ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

মিল মালিকের গ্রেফতার দাবি

বয়লার বিস্ফোরণ ॥ নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২৫ এপ্রিল ২০১৭

বয়লার বিস্ফোরণ ॥ নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ সদর উপজেলার ১নং চেহেলগাজী ইউনিয়নের উত্তর গোসাইপুর ও আশপাশের গ্রামগুলোতে চলছে শোকের মাতম। সুবল ঘোষের যমুনা অটোরাইস মিলে ১৯ এপ্রিল ভয়াবহ বয়লার বিস্ফোরণ হয়ে ২২ জন গুরুতর আহত হয়। আহতদের দিনাজপুর ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মনোরঞ্জন রায় (৩৬) মারা যান। এ নিয়ে ভয়াবহ বয়লার বিস্ফোরণে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ জনে। রবিবার বিকেল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত নিহত আরও ৫ জন হলেন রিপন মিয়া (৪০), দুলাল চন্দ্র (৩৫), মুন্না মিয়া (৩২), মুকুল (৪০) ও মনোরঞ্জন রায় (৩৬)। আর চিকিৎসাধীন আটজনের মধ্যে ছয়জনের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। অবশেষে সোমবার নিহত রিপনের স্ত্রী মোমেনা বেগম কোতোয়ালি থানায় মিল মালিক সুবল ঘোষসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। অপর ২ আসামি হলো মিল কর্মচারী কমল ও মোঃ একরামুল। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের মেয়াদ ৩ দিন বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ মামলার আসামিদের গ্রেফতারের তৎপরতা শুরু করেছে বলে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ জানিয়েছে। এদিকে দিনাজপুরের রানীগঞ্জে প্রতিদিন কোন না কোন বাড়িতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কুলখানি। সেই সঙ্গে চলছে দাফন কাজ। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দগ্ধদের কারও না কারও মৃত্যু ঘটছে। সোমবার সরেজমিন দেখা গেল, এখনও নিহতদের পরিবারগুলোর কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। মৃত রোস্তম আলীর ছেলে সেলিম হোসেন জানান, তাদের পরিবারটি নির্ভর করত বাবার উপার্জনের ওপর। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। তাদের সকলের চোখে মুখে হতাশার ছাপ। ভবানীপুর গিয়ে দেখা যায়, বয়লার বিস্ফোরণে মারা গেছে, এমন পরিবারের সদস্যরা আগামী দিনগুলো নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। এখন পর্যন্ত মিল মালিকের কোন সাহায্য-সহযোগিতা তারা পায়নি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের চিকিৎসার ব্যাপারে মিল মালিক এগিয়ে আসেননি। হাসপাতালে গুরুতর আহতদের পরিবারগুলো উৎকণ্ঠায় রয়েছে, কখন যে কার মৃত্যুর খবর আসে! তারা নির্ঘুম অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। পাশাপাশি কোন বাড়িতে চলছে কুলখানি আর কোন বাড়িতে চলছে লাশ দাফন। নিহত ও আহতদের পরিবারগুলো মিল মালিকের ওপর চরম ক্ষুব্ধ। মিল মালিক দুর্ঘটনার দিন ১৯ এপ্রিল থেকে সোমবার ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত তাদের কোন খোঁজখবর নিতে আসেনি এবং তার কোন প্রতিনিধিও পাঠাননি। নিহত মোকছেদ আলীর ছেলে মতিউর রহমান জানান, ক্ষতিপূরণ বা সাহায্য তো দূরের কথা, শোকাহত পরিবারের একটি বারও খবর নেয়নি মিল মালিক ও তার লোকজন। দিনাজপুর জেলা চাতাল শ্রমিক ইউনিয়নের আহ্বায়ক সাইফুর রাজ চৌধুরী জানান, ত্রটিপূর্ণ বয়লারের বিষয়ে বারবার মিল মালিককে অভিযোগ করা হলেও, তিনি কোন কর্ণপাত করেননি। মিল মালিক সুবল ঘোষকে গ্রেফতার ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দাবি জানান তিনি। জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম জানান, হতাহতদের পরিবারকে তাৎক্ষণিক কিছু আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।
×