় রাজশাহীতে কালবৈশাখীর তা-বের পর এ অঞ্চলের বোরোর ক্ষেত থেকে শুরু করে আমের ক্ষতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক ও চাষীরা। অনেক এলাকায় উঠতি বোরো ধান ঝরে এখন শুধুই ধানশূন্য শীষ। আর কদিন আগেই যেসব বাগানে ঝুলছিল বাড়ন্ত আম তার বেশিরভাগই এখন নেই। বোরো ক্ষেত আর আম বাগানের দিকে চেয়ে চরম হতাশায় পড়েছেন কৃষক। জানা গেছে, রাজশাহীতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আম আর বোরোর ক্ষেত। আর ঘরবাড়ি ভেঙ্গে ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রায় আড়াই হাজার পরিবার। অনেকে হারিয়েছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন প্রাথমিকভাবে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ২ হাজার ৩০৮ পরিবারের তালিকা করেছে। ঝড়ের কারণে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকরা। ক্ষেতে শীষ বের হওয়ার পর পরই ঝড়ে ঝরে গেছে ধানের ফুল। ফলে ধানের শীষে শীষে এখন ধানের পরিবর্তে রয়েছে শুধু চিটা। বিস্তীর্ণ ধানের ক্ষেতে শুধু দাঁড়িয়ে আছে চিটা। ঝড়ে রাজশাহী অঞ্চলের ৫০ ভাগ ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। জেলার মোহনপুর উপজেলার নুড়িয়াক্ষেত্র গ্রামের এমাজ উদ্দিন। তিনি এবার তিনবিঘা জমি লিজ নিয়ে ধান চাষ করেন। কচি শীষের দোলায় কয়েকদিন আগেও এমাজ উদ্দিনের মন ভাল থাকলেও এখন হতাশায় ভরা। রবিবার সন্ধ্যায় ঝড়ের পর সোমবার সকালে মাঠে গিয়ে তিনি দেখেন শীষ আছে ঠিকই কিন্তু তাতে ধান নেই, সব চিটায় পরিণত হয়েছে। তার মতো এ অঞ্চলের অনেক কৃষকের ক্ষেতে এখন এমনই দশা। এ পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত মাঠ পরিদর্শন করছেন কৃষি কর্মকর্তরা। তারাও ক্ষেতের দৃশ্য দেখে হতাশ। জেলার মোহনপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রহিমা বেগম ও পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম মনজুরে মাওলা জানান, ধানের ভেতরে তরল সাদা হওয়ার সময় থেকে চাল হওয়ার সময়ে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের ওপর থাকলে এমন অবস্থা হয়। যাকে কৃষি বিভাগের ভাষায় বলা হয় ব্লাস্ট রোগ। এছাড়াও শীষ বের হওয়ার সময়ে ঝড়ো হাওয়া বইতে থাকলে পরাগায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ফুল পড়ে গেলেও এমন অবস্থা হয়। ঝড়ের পর এমন সমস্যায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। জেলার পবা উপজেলার কৃষক আলতাব সরকার জানান, তার ৪ বিঘা জমিতে ধান নেই, শুধুই চিটা। তার মতো ওই এলাকায় প্রায় সব ক্ষেতেই একই অবস্থা। এদিকে কালবৈশাখীতে এ অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী ফসল আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শুধু বাঘা উপজেলাতেই টাকার অঙ্কে ক্ষতি হয়েছে দুই কোটি টাকার আম। এছাড়া পুঠিয়া, চারঘাট এলাকায় একই রকমের ক্ষতি হয়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে, গত রবি ও সোমবারের কালবৈশাখীতে বিপুল পরিমাণ বাড়ন্ত আম ঝরে পড়েছে। উপজেলার আমোদপুর গ্রামের আম চাষী আলী আকবর বলেন, পর পর দু’দিন সন্ধ্যায় তীব্র ঝড়ে আম,ধান, সজনে ও পাটসহ বেশ কিছু সবজি জাতীয় ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আমের। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক দেব দুলাল ঢালি উপজেলার বেশ কিছু আম বাগান পর্যবেক্ষণ করে বলেন, আম প্রায় ৫ শতাংশ ঝরে গেছে। অনেকের গাছের ডাল এমনকি গাছ পর্যন্ত ভেঙ্গে গেছে। এ কারণে আমের উৎপাদনও অনেকটায় কমে যাবে।
×