ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

টেলিমেডিসিন সেবায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ পাচ্ছে উন্নত চিকিৎসা

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৬ এপ্রিল ২০১৭

টেলিমেডিসিন সেবায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ পাচ্ছে উন্নত চিকিৎসা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের স্বাস্থ্য সেক্টরের উন্নয়ন কার্যক্রমের উর্ধগতি অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, বিভিন্নভাবে দেশের স্বাস্থ্যসেবা আজ সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। তবে এর কার্যক্রমসমূহ আরও গতিশীল ও সহজলভ্য করে তুলতে হবে। ডিজিটাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যসেবায় টেলিমেডিসিন কার্যক্রম বর্তমান সরকারের আর একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের জটিল ও কঠিন রোগী এলাকার যে কোন হাসপাতালে বসে বিশেষায়িত হাসপাতালের ডাক্তারসহ মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও চিকিৎসকদের কাছ থেকে বিনামূল্যে অত্যাধুনিক ও উন্নত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। স্বাস্থ্য বাতায়ন নামে একটি সার্বক্ষণিক কল সেন্টার চালু করা হয়েছে। দেশের মানুষ বিনামূল্যে রাত দিন ২৪ ঘণ্টা ১৬২৬৩ নাম্বারে কল করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে বুধবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য সচিব সিরাজুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। আগামী ৭ এপ্রিল পালিত হবে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। এবার দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় আসুন, বিষণœতা নিয়ে কথা বলি। সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিষণœতা এক বৈশ্বিক সংকট। পৃথিবীতে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ বিষণœতায় ভুগছে। দেশ ভেদে শতকরা ৩ থেকে ১৭ ভাগ মানুষ বিষণœতায় আক্রান্ত। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রাপ্ত বয়স্ক জনগোষ্ঠীর শতকরা ৪.৬ ভাগ বিষণœতায় আক্রান্ত। যে কোন বয়সে এমনকি শিশুদের মধ্যেও এটি দেখা দিতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সে বিষণœতার লক্ষণ প্রথমবারের মতো দেখা যায়। এছাড়া ১৫ থেকে ১৮ বছর ও ৬০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে এর ঝুঁকি কিছুটা বেশি। দীর্ঘ মেয়াদী রোগ, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, একাকিত্ব, পারিবারিক ও সম্পর্কের সমস্যা, গর্ভকালীন ও প্রসব পরবর্তী সময়, বিবাহ বিচ্ছেদ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, প্রবাস জীবন, অভিবাসন, মাদক সেবন ইত্যাদি কারণেও এটি হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিষণœতার বিজ্ঞান ভিত্তিক চিকিৎসা রয়েছে। এজন্য ধৈর্য্য সহকারে মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যক্তি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে। এক্ষেত্রে ওষুধ ও সাইকোথেরাপি (ধারণা ও আচরণ পরিবর্তনের চিকিৎসা) দুই-ই প্রয়োজন। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় সরকার এ ব্যাপারে বিভিন্ন সেবামূলক কর্মকা- পরিচালনা করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০১ সালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের শুভ সূচনা করেন। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠান থেকে জনগণ উন্নত সেবা পাচ্ছেন। তবে এ বিষয়ে প্রয়োজন জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং ব্যাপক সচেতনতা। দেশের স্বাস্থ্য সেক্টরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের সাধারণ জনগোষ্ঠী বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠী, নারী ও শিশুদের জন্য উন্নততর ও সহজলভ্য সেবা প্রদান নিশ্চিত করার লক্ষে দেশে একটি কার্যকর এবং গ্রহণযোগ্য সেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। সরকারের স্বাস্থ্য খাতের মূল উদ্দেশ হচ্ছে- মাতৃ মৃত্যুহার, শিশু মৃত্যুহার, সংক্রামক ও অসংক্রামক ব্যাধির বিস্তার, সার্বিক প্রজনন হার ও অনাকাক্সিক্ষত প্রজনন হার হ্রাসকরণ এবং মহিলা ও পুরুষের গড় আয়ু, প্রথম সন্তান জন্মের সময় মায়ের বয়স, পুষ্টির মান ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিকরণ। এ সকল উদ্দেশ অর্জনের জন্য সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে প্রতি ৬ হাজার জনগোষ্ঠীর জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বর্তমানে প্রায় ১৩ হাজার ৫শ’টি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে জনগণ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। উন্নত ও বিশেষায়িত চিকিৎসা সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষে ৫শ’ শয্যাবিশিষ্ট মুগ্দা জেনারেল হাসপাতাল, ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২য় ইউনিট, ৩শ’ শয্যাবিশিষ্ট ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইন্স, ঢাকার তেজগাঁও-এ নাক-কান-গলা বিশেষায়িত হাসপাতাল, গোপালগঞ্জে শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল নির্মাণ ও চালু করা হয়েছে।
×