ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

ফরাসী ভাষায় বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২৭ মার্চ ২০১৭

ফরাসী ভাষায় বঙ্গবন্ধুর  আত্মজীবনী

বাংলাদেশের ৪৭তম স্বাধীনতা দিবস ও বাংলাদেশ-ফ্রান্স কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪৫তম বার্ষিকীতে প্যারিস থেকে ফরাসী ভাষায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী প্রকাশিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বিশ্বের অন্যতম প্রধান ভাষা ফরাসীতে প্রকাশিত হওয়ার ফলে ফ্রান্সের পাঠকরা ছাড়াও ফ্রাঙ্কোফোনি বিশ্বের ফরাসী ভাষাভাষী বিশাল পাঠক সমাজ এই গ্রন্থের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে। বাংলাদেশ থেকে বইটির ফরাসী সংস্করণ প্রকাশনার সকল কর্মকা- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। ফরাসী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান জিংকো এডিটর বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ফরাসী সংস্করণ প্রকাশ করেছে। বইটি রবিবার বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ ফ্রান্সের সর্ববৃহৎ বইমেলা ‘সালোন লিভর প্যারিস’-এ পরিবেশিত হয়েছে। এই বইমেলা ২৪ মার্চ শুরু হয়েছে, চলবে আজ ২৭ মার্চ পর্যন্ত। বইটি ফরাসীতে অনুবাদ করেছেন প্রফেসর ফ্রান্স ভট্টাচারিয়া। প্যারিসে অবস্থিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ওরিয়েন্টাল ল্যাঙ্গুয়েজেস এ্যান্ড সিভিলাইজেশন্স (ইনালকো)-র প্রফেসর এমেরিটাস মিসেস ফ্রান্স ভট্টাচারিয়া ইতোপূর্বে যোগাযোগ, নষ্ট নীড়, আনন্দমঠ, কপালকু-লা, পথের পাঁচালী, মনসামঙ্গলকাব্যসহ বিভিন্ন বাংলা উপন্যাস ও কাব্যগ্রন্থ অনুবাদ করেছেন। বইটির ফরাসী সংস্করণের পাদটীকা লিখেছেন ইনালকোতে বাংলা ভাষা ও সভ্যতার শিক্ষক জেরেমি কদ্রণ। বইটির প্রকাশনা, ভাষাগত পরিশুদ্ধতা ও সর্বাঙ্গীন সৌষ্ঠব নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক ফরাসী রাষ্ট্রদূত সার্জ দেগালে, ইনালকোর বাংলা বিভাগের প্রধান ড. ফিলিপ বেনোয়া ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ফিলিপ রাত একযোগে কাজ করেছেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ফরাসী সংস্করণের উপক্রমনিকায় ফ্রান্সের ভূতপূর্ব পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুবার্ট ভেদ্রিন লিখেছেন, ‘ভাগ্য ফ্রান্স ও বাংলাদেশকে ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে একে অপরের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে, ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিপক্ষে ফরাসীরা বাঙালীর সঙ্গে ছিল। একজন ফরাসী সেনা অফিসার গোলন্দাজ বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন। যুদ্ধে পরাজয়ে বাংলা হারায় স্বাধীনতা। প্রায় ২১৪ বছর পর শেখ মুজিবুর রহমানের হাত দিয়ে বাংলা তার স্বাধীনতা ফিরে পায়।’ ফ্রান্সের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪৫তম বার্ষিকীতে তাঁর এই মূল্যায়ন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। উল্লেখ্য, হুবার্ট ভেদ্রিন ১৯৮৯ সালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরাঁর বাংলাদেশ সফরে তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনী ফ্যান্স সংস্করণের প্রকাশক মি. রেনালদ মন বইটির পাঠকপ্রিয়তা সম্পর্কে অত্যন্ত আশাবাদী। তার মতে, অসমাপ্ত আত্মজীবনীর সাহিত্যিক মান ও ঐতিহাসিক মূল্য বিবেচনায় বইটি ফ্রান্সের সাধারণ পাঠক সমাজ এবং ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের কাছে সমাদৃত হবে। বইটির প্রচার বৃদ্ধিতে এটি প্যারিস বইমেলা ছাড়াও জুনের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য ‘এমেজিং ট্রাভেলার’ ও অক্টোবরে ‘দি মিটিং অব হিস্ট্রি’ নামক দুইটি গুরুত্বপূর্ণ বইমেলায় পরিবেশন করা হবে। বিশেষ করে দি মিটিং অব হিস্ট্রি বইমেলায় অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ওপর ফরাসী ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের অংশগ্রহণে একটি সেমিনার আয়োজন করা হবে। এছাড়া সাধারণ পাঠকদের হাতে পৌঁছে দিতে বইটি চারটি বুক স্টলে রাখা হবে। বঙ্গবন্ধু ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত কারাগারে বন্দী অবস্থায় এই অমূল্য দলিল রচনা করেন। তাঁর লিখিত এই স্মৃতি কথা ২০১২ সালের ১৮ জুন বাংলায় অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও ইংরেজী অনুবাদে ‘আন ফিনিস্ড মেমোরিজ’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। বইটির প্রথম প্রকাশনার সার্বিক দায়িত্ব পালন, তত্ত্বাবধান ও কার্যক্রম পরিচালনা করেন জাতির জনকের কন্যা, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা। ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল) বাংলা ও ইংরেজীতে বইটি প্রকাশ করে। বইটির প্রথম বাংলা সংস্করণে পৃষ্ঠা সংখ্যা হচ্ছে ৩২৪। মূল্য হচ্ছে পাঁচশত পঁচিশ টাকা। প্রচ্ছদ এঁকেছেন সমর মজুমদার। একই সঙ্গে ভারতে পেঙ্গুইন বুকস ইন্ডিয়া ও পাকিস্তানে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস পাকিস্তান বইটি প্রকাশ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. ফখরুল আলম বইটি ইংরেজীতে অনুবাদ করেন। বইটিতে বঙ্গবন্ধু তাঁর বংশধর, জন্ম ও বাল্যজীবন, স্কুল ও কলেজ শিক্ষাসহ সামাজিক ও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার উল্লেখ করেন। এতে এই মহান নেতা কলকাতা ও বিহারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি, আগরতলা ষড়যন্ত্রসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার প্রত্যক্ষ বিবরণ তুলে ধরেছেন। -বাসস।
×