ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্টারনেটে ভ্যাট ও পোল্ট্রি শিল্পে কর অব্যাহতি চান ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১৯ এপ্রিল ২০১৭

ইন্টারনেটে ভ্যাট ও পোল্ট্রি শিল্পে কর অব্যাহতি চান ব্যবসায়ীরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর ভ্যাট অব্যাহতি, পোল্ট্রি খাদ্য আমদানিতে আয়কর প্রত্যাহার ও ব্যক্তি পর্যায়ে বিদেশ থেকে ২০০ গ্রাম পর্যন্ত স্বর্ণালঙ্কার আনার সুযোগ চেয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে আসন্ন ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রাক-বজেট আলোচনায় এনবিআরের কাছে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষে এসব দাবি জানানো হয়। এনবিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাজস্ব আহরণে ব্যবসায়ীরা এনবিআরের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন। প্রাক-বাজেট আলোচনায় উত্থাপিত এসব দাবিগুলো গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে। প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ্যামটবের পক্ষ থেকে সংগঠনের মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবির বলেন, দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। সকলের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার সহজ, ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইন্টারনেট সেবার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া দরকার। এর মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া সহজ হবে। গ্রাহক আকৃষ্ট ও মোবাইল অপারেটদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করারও প্রস্তাব রাখেন তিনি। বলেন, এজন্য সরকারের উচিত হবে সিম কার্ডের ওপর আরোপিত সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা। নুরুল কবির বলেন, দেশের ৪৬ শতাংশ মানুষ এখনও মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে আছে। বিশাল এ জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। মোবাইল অপারেটরগুলো সরকারের ডিজিটাল ভিশন বাস্তবায়নের জন্য বদ্ধপরিকর। তারা গ্রাহকদের বিভিন্নভাবে প্রণোদনা দেয়ার চেষ্টা করছে। মোবাইল অপারেটররা এ খাতের অগ্রপথিক। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এ খাতের অংশীজনদের ওপর উচ্চ করের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এ খাতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মোবাইল অপারেটর কোম্পানিসমূহকে ৪০ শতাংশ ও তালিকার বাইরে থাকা কোম্পানিসমূহকে ৪৫ শতাংশ হারে কর্পোরেট কর পরিশোধ করতে হয়। এত উচ্চ করারোপ অন্য কোন খাতে করা হয়নি। তিনি বলেন, উচ্চ করারোপ সরকারের লক্ষ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে। বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করছে। সম্ভাবনাময় এ খাতকে আলাদাভাবে বিবেচনা না করে অন্যান্য সাধারণ কোম্পানির মতো কর্পোরেট কর ৩৫ শতাংশ করা উচিত। নুরুল কবির আরও বলেন, সিম ও রিম সরবরাহের ক্ষেত্রে ৩৬.৬৫ টাকা ভ্যাট ও ৬৩.৩৫ টাকা সম্পূরক শুল্কসহ ১০০ টাকা সিম ট্যাক্স ও রিপ্লেসমেন্টে সিমে ১০০ টাকা ট্যাক্স পরিশোধ করতে হয়। আসন্ন বাজেটে প্রস্তাব রেখে তিনি বলেন, গ্রাহক সেবা বৃদ্ধি, গ্রামীণ গ্রাহকদের আকৃষ্ট করা, কোম্পানিসমূহকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করা ও সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য এই ট্যাক্স পুরোপুরি প্রত্যাহার হওয়া উচিত। এদিকে দেশের পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ খাতে কর প্রত্যাহারের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী নীতি প্রণয়নে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে ফিড ইন্ডাস্ট্রি এ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ। সংগঠনটি পোল্ট্রি খাদ্যের আমদানিতে অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার, পোল্ট্রি ফিডের কাঁচামাল সয়াবিন মিল আমদানির ওপর আরোপিত শুল্ক মওকুফসহ সব পর্যায়ে আরোপিত ভ্যাট ও কর কমানোর দাবি জানিয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মশিউর রহমান এসব দাবি উত্থাপন করেন। মশিউর রহমান বলেন, পোল্ট্রি ফিডের প্রধান উপাদান ভুট্টা। কারণ পোল্ট্রি ফিডে প্রায় ৬০ ভাগ ভুট্টা ব্যবহৃত হয়। দেশে উৎপাদিত ভুট্টার প্রধান ক্রেতা এ শিল্প। তারপরও দেশে উৎপাদিত ভুট্টা পোল্ট্রি শিল্পের চাহিদার মাত্র ৪৫ শতাংশ মেটাতে সক্ষম। বাকি ৫৫ শতাংশ ভুট্টা আমদানি করতে হয়। অথচ আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপের কারণে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। সে কারণে পোল্ট্রি খাদ্যের উপকরণ আমদানির ওপর অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের আবেদন করছি। তিনি বলেন, গত বাজেটে কাস্টমস আইন পরিবর্তন করে হাঁস-মুরগির খাদ্য তৈরির গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল সয়াবিন মিলের ওপর নতুন করে ১০ শতাংশ শুল্কারোপ করা হয়েছে। আমাদের ফিড মিলের বার্ষিক চাহিদা ১৬ লাখ মেট্রিক টনের বিপরীতে দেশে আনুমানিক ৮ লাখ মেট্রিক টন সয়াবিন মিল পাওয়া যায়। বাকি ৮ লাখ মেট্রিক টন সয়াবিন মিল আমদানি করে চাহিদা পূরণ করতে হয়। পোল্ট্রি ফিড তৈরিতে উপকরণ হিসেবে সয়াবিন মিল প্রায় ২৫ শতাংশ ব্যবহৃত হয়। অথচ ১০ শতাংশ কাস্টসম শুল্কের কারণে পোল্ট্রি ফিডের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে সামগ্রিকভাবে ডিম, মুরগির বাচ্চা ও ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তাই আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহারের আবেদন করছি। মশিউর রহমান বলেন, পোল্ট্রি ফিড তৈরির অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ ভেজিটেবল প্রোটিন হিসেবে ব্যবহৃত পণ্যগুলোর ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এ ভ্যাট কমানোর দাবি জানাচ্ছি। প্রাক-বাজেট আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান মোঃ নজিবুর রহমান বলেন, রাজস্ব আহরণে আপনারা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন। এনবিআর সৎ ব্যবসায়ীদের প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে।
×