ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেটে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি কমছে

প্রকাশিত: ০৩:২৮, ২৭ মার্চ ২০১৭

বাজেটে বিভিন্ন খাতে  ভর্তুকি কমছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সরকার বিভিন্ন খাত থেকে ভর্তুকি ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনার চিন্তা করছে। এরই অংশ হিসেবে চলতি ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বাজেটের ভর্তুকি খাত থেকে দুই হাজার ৯০৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সংশোধিত বাজেট থেকে ভর্তুকি কমিয়ে ২৩ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা করা হয়েছে। শতকরা হিসেবে যা ১১ শতাংশ। কৃষি খাতে ভর্তুকি কমানোর কারণে ভর্তুকির পরিমাণ কমেছে। সূত্র আরও জানায়, চলতি অর্থবছরের বাজেটে খাদ্য খাতে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ৯ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ছয় হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। একইভাবে পিডিবির খাত থেকে কমানো হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। এ খাতে ভর্তুকি ছিল ছয় হাজার কোটি টাকা। এখন তা কমিয়ে করা হয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। তবে কিছু খাতে ভর্তুকির পরিমাণ কিছুটা বেড়েছেও। যেমন মূল বাজেটে খাদ্য খাতে ভর্তুকি রয়েছে দুই হাজার ৮২০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে তিন হাজার ৭১৭ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে পাট ও আর্থিক সহায়তা খাতে ভর্তুকি নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। গ্যাস খাতে রাখা হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে বিবিধ খাতে ভর্তুকি রাখা হয়েছে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) খাতে এবার কোন ভর্তুকি রাখা হয়নি। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কম দামে জ্বালানি তেল কিনে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে বেশি দামে বিক্রি করার কারণে বিপিসির কোন ভর্তুকির প্রয়োজন হচ্ছে না। গত দুই অর্থবছর থেকে সরকারী এই প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে কোন ভর্তুকির অর্থ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে না বলে অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়। অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, সংশোধিত বাজেটে গ্যাস খাতে ভর্তুকি দেয়া হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। তবে আগামী অর্থবছর তা বাড়বে। এখানে আরও দেড় হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির প্রয়োজন হতে পারে। সূত্র জানায়, ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনছে সরকার। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ২৭ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। পরের অর্থবছর, অর্থাৎ ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে তা কমিয়ে করা হয় ২৫ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা এবং ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে তা আরও কমিয়ে ২৩ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা করা হয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, তিন বছরের ব্যবধানে ভর্তুকির পরিমাণ কমানো হয়েছে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে যা ১৬ শতাংশ। আগামী অর্থবছরেও ভর্তুকির পরিমাণ কমবে। কারণ, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে আগামী অর্থবছরে পিডিবি খাতে ভর্তুকির পরিমাণ কমে যাবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংক সব সময় ভর্তুকি কমানোর জন্য সরকারকে পরামর্শ দেয়। বিশেষ করে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরেই বলা হচ্ছে, বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে যেন ভর্তুকি কমিয়ে আনা হয়। কারণ, এ খাতে ভর্তুকির অর্থে গরিবদের পাশাপাশি ধনীরাও সুবিধা পাচ্ছে। তাই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে ভর্তুকি দেয়া উচিত, যাতে সমাজের সুবিধা বঞ্চিতরাই যেন এর উপকার পান।
×