ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করুক তা প্রশাসন কোনদিন চায়নি ॥ প্রধান বিচারপতি

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৬ এপ্রিল ২০১৭

বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করুক তা প্রশাসন কোনদিন চায়নি ॥ প্রধান বিচারপতি

নিজস্ব সংবাদদাতা, হবিগঞ্জ, ২৫ এপ্রিল ॥ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করুক, তা প্রশাসন কোনদিনই চায়নি। সব সরকারের আমলেই বিচার বিভাগের ওপর বিমাতাসূলভ আচরণ করা হয়। অথচ বিচার বিভাগই প্রশাসনের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। কিন্তু আমলাতন্ত্র সব সময়ই বিচার বিভাগকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা যখন নিজ বিভাগে নিরাপত্তা পান না, তখন তারা বিচার বিভাগের কাছেই আসেন। এক্ষেত্রে বিচার বিভাগই তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, শুধু টাকা থাকলেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়, উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন দুর্নীতি প্রতিরোধ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করা। প্রধান বিচারপতি বলেন, প্রশাসনের যারা উচ্চপর্যায়ে আছেন, তাদের পরিচালনা করেন কিছু আমলা, কিছু লোক পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সত্য জিনিসটি তাদের কর্মক্ষেত্রে উপস্থাপন করা হয় না, যার প্রেক্ষিতে তারা মনে করেন বিচার বিভাগ তাদের প্রতিপক্ষ। এটি তাদের ভুল ধারণা। মঙ্গলবার দুপুরে হবিগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বিচার বিভাগ কারও প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কাজ করে না। বিচার বিভাগ সব সময় একটি ভারসাম্য রক্ষা করে চলে। তাদের যত কিছুতে ত্রুটি থাকে তা নিয়ে বিচার বিভাগের কাছেই আসতে হয়। আমরা তাদের বিচার করি। তারা নিরাপত্তা পায় না, প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা পায় না, নিশ্চয়তা পায় না চাকরি সংক্রান্ত, প্রমোশন সংক্রান্ত, তখনই এ বিচার বিভাগ তাদের নিশ্চয়তা দেয়। পুরাতন মামলা নিষ্পত্তি করার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিচারকের অভাবে মামলার জট সৃষ্টি হয়। এজন্য নতুন বিচারক নিয়োগসহ নিম্ন আদালতের বিচারকদের ভারতের সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। এখন যত দুর্যোগ আসুক তা বাইরের সাহায্য ছাড়াই মোকাবেলা করা হচ্ছে।’ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল মোছাব্বিরের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক জমশেদ মিয়া ও নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মোঃ লুৎফুর রহমানের পরিচালনায় এতে বক্তৃতা করেনÑ জেলা ও দায়রা জজ মোঃ আতাবুল্লাহ, এ্যাডভোকেট চৌধুরী আব্দুল হাই, এ্যাডভোকেট সৈয়দ আফরোজ বখত, নূরুল আমিন, আফিল উদ্দিন, সিরাজুল হক চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, প্রশাসনের আজ যারা ক্ষমতায় আছেন, সব সময় তিনি থাকবেন না। তিনিও একদিন অবসরে যাবেন। তখন সাধারণ নাগরিক হিসেবে থাকবেন। তাদের আত্মীয়স্বজন, পরিবার-পরিজন তারাও এ দেশে থাকছেন। তাদের তো সমস্যা হতে পারে। যদি বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করা হয়, তবে তাদের সাময়িক ক্ষমতার পর যে অনিশ্চয়তার মাঝে পড়বেন তখন কিন্তু বিচার বিভাগই তাদের নিশ্চয়তা দেবে। এটি তারা যখন ক্ষমতায় থাকেন তখন ভুলে যান, যার প্রেক্ষিতে তারা মনে করেন বিচার বিভাগ আমাদের সবগুলো নিয়ে ফেলল, খেয়ে ফেলল। এটি তাদের ভুল ধারণা। আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনারা যারা আইনজীবী তারা এটি তুলে ধরবেন। জনমত গঠন করবেন। তাহলে এ ভুল বোঝাবুঝি দূর হবে। প্রধান বিচারপতি বলেন, অনেক দেশ আছে যারা অনেক ধনী। যাদের অনেক উন্নত দেশের চেয়েও বেশি টাকা আছে। কিন্তু তাদের উন্নত জাতি হিসেবে ধরা হয় না। শুধু টাকা থাকলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। উন্নয়নের জন্য দুর্নীতি প্রতিরোধ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। এর আগে প্রধান বিচারপতি আদালতের বিচারিক কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। পরে নবনির্মিত জুডিসিয়াল ভবন পরিদর্শন করেন তিনি। তিনি মঙ্গলবার দুপুরে তার সম্মানে দেয়া হবিগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির এক বিশাল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও সংবর্ধিত ব্যক্তিত্বের বক্তব্যে এ কথা বলেন। জেলা বার লাইব্রেরি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন সাবেক এমপি এ্যাডভোকেট আব্দুল মোছাব্বির। এ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ সভায় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেনÑ জেলা ও দায়রা জজ মোঃ আতাবুল্লাহ, সাবেক এমপি এ্যাডভোকেট আব্দুল হাই, প্রবীণ আইনজীবী ও ভাষাসৈনিক সৈয়দ আফরোজ বখত, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট আফিল উদ্দিন প্রমুখ। এ সময় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমারকে ক্রেস্ট প্রদানের মাধ্যমে সংবর্ধিত করে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী সমিতি। তার আগে সোমবার দুপুরে দুদিনের সফরে প্রধান বিচারপতি হবিগঞ্জে এসে পৌঁছলে জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম ও জেলা ও দায়রা জজ মোঃ আতাবুল্লাহসহ গণমান্য ব্যক্তিবর্গ সার্কিট হাউসে তাকে স্বাগত জানান। এদিন রাতে বিচার বিভাগ, জেলা প্রশাসন, আদালত সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের পদবিধারী আইনজীবীগণ, সিভিল সার্জন, গণপূর্ত বিভাগসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা জেলা সার্কিট হাউসের সভাকক্ষে জেলা ও দায়রা জজ মোঃ আতাবুল্লাহর সভাপতিত্বে এবং জেলা প্রশাসক সাবিনা আলমের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ‘আদালতকে আরও গতিশীল করার করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন।
×