ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

কস্ট মডেলিংয়ের সিদ্ধান্ত

মোবাইলে ইন্টারনেটের দাম বেঁধে দেবে বিটিআরসি

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২২ এপ্রিল ২০১৭

মোবাইলে ইন্টারনেটের দাম বেঁধে দেবে বিটিআরসি

ফিরোজ মান্না ॥ মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের দাম বেঁধে দেবে বিটিআরসি। অপারেটররা মোবাইলে ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্যাকেজ দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে বেশি টাকা কেটে নিচ্ছে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘কস্ট মডেলিং’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সাধারণ মানুষের কাছে ইন্টারনেটের সহজ লভ্যতার জন্যই বিটিআরসির এ উদ্যোগ। বিটিআরসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) একজন কর্মকর্তাকে পরামর্শক নিয়োগ করবে। নিয়োগকৃত পরামর্শক ইন্টারনেট সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে ইন্টারনেটের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণের বিষয়ে বিটিআরসিকে পরামর্শ দেবে। বিটিআরসি ওই পরামর্শের ভিত্তিতে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের দাম নির্ধারণ করবে। এ বিষয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. শাহজাহান মাহমুদ জনকণ্ঠকে বলেন, ইন্টারনেটের দাম নির্ধারণের জন্য আমরা খুব শীঘ্রই আইটিইউ’র একজন কর্মকর্তাকে কস্ট মডেলিংয়ের জন্য নিয়োগ দেব। কস্ট মডেলিং করতে কিছুটা সময় লাগবে। কস্ট মডেলিং হয়ে গেলে বোর্ড সভায় আলোচনা করে ইন্টারনেটের দাম ঠিক করব। তবে এখনই ইন্টারনেটের দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে না। পরামর্শকের সুপারিশ নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য দাম ধরা হবে। যাতে কোন পক্ষেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, ইন্টারনেট সেবা দিতে কি পরিমাণ খরচ হয় অপারেটরদের তা বের করার পদ্ধতিকে বলা হয় কস্ট মডেলিং। ইন্টারনেট সেবার দাম কি হবে তা গাণিতিক সমীকরণ দিয়ে কস্ট মডেলিং করা হবে। ২০০৮ সালে মোবাইল ফোন কলের মূল্য কত হবে তা নির্ধারণ করা হয়েছিল আইটিইউর পরামর্শক দিয়েই। এরপর দীর্ঘ সময় পার হযে গেলেও মোবাইল ফোনের কল রেট নির্ধারণ করা হয়নি। ওই সময় মোবাইল ফোনের কল রেট করা হয়েছিল প্রতি মিনিট (ভয়েস কল) সর্বোচ্চ মূল্য ২ টাকা আর সর্বনিম্ন মূল্য ২৫ পয়সা। বর্তমানে মোবাইল কলের দাম আরও কম হওয়ার কথা থাকলেও এ বিষয়ে কোন কাজ হয়নি। বিটিআরসি দীর্ঘ ৯ বছরেও মোবাইল ফোনের কল রেট পুনঃনির্ধারণের বিষয়ে কোন উদ্যোগই নেয়নি। তবে মোবাইল ফোনের কল রেট নির্ধারণ একবার হলেও ইন্টারনেটের দাম নির্ধারণে একবারও উদ্যোগ নেয়নি বিটিঅঅরসি। এবারই প্রথম বিটিআরসি ইন্টারনেটের সর্বোচ্চ ও সর্ব নিম্ন দাম নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। এটা ইন্টারনেট গ্রাহকদের জন্য একটি সুখবর বলা যেতে পারে। কারণ মোবাইল অপারেটররা নিজেদের ইচ্ছেমতো বিভিন্ন প্যাকেজের নামে ইন্টারনেট সেবা থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। একটা প্যাকেজ থেকে দিনে যদি এক টাকা করেও হাতিয়ে নেয় তাহলে দেশে ১২ কোটি মোবাইল গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে ৬ কোটি ৭২ লাখ গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। যদি ৬ কোটি গ্রাহকও ধরা যায়, তাহলে প্রতিদিন ৬ কোটি টাকা আপারেটরদের হাতে যাচ্ছে। মাসে ১৮০ কোটি টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে নিয়ে যাচ্ছে অপারেটররা। বছর শেষে তা গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ২ হাজার ১৬০ কোটি টাকায়। এ বিশাল অঙ্কের টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে মোবাইল অপারেটররা অবলীলায় নিয়ে যাচ্ছে। কেউ টেরও পাচ্ছে না। আর এ নিয়ে কারও কোন প্রশ্নও নেই। বিটিআরসিও বিষয়টি এতদিন জেনেও না জানার ভান করে বসে ছিল। কিন্তু সম্প্রতি কয়েক হাজার গ্রাহক বিষয়টি নিয়ে বিটিআরসির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম কথা বলেছেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইন্টারনেটের দাম আসলে কত হওয়া উচিত তা নির্ধারণ করার জন্য পরমর্শক নিয়োগ করা হবে। সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে এমন একটি সহনীয় দাম নির্ধারণ করার জন্য বিটিআরসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ নির্দেশের পরে বিটিআরসি গত ২৭ মার্চ ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স কমিটির বৈঠকে ‘কস্ট মডেলিংয়ের’ জন্য পরামর্শক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গঠিত কমিটিতে বিটিআরসি ছাড়াও টেলিযোগাযোগ খাতসংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বিটিআরসির এক কর্মকর্তা বলেন, কস্ট মডেলিংয়ের মাধ্যমে ইন্টারনেটের দাম আসলে কত হওয়া উচিত এর একটি ধারণা পাওয়া যাবে। এ ধারণার পর আমরা নিজেরা বসে এ দেশের সব মানুষ যাতে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে এমন একটি দাম ঠিক করা হবে। তাছাড়া মোবাইল অপারেটরদের ইচ্ছেমতো প্যাকেজ ঘোষণা বন্ধের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কারণ প্রতিটি প্যাকেজ ঘোষণা ও অফার দেয়ার আগে বিটিআরসির অনুমোদন নিতে হয়। অপারেটররা বেশির ভাগ অফার ও প্যাকেজ বিটিআরসি থেকে অনুমোদন না নিয়েই প্রচার করে যাচ্ছে। এতে গ্রাহকরা মারাত্মকভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এর আগে ২০১৬ সালে ইন্টারনেটের মূল্য নির্ধারণে একবার কস্ট মডেলিং করার উদ্যোগ নিয়েছিল। তখন কেন কি কারণে তা করা হয়নি এটা আর এখন বলা যাচ্ছে না। ২০০৮ সালে ভয়েস কলের কস্ট মডেলিং বিনামূল্যে করে দিয়েছিল আইটিইউ। সেই সময় ইন্টারনেটেরও কস্ট মডেলিং বিনামূল্যে করে নেয়া যেত। দেশের অবস্থার প্রেক্ষিতে এসব সেবার মান নির্ধারণ করা হয়। ২০০৮ আইটিও মোবাইল ফোনের কল রেট নির্ধারণে টাকা না নিলেও এবার ইন্টারনেটের দাম নির্ধারণরে ক্ষেত্রে তারা টাকা নেবে। আইটিইউয়ের পরামর্শক নিয়োগে বিটিআরসির ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা খরচ হতে পারে। বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ৭২ লাখ। এর মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ৩১ লাখ। বাকি ৪১ লাখ গ্রাহক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন।
×