ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার ও রাজনীতির বিকল্প নেই

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৭ এপ্রিল ২০১৭

 দেশের স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার ও রাজনীতির বিকল্প নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার ও রাজনীতির বিকল্প নেই। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী নয়, এমন দলগুলোকে রাজনীতি করতে না দেয়ারও পরামর্শ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের। তারা বলছেন, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও মৌলবাদমুক্ত বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে এখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তির ঐক্য জরুরী। তা না হলে উগ্র-সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠীকে প্রতিহত করা সম্ভব নয়। এজন্য রাজনৈতিকভাবে জনমত গঠনের বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তারা। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জঙ্গীবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে : রাজনীতিতে একবার রাজাকার, একবার মুক্তিযুদ্ধের সরকার-এই মিউজিক্যাল চেয়ারের খেলা বন্ধ কর’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেমিনারের আয়োজন করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বলেন, যারা জঙ্গীবাদ ও মৌলবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করবে সেই রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন বাতিল করা উচিত। সরকারী দল ও বিরোধী দলসহ সকল দলকে হতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘আদর্শ পাকিস্তান’। তাই তিনি পাকিস্তানী ভাবধারায় চলেন, তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাও বেশি। বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, যারা ক্ষমতায় থেকে একটা চুক্তিও ভারতের সঙ্গে করতে পারেনি তাদের মুখে ভারত সফর নিয়ে সমালোচনা মানায় না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারির আগেই অনুষ্ঠিত হবে। এ নিয়ে এত কথা বলার কি আছে। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। তাই যথাসময়ের নির্বাচনের ব্যাপারে সরকার আন্তরিক। ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) সম্মেলন নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাব দিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি বলেছে- অবৈধ সংসদে কিভাবে আইপিইউ সম্মেলন হয়। সংসদ যদি অবৈধই হতো তাহলে কিভাবে স্পিকার সিপিএ সভাপতি, সাবের হোসেন চৌধুরী কিভাবে আইপিইউ সভাপতি হন? আসলে বিএনপি নেতাদের অফিসে বসে মিথ্যা ও আজব কথা বলা অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর এক ঐতিহাসিক সফর। প্রধানমন্ত্রী সেই ব্যক্তি যার হাত ধরে পার্বত্য শান্তি চুক্তি, গঙ্গার পানি বণ্টন, গভীর সমুদ্র সীমারেখা জয়লাভ সম্ভব হয়েছে। তিনি ভারতে যাবেন দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করবেন। দেশের স্বার্থ বিনষ্ট হয়, এমন কাজ তিনি কোনদিনও করবেন না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও ভারত আমাদের বড় বন্ধু। এ সব দেশের পরস্পরের সঙ্গে যে সম্পর্কই থাকুক না কেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সকলেরই ভাল বন্ধুত্বের সম্পর্ক রয়েছে। এটাই আমাদের পররাষ্ট্রনীতির সাফল্য। তিনি আরও বলেছেন, ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী) ঠিকই বলেছেন, ‘যার হাতে গঙ্গার পানি, তার হাতেই তিস্তার চুক্তি হবে’। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া যা বলেন পাকিস্তান তাই বলে। তাই ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস নিয়ে তিনি ও তার দল কোন কথাই বলেননি। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের প্রেরণা, মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া সন্দেহ করেন। তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের কেউ যদি ক্ষতি করে থাকে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছে স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান। জিয়া ’৭২ এর সংবিধানকে তছনছ করে বঙ্গবন্ধুর সময়ে নিষিদ্ধ ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে পুনর্প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তার রোপণ করা বিষবৃক্ষ খালেদা জিয়া ফুলে ফলে ভরিয়ে তুলে নিজামী- মুজাহিদদের গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা তুলে দেন। আর আমার হাতে সে সময় ছিল হাতকড়া।’ জঙ্গী সম্পর্কে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, জঙ্গীদের পেছনে ওনার প্রশ্রয় রয়েছে। জঙ্গী সমস্যা বৈশ্বিক। এই সমস্যা সকলে মিলে মোকাবেলা করতে হবে। জঙ্গীবাদের পৃষ্ঠপোষক বিএনপি ও তার নেত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করার আহ্বান জানান জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ও বিএনপি হচ্ছে জঙ্গীবাদের দোসর, পৃষ্ঠপোষক ও মদদদাতা। ইতিহাস বিকৃতকারী দল। জঙ্গীদের স্নেহময়ী মাতা। তিনি যতদিন রাজনীতিতে থাকবেন, ততদিন জঙ্গীবাদ থাকবে। কারণ, খালেদা জিয়ার রাজনীতি পরিবর্তন হবে না। রাজাকার, জঙ্গী তিনি ছাড়বেন না। খালেদা জিয়া ও বিএনপি দেশ, রাজনীতি ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি এমন মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেন, তাই আমি আহ্বান জানাব জঙ্গীমুক্ত দেশ গড়তে চাইলে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে বিতাড়িত করি। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক চেতনার নেতাকর্মীদের চিহ্ন থাকবে না। ইতিহাসকে তারা দ্বিখ-িত করে। তাই তো গত আট বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে অশান্তি করে যাচ্ছে। সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদত হোসেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, জাতীয় পার্টি (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান শওকত, নাদের চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন মীর হোসেন আক্তার, রোকনুজ্জামান রোকন প্রমুখ। সেমিনারের ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার।
×