ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী অঞ্চলে পুরনো তালিকা ধরে চলছে জঙ্গীবিরোধী অভিযান

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৬ মার্চ ২০১৭

রাজশাহী অঞ্চলে পুরনো তালিকা ধরে চলছে জঙ্গীবিরোধী অভিযান

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহীর বিভিন্ন অঞ্চলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবি সদস্যদের ধরপাকড় অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ বুধবার ভোরে বাগমারার জুগিপাড়া গ্রাম থেকে তালিকাভুক্ত জেএমবি ক্যাডার আবদুর রাজ্জাককে (৩৮) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সে ওই গ্রামের নূর মোহাম্মদের ছেলে। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়। এ নিয়ে গত ৫ দিনে রাজশাহী অঞ্চলে ২১ জনের বেশি সক্রিয় জঙ্গী সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের ভাষ্য, এরা সবাই নিষিদ্ধ সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীনের সক্রিয় সদস্য। নিজ নিজ এলাকায় তারা গোপনে তৎপরতা চালাচ্ছিল। বাগমারা থানার ওসি নাছিম আহমেদ জানান, সর্বশেষ গ্রেফতার আবদুর রাজ্জাক নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) তালিকাভুক্ত সদস্য। জঙ্গীবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়েছে। জেএমবি সদস্য আবদুর রাজ্জাকের নামে বাগমারা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলা রয়েছে। এদিকে জঙ্গী অধ্যুষিত রাজশাহী অঞ্চলে গত ১০ বছর ধরে জেএমবির কোন হাল নাগাদ তালিকা নেই পুলিশের কাছে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তৈরি করা জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) তালিকাই রয়েছে পুলিশের কাছে। ওই তালিকা অনুযায়ী রাজশাহী অঞ্চলে চলছে জঙ্গীবিরোধী অভিযান। বর্তমানে রাজশাহী অঞ্চলে কত সংখ্যক জঙ্গী রয়েছে এর কোন পরিসংখ্যান নেই পুলিশের কাছে। তবে এই তালিকাভুক্ত জেএমবির অনেক জঙ্গী এখন জামিনে মুক্ত। এরাই নতুন করে তৎপর হচ্ছে এমন খবরে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। পুলিশ বলছে, এদের গতিবিধি নজরে রাখা হচ্ছে। তাদের বিষয়ে প্রাত্যহিক খোঁজ খবর নেয় পুলিশ। যারা জামিনে বেরিয়ে এসেছেন তাদের বিষয়েও প্রতিদিন খোঁজখবর নেয়া হয়। পুলিশের ভাষ্যমতে, গত এক সপ্তাহ ধরে রাজশাহী অঞ্চলে চলছে জঙ্গীবিরোধী পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান। এ অভিযানে এখন পর্যন্ত রাজশাহী, নওগাঁ ও নাটোরে প্রায় ২০ জনের বেশি জঙ্গী গ্রেফতার হয়েছে। এদের বেশিরভাগ জেএমবির শীর্ষ নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাইয়ের সহযোগী। বাগমারা থানার ওসি নাছিম আহমেদ বলেন, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তৈরি করা জঙ্গীদের তালিকা আমাদের হাতে রয়েছে। এটি কবে করা হয়েছে তা জানি না। এই তালিকা অনুযায়ীই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে এটি শীঘ্রই হালনাগাদ করা হতে পারে। তিনি বলেন, বাগমারা থানায় জেএমবির যে তালিকা রয়েছে তাতে অধিকাংশ জঙ্গী জামিনে মুক্ত রয়েছে। তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। রাজশাহী জেলা পুলিশের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে জেএমবির কোন হাল নাগাদ তালিকা নেই। পুরনো তালিকা ধরেই কার্যক্রম চলছে। পত্র-পত্রিকায় জেএমবি সংগঠিত হওয়ার খবর তারা পাচ্ছেন। তবে হালনাগাদ তালিকা না হওয়ার কারণে নতুন জেএমবির কোন তালিকা তাদের কাছে নেই। রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঞা বলেন, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তৈরি করা তালিকা ধরে পুলিশের অভিযান চলছে। পুলিশের তথ্যমতে, চলতি মার্চ মাসের শুরু থেকে রাজশাহী অঞ্চলে শুরু হয়েছে জঙ্গীবিরোধী অভিযান। আর এ অভিযানে বুধবার পর্যন্ত রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁয় প্রায় ২১ জঙ্গী গ্রেফতার হয়। এর মধ্যে রাজশাহী জেলায় ১৬ জন, নাটোরে ২ জন ও নওগাঁয় ৩ জন। প্রসঙ্গত, রাজশাহী অঞ্চলের চার জেলায় ২০০৪ সালের দিকে জঙ্গী অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত হয়। ওই সময় মূলত রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁর বিভিন্ন এলাকায় গোপন আস্তানা গড়ে তুলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। বাংলাভাইয়ের নেতৃত্বে জেএমবির সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু হয় এ অঞ্চলে।
×