ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;জবানবন্দীতে চতুর্থ সাক্ষী মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ

আসামিরা চোখ বাঁধা অবস্থায় পাঁচজনকে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৩ এপ্রিল ২০১৭

আসামিরা চোখ বাঁধা অবস্থায় পাঁচজনকে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার আলবদর রিয়াজ উদ্দিন ফকিরের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের চতুর্থ সাক্ষী জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে সাক্ষী মোঃ আলী জিন্নাহ বলেছেন, আসামি ও অন্যান্য সহযোগীরা রাঙ্গামাটি বাজার সংলগ্ন ইদগাহ মাঠের পাশের বানা নদীর পাড়ে ৫ জনকে চোখ বেঁধে নিয়ে যায়। এর পর বাবা ও চাচার সামনে ঐ ৫ জনকে চোখ বাঁধা অবস্থায় গুলি করে হত্যা করে তাদের লাশ নদীতে ফেলে দেয়। জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী তাকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ৮ মে দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গাইবান্ধার আব্দুল জব্বার ম-লসহ পাঁচ রাজাকারের বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ আমলে নিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং গজনাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবং গজনাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন আবুল খায়ের গোলাপকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। বুধবার চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছে। এ সময় প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর হৃষিকেশ সাহা, প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, প্রসিকিউট রিজিয়া সুলতানা চমন, প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন মুন্নি ও প্রসিকিউটর আবুল কালাম। আসামি পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট সৈয়দ মিজানুর রহমান ও মুজাহিদুল ইসলাম। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার আলবদর রিয়াজ উদ্দিন ফকিরের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের চতুর্থ সাক্ষী জবানবন্দীতে বলেছেন, আমার নাম মোঃ আলী জিন্নাহ। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৫৮ বছর। আমার ঠিকানা- গ্রাম-রাঙ্গামাটিয়া, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ। একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল আনুমানিক ১২/১৩ বছর। আমি কৃষি কাজ করি। একাত্তর সালের ২৫ আগস্ট সকাল আনুমানিক ৯টা ১০টার দিকে রাজাকাররা একটি গাড়িতে করে পাঁচজনকে চোখ বেঁধে আটক অবস্থায় রাঙ্গামাটিয়া বাজার সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠের পাশে বানা নদীতে নামায়। আমি তাদের সেখানে নামাতে দেখে দৌড়ে আমার বাড়িতে চলে যাই এবং বাবা চাচাকে এ ঘটনা বলি। তারা আমাকে সেখানে যেতে নিষেধ করেন। এর ১৫/২০ মিনিট পরে রাজাকাররা আমাদের বাড়িতে এসে আমার বাবা ও চাচাদের ডেকে বানা নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। আমিও বাবা চাচাদের পিছে পিছে বানা নদীর পাড়ে যাই। এর পর সেখানে রাজাকাররা চোখ বাঁধা আটককৃত পাঁচজনকে দেখিয়ে আমার বাবা-চাচাদের বলে যে, ‘দেখ মুক্তির কি সাজা’। এই কথা বলে রাজাকাররা আটককৃত ৫ জনকে গুলি করে হত্যা করে। এর পর আমার বাবা-চাচাদের তাদের (৫ জনের) লাশ নদীতে ফেলে দেয়ার জন্য বলে। পরে বাড়িতে ফিরে এসে বাবা-চাচাদের কাছে শুনি যে, হত্যাকা-ের শিকার ঐ ৫ জনের মধ্যে কালাইরপাড়ের শহীদুল্লাহ মাস্টার, ফুলবাড়িয়ার আব্দুল মজিদ ও চক লাউড়ি পাড়ার জমশেদ আলী ছিল। আমার বাবা-চাচারা আরও বলেছিল যে, ঘটনার সময় তারা রাজাকারদের মধ্যে আসামি রাজাকার মোঃ রিয়াজ উদ্দিন ফকির, মোঃ ওয়াজ উদ্দিন ও আমজাদ আলীকে চিনতে পেরেছিল। শহীদুল্লাহ মাস্টারসহ তিনজনকে ধরে নিয়ে বানা নদীর পাড়ে গুলি করে হত্যা করেছে। তৃতীয় সাক্ষী আবুল হোসেন মাস্টার বলেছেন, রাজাকাররা ৫ জনকে গুলি করে হত্যা করেছে। তার মধ্যে তিন জনের পরিচয় জানতে পেরেছি। এর মধ্যে একজন ছিল শহীদুল্লাহ মাস্টার। দুইজনের পরিচয় জানতে পারিনি। জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবীগণ সাক্ষীদের জেরা করেন। পরবর্তী দিন বুধবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে হবিগঞ্জের রাজাকার আবুল খায়ের ওরফে গোলাপ মিয়াকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সকালে ঐ রাজাকারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১ মঙ্গলবার এ আদেশগুলো প্রদান করেছে। এ সময় প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর হৃষিকেশ সাহা, প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, প্রসিকিউট রিজিয়া সুলতানা চমন। আসামি পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট সৈয়দ মিজানুর রহমান ও মুজাহিদুল ইসলাম। গাইবান্ধার পাঁচ রাজাকার একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গাইবান্ধার পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ আমলে নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আসামিরা হলেন- গাইবান্ধা সদরের মোঃ আব্দুল জব্বার ম-ল (৮৬), তার ছেলে মোঃ জাছিজার রহমান ওরফে খোকা (৬৪), মোঃ আব্দুল ওয়াহেদ ম-ল (৬২), মোঃ মোন্তাজ আলী ব্যাপারী ওরফে মমতাজ (৬৮), মোঃ রনজু মিয়া (৫৯)। আসামিদের মধ্যে রনজু মিয়া বাদে বাকি পাঁচ আসামি পলাতক। আবুল খায়ের গোলাপকে কারাগারে প্রেরণ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং গজনাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবং গজনাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল খায়ের গোলাপকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে গত মঙ্গলবার নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর গ্রাম থেকে আবুল খায়ের গোলাপকে গ্রেফতার করে হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ।
×