স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে জঙ্গীবাদী তৎপরতায় অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ইন্ধন রয়েছে। যারা ইন্ধন দিচ্ছেন তারাই জঙ্গী দমনে পুলিশের কৌশল নিয়ে সমালোচনা করেন। এদের মধ্যে রয়েছেন দেশের কিছু পরিচিত জ্ঞানপাপী ও দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জঙ্গী, সন্ত্রাস ও মাদকের আগ্রাসন প্রতিরোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে এ ধরনের বক্তব্য উঠে এসেছে। এতে প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্র সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ ও বিশেষ অতিথি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া তাদের নিজস্ব মতামত তুলে ধরেন।
সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ধর্মকে বিকৃতভাবে উপস্থাপনে বিপত্তি ঘটে। মূলত ধর্মান্ধতা থেকেই মৌলবাদের সৃষ্টি। আর সেখান থেকে জঙ্গীবাদ। এটা নির্মূলে সামাজিকভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সচেতন করতে হবে সবাইকে। জঙ্গীবাদ সম্পর্কে ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা দেশবাসীকে জানাতে হবে।
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, জঙ্গীবাদ একদিনে সৃষ্টি হয়নি। ’৭৫-এ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এবং ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তান ফেরত যোদ্ধারাই জঙ্গীবাদের পৃষ্ঠপোষকতা শুরু করে। আর এ জঙ্গীবাদ রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে। এটা একটা বৈশ্বিক সমস্যা। বিশেষ করে আকাশ সংস্কৃতি ও সোশ্যাল মিডিয়ায় এর প্রভাব রয়েছে। তার সঙ্গে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রভাবও রয়েছে। যখন মধ্যপ্রাচ্যে আইএসের প্রভাব নিম্নমুখী তখন আমাদের দেশে তা উস্কে দিচ্ছে। এটা অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ইন্ধন। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়ার পর এটার উস্কানি বেশি হয়েছে।
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, গত বছরের ১ জুলাই হলি আর্টিজানে হামলা হয়েছে। সেখানে আমি ২০ মিনিটের মধ্যে যাই এবং বিভিন্ন অফিসারকে নিয়ে প্রথমে আর্জেন্টাইন নাগরিকসহ কয়েকজন বাংলাদেশীকে উদ্ধার করে আসার সময় বিস্ফোরণে আমাদের দুজন অফিসারকে হারাই। এরপর আমাদের অভিযানের ধরনে মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়। তারপর শুধু সাফল্যের ইতিহাস। কল্যাণপুর, সীতাকু-, মীরসরাই, সিলেটসহ সারাদেশে সফলতার সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এরমধ্যে দুর্ভাগ্যজনকভাবে সিলেটে র্যাবের আজাদসহ দুজন সহকর্মীকে হারাই। আমরা জীবন দিয়ে মানুষের জীবন রক্ষা করি। কিন্তু দুঃখ, যখন আমাদের অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। যারা প্রশ্ন তোলে তারা জ্ঞানপাপী। জেগে জেগে ঘুমায়। একজন জঙ্গী যখন সুসাইডাল ভেস্ট নিয়ে কিংবা দশ কেজি বোমা বহন করে তখন কী করা। এরপরও আমরা কল্যাণপুরসহ বিভিন্ন স্থানে জীবিত সক্রিয় জঙ্গী আটক করেছি।
তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখে জনগণের মনে কোন শঙ্কা দেখিনি। শঙ্কা ছিল আমাদের মনে। সরকারের মনে। রাত ১১টায়ও হাজারো মানুষের ঢল ছিল হাতিরঝিলে। আমরা তাদের বের করে দেইনি। কারণ দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অবাধ পালনের মাধ্যমে জঙ্গীবাদের শক্তি হারিয়ে যাবে। এতে অপশক্তিও স্থান পাবে না।