ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

উঠতি বয়সের ছেলেমেয়ে পুলিশের টার্গেট

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৮ মার্চ ২০১৭

উঠতি বয়সের ছেলেমেয়ে পুলিশের টার্গেট

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ফয়’স লেক এলাকাকে ঘিরে দুটি থানা পুলিশের মাসোয়ারা আদায়ের কারণে নষ্ট হচ্ছে উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি চাকরিজীবীরাও ফয়’স লেক সড়কের হোটেল রেস্টুরেন্টকে ঘিরে অসামাজিক কার্যকলাপে মেতে উঠছে। সিএমপির আকবর শাহ ও খুলশী থানা পুলিশ একদিকে এসব হোটেল থেকে মাসোয়ারা নিচ্ছে। অন্যদিকে হোটেল থেকে বেরোনোর পর তরুণ-তরুণীদের মধ্য থেকে বিত্তশালীদের টার্গেট করে তাদের আটকে অর্থ আদায় করছে। এ ক্ষেত্রে কোন থানা পুলিশই সীমানা মানছে না। রবিবার দুপুরে খুলশী থানা পুলিশের এসআই হেলালের নেতৃত্বে একটি টিম পরিবেশ ভবনের সামনে থেকে এক জুটিকে ট্যাাক্সি থেকে নামিয়ে জোরপূর্বক থানার গাড়িতে তুলে নেয়ার ঘটনা ঘটে। প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশ একদিকে ওইসব অবৈধ হোটেল থেকে মাসোয়ারা নিচ্ছে, অন্যদিকে কোন আইনে এ জুটিকে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে অর্থ আদায় করছে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয়রা বাধা দিলেও নাছোড়বান্দা পুলিশ কর্মকর্তা কোন বাধা মানেনি। অভিযোগ রয়েছে, খুলশী থানা এলাকায় উত্তর ও দক্ষিণ খুলশীর বিভিন্ন সড়কে ১৫টিরও বেশি রেস্ট হাউস গেস্ট হাউসে চলছে অসামাজিক কার্যকলাপ। পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানেই চলছে এসব অপরাধ বাণিজ্য। ফয়’স লেক সড়কের হোটেল সোনালী, লেকভিউ, লেক ভ্যালি, হোটেল স্বর্ণালীসহ খুদে খুদে রেস্টুরেন্টেও কেবিন আকারে ভাড়া দেয়া হচ্ছে ঘণ্টার ভিত্তিতে। মূলত, ফয়’স লেক এলাকাটি আকবর শাহ থানার আওতাধীন। অথচ খুলশী থানা ও আকবর শাহ থানার পুলিশ এসব হোটেল থেকে মাসোয়ারা নিয়ে যাচ্ছে। আবার হোটেল বয়দের সঙ্গে আঁতাত রেখে বিত্তশালী তরুণ-তরুণীদের রাস্তায় আটকে অর্থ আদায়ে লিপ্ত রয়েছে দুই থানার পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, দুপুর পৌনে ২টার দিকে পরিবেশ ভবনের সামনে খুলশী থানা পুলিশের এসআই হেলাল ও তার ফোর্স সরকারী গাড়ি দিয়ে গতিরোধ করে। ওইসময় ছিল এক জুটি। স্বাভাবিক অবস্থানে ট্যাক্সিতে থাকলেও পুলিশের এক কনস্টেবল ও আনসার মিলে ছেলেটিকে জোরপূর্বক রাস্তায় নামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। এমনকি তার সঙ্গে থাকা ব্যাগটিও তল্লাশি করে। কোন কিছু না পেয়ে শেষে ট্যাক্সিতে থাকা মেয়েটির সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তোলে। একপর্যায়ে ছেলেটি বার বার বোঝানোর চেষ্টা করে মেয়েটির সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু নাছোড়বান্দা পুলিশ তা মানতে নারাজ। ছেলেটিকে একপর্যায়ে তাদের পিকআপে তুলে নেয়। পরবর্র্তীতে গাড়ি থেকে এসআই হেলাল নেমে সিএনজি ট্যাক্সি থেকে মেয়েটিকেও নামিয়ে পুলিশের গাড়িতে তোলে। দুজনই প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার কারণে কোনভাবেই মানসিক বিপর্যস্ত হয়নি এ জুটি। একপর্যায়ে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয় কি কারণে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। এমন প্রশ্নের জবাবে এসআই হেলাল জানান, তাদেরই জিজ্ঞেস করুন কোত্থেকে আসছে। পরবর্তীতে ছেলেটি জানাল, সে চট্টগ্রামের কেইপিজেডে চাকরি করে। আর মেয়েটি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ শেষ সেমিস্টারের ছাত্রী। এ দুজনের অপরাধ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে এসআই হেলার জানান, ফয়’স লেকের লেকভিউ হোটেল থেকে তারা বেরিয়েছে। তাদের ফলো করে পরিবেশ ভবনের সামনে আটকানো হয়েছে। সেখানে অনেক টাকার বিনিময়ে মেলামেশা করাটাই তাদের অপরাধ। ফয়’স লেক এলাকায় হোটেল স্বর্ণালী, লেক ভ্যালি, লেকভিউ, সোনালীসহ প্রায় ২০টিরও বেশি আবাসিক হোটেল রয়েছে। এগুলো আবাসিক হলেও এদের কাস্টমার মূলত এ ধরনের উঠতি বয়সের ছেলেমেয়ে। এ ব্যাপারে খুলশী থানার এসআই হেলাল জনকণ্ঠকে জানান, ওইসব হোটেলে নানা অসামাজিক কাজ চলে। উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা দেদার ঘণ্টা হিসেবে রুম ভাড়া নিয়ে আনন্দঘন মুহূর্ত কাটাচ্ছে। হোটেলগুলোতে অভিযান না চালিয়ে পথে আটকানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটরা অভিযান চালায় হোটেলের ভেতরে। বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালিত হয়েছে। জাকির হোসেন রোডের দক্ষিণ দিকটি খুলশী থানার আওতায় পড়েছে। ফলে আমি আমার থানা এলাকায় তাদের। হোটেলে অভিযান না চালিয়ে রাস্তায় হয়রানি প্রসঙ্গে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
×