ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি হলে হুমকিতে পড়বে দেশ ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৪ মার্চ ২০১৭

ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি হলে হুমকিতে পড়বে দেশ ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে বাংলাদেশের ভৌগোলিক স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টন ভাসানী ভবনে ২৬মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে শোভাযাত্রা সফল করতে ঢাকা মহানগর বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়ে এমন কোন চুক্তি হলে জনগণ তা মেনে নেবে না। মির্জা ফখরুল বলেন, জঙ্গীবাদকে সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার করে বিএনপিকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছে। সরকার জঙ্গীবাদ নিয়ে যে রহস্যময় খেলা খেলছে তার আসল রহস্য হচ্ছে দেশে ঘরোয়া জঙ্গীদের কথা বলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে তাদের রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়া। প্রত্যেকবারই তারা এভাবে জঙ্গীবাদের ধুয়া তোলে। এর পর বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীকে ধরে নিয়ে যায়। এটা সরকারের একটা কৌশল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর সমগ্র জাতিকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, আমরা জানি না প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গিয়ে কি কি চুক্তি স্বাক্ষর করবেন। সরকারের উচিত কি কি চুক্তি হবে এটা জনগণকে জানানো। কিন্তু এ বিষয়ে এখনও জনগণ কিছু জানে না। পত্র-পত্রিকায় যে স্পেকুলেশনগুলো হচ্ছে তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা যারা স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছি, যারা আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি তারা উদ্বিগ্ন না হয়ে পারছি না। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা এখন স্বাধীন আছি কিনা এটা বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। আমাদের তো ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই, রাজনৈতিক স্বাধীনতা নেই, অর্থনৈতিক স্বাধীনতাও হুমকির মুখে। এখন যেটাকে আমরা বলি ভৌগোলিক স্বাধীনতা সেটাও হুমকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, নির্বাচন করতে হলে সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সরকার দিতে হবে অন্যথায় দেশে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তাই বিভক্তি ও অত্যাচার-নির্যাতন বাদ দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আসুন আলোচনা করুন। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ভারতের সঙ্গে আমাদের যে পানি সমস্যা রয়েছে, যেটা আমাদের প্রধান সমস্যা তার সমাধান কিভাবে করা যায়। আমাদের জন্য সবচেয়ে জরুরী তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি, এখনও হয়নি। তিনি বলেন, গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন না হওয়া ও ৫৪টি নদীর পানি নিয়ে চুক্তি না হওয়ার বিষয়ে সরকার ইতিবাচক কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেন, এটাই এখন জনমনে বড় প্রশ্ন। মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের পানিসম্পদমন্ত্রীর মুখে আমরা শুনতে পাই, তিস্তা নদীর পানি চুক্তি হবে কিনা সে নিয়ে তিনি সন্দীহান। তাহলে কোন্ চুক্তি হবে? দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন চুপ করে বসে থাকার সময় নেই। মুখ বুজে চুপ করে বসে থাকলে দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারব না। স্বাধীনতা দিবসের র‌্যালি শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজন করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। সকল ইউনিট থেকে বিপুল নেতাকর্মীর উপস্থিতি ঘটিয়ে র‌্যালি সফল করতে নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। জঙ্গীবাদ দমনে সরকার ব্যর্থ এমন অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, আজকে তাকিয়ে দেখেন সিরিয়ার দিকে; লাখ লাখ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। জঙ্গীবাদের কারণে অনেক রাষ্ট্র ব্যর্থরাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এ জন্য আমি অত্যন্ত ভিত এবং উদ্বিগ্ন। কোন্ দিকে সরকার আমাদের নিয়ে যাচ্ছে। আমি স্পষ্টভাবে জানতে চাই সরকারের আসল লক্ষ্যটা কি? যদি জঙ্গীবাদ নির্মূল করতে চান তাহলে অবশ্যই সকল রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে সত্যিকার অর্থেই প্রকৃত তথ্য উৎঘাটন করেন। জঙ্গীবাদ নিয়ে র‌্যাব এবং পুলিশের আইজির কথার কোন মিল নেই বলেও বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন। ফখরুল বলেন, আশকোনায় যাকে জঙ্গী বলে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে সেই হত্যার তথ্যের সঙ্গে পুলিশ ও র‌্যাবের বর্ণনার কোন মিল নেই। সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, জঙ্গী বলে আপনারা যাদের ধরেন তাদেরই ক্রসফায়ারে মেরে ফেলেন। আমাদের দাবি, তাদের ধরেন, তদন্ত করেন, ঘটনার প্রকৃত তথ্য বের হয়ে আসুক। তাহলে কারা জঙ্গীবাদে মদদ দিচ্ছে, কারা তা করছে বেরিয়ে আসবে। আমরা চাই, একসঙ্গে পুরো জাতি জঙ্গীবাদকে নির্মূল করুক। কিন্তু আপনারা সেটা করছেন না আর করবেনও না। এ জন্যই কয়েকদিন পর পর বলেন, জঙ্গীবাদ নির্মূল হয়ে গেছে। আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস বলেন, ২৬ মার্চ বেলা দুটায় নয়া পল্টন থেকে বর্ণাঢ্য ও শান্তিপূর্ণভাবে বিএনপির র‌্যালি শুরু হবে। এই র‌্যালি সফল করতে ঢাকা মহানগরের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে র‌্যালি শুরু করে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত মিছিল করা হবে। তবে মিছিলের পথ পরবর্তীতে পরিবর্তনও হতে পারে। মির্জা আব্বাসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, দলের কেন্দ্রীয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ, আবদুস সালাম আজাদ, কাজী আবুল বাশার, ইউনুস মৃধা ও মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু ।
×