ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টি২০ থেকে মাশরাফির অবসর

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৫ এপ্রিল ২০১৭

টি২০ থেকে মাশরাফির অবসর

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গত বছর থেকেই মাশরাফি বিন মর্তুজার অবসর গুঞ্জন উঠেছিল। কিন্তু সেসব সত্য হয়নি। এবার হুট করেই যেন বোমা ফাটিয়ে দিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সীমিত ওভারের অধিনায়ক মাশরাফি। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি২০ খেলতে নামার আগে জানিয়ে দিলেন আর এ ফরমেটে খেলবেন না। দুই ম্যাচের সিরিজ শেষেই টি২০ থেকে অবসর নিচ্ছেন তিনি। মঙ্গলবার প্রথম টি২০ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টস জেতার পর মাশরাফি বলেন, ‘এ সিরিজটাই আমার শেষ টি২০ সিরিজ।’ তবে ৩৩ বছর বয়সী ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ খ্যাত এ পেসার অবশ্য ওয়ানডে ক্রিকেট চালিয়ে যাওয়ার কথাও জানিয়েছেন। ক্যারিয়ারে অনেক ইনজুরি দেখেছেন। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়েও বোলিং-ফিল্ডিং করেছেন। অসুস্থতা, সামান্য ইনজুরি নিয়ে মনের জোরে খেলেছেন আন্তর্জাতিক ম্যাচ। আর সেগুলো বেশ কয়েকবার অস্ত্রোপচারে বাধ্য করেছে মাশরাফি বিন মর্তুজাকে। সবমিলিয়ে ৮ বার শল্যবিদের ছুরি-কাঁচির নিচে সঁপে দিতে হয়েছে নিজেকে। মাশরাফির হাঁটু হয়েছে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু ক্রিকেটের প্রতি যে ভালবাসা, দেশাত্মবোধের যে অনুভব সেটার ছাপ তার মধ্যে বরাবরই দেখা গেছে। তাই ক্রিকেট ছাড়েননি। অনেক আগেই বেশ কয়েকবার তার অস্ত্রোপচার করানো শৈল্যবিদ অস্ট্রেলিয়ান ডাক্তার ডেভিড ইয়াং বলেছিলেন, ‘খেলা ছেড়ে দিতে হবে।’ কিন্তু সেটাও শোনেননি মাশরাফি। এভাবেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৬ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন। তবে ২০০৯ সাল থেকে আর দীর্ঘ পরিসরের টেস্ট ক্রিকেট খেলতে পারেননি। আর ২০০৬ থেকে টি২০ ফরমেটে যাত্রা শুরু করেন। টানা ইনজুরির কারণে খুব বেশি ম্যাচ খেলা হয়নি ক্যারিয়ারে। ইনজুরির সময়গুলো হিসেব করলে সবমিলিয়ে প্রায় ৫ বছরই ক্রিকেটের বাইরে থেকেছেন তিনি। নয়তো ক্যারিয়ারে যে উইটেকটগুলো শিকার করতো তাতে তার নাম বিশ্বসেরাদের কাতারেই থাকতো। প্রেমাদাসায় মঙ্গলবার প্রথম টি২০ ম্যাচে নামার আগ পর্যন্ত ৫২ ম্যাচ খেলেছেন এ ফরমেটে। মাশরাফি ৩৭.৫৬ গড়ে নিয়েছেন ৩৯ উইকেট। বাংলাদেশের খেলা টি২০ সংখ্যা ৬৫। এর মধ্যে ২৬ ম্যাচেই দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশকে টি২০ ক্রিকেটে সর্বাধিক সাফল্যও পাইয়ে দিয়েছেন তিনিই। মাশরাফির অধীনে বাংলাদেশের জয় ৯টি। ২০০১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টেস্ট ম্যাচ দিয়ে অভিষেকের পর ১৬ বছর ধরে খেলে চলেছেন মাশরাফি। আর সেই টেস্ট ক্যারিয়ারই আগে শেষ হয়ে গেছে তার। ডাক্তারদের পরামর্শে ২০০৯ সালের পর আর খেলা হয়নি টেস্ট। বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ওয়ানডে ও টি২০ অধিনায়ক তিনি। টি২০ ছাড়লেও ওয়ানডে খেলবেন মাশরাফি। ১৭২ ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ২২৫ উইকেট নিয়েছেন। ৩৬ টেস্টে ৭৮টি উইকেট নিয়েছেন। ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে টেস্টে তার রান ৭৯৭, ওয়ানডেতে ১৫৫৬ এবং টি২০তে ৩৬৮। অবসরের ঘোষণা দেয়ার সময় মাশরাফি বলেন, ‘বাংলাদেশ দলকে টি২০ ক্রিকেটে এ ১০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিনিধিত্ব করা আমার জন্য অনেক গর্বের। আমি বিশ্বাস করি বর্তমান দলটি একটি ভাল দল এবং দলে কিছু উদীয়মান খেলোয়াড় আছে। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশ সামনের দিনগুলোতেও ভাল ক্রিকেট খেলবে। আমার ওপর আস্থা রাখার জন্য এবং আমাকে এত চমৎকার দলের নেতৃত্ব প্রদানের সুযোগ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের প্রতি আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। আমি আমার সকল ভক্ত, পরিবার এবং বন্ধুদের প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ আমাকে সবসময় সমর্থন করার জন্য। এই সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে অনেক উত্থান-পতন ছিল। আমি সবসময় চেষ্টা করেছি আমার ভক্তদের খুশি করার। আমি আমার প্রত্যেক ভক্তের কাছে তাদের প্রতি ম্যাচে খুশি করতে না পারার জন্য ক্ষমা চাইছি।’ এই মুহূর্তে দলের অবস্থা বেশ ভাল। বেশকিছু নবীন খেলোয়াড় উঠে আসছে। এ কারণে অবসর নেয়ার উপযুক্ত সময় হয়েছে বলে মনে করেন মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি টি২০ থেকে অবসর নেয়ার জন্য এটাই আমার উপযুক্ত সময় যাতে অনেক তরুণ উদীয়মান ক্রিকেটার তাদের প্রতিভা তুলে ধরার সুযোগ পায়। আমি বাংলাদেশের টি২০ দলের নতুন অধিনায়ককে আগাম অভিনন্দন জানাই এবং আমি নিশ্চিত বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা সময় সামনে আসবে।’
×