ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ‘ফিল্টার’ শিল্প

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১৫ মার্চ ২০১৭

হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ‘ফিল্টার’ শিল্প

শংকর পাল চৌধুরী, মাধবপুর, হবিগঞ্জ থেকে ॥ খাবার পানিকে ঠা-া ও বিশুদ্ধ রাখতে বেশ জনপ্রিয় ছিল ‘ফিল্টার’। এ শিল্পের জন্য এক সময় বিখ্যাত ছিল মাধবপুর। মূলত ধানের তুষ, সিমেন্ট ও বালি দিয়ে তৈরি হতো এ ফিল্টার। পরবর্তী সময়ে এতে মুজায়িক পাথর লাগানো হয়। দামে সস্তা, মানে উন্নত বলে দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশে ফিল্টার রফতানি শুরু হয়। মাধবপুরে তৈরি ফিল্টার রফতানি করা হতো ভারত, পাকিস্তানসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। কিন্তু বর্তমানে স্টিল ও এ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি ফিল্টার বাজারে সয়লাব হয়ে গেছে। একই সঙ্গে কালের বিবর্তনে আজ বিলুপ্ত হতে চলেছে ফিল্টার শিল্পের খ্যাতি। উপজেলার অমিত ফিল্টারের মালিক পরিতোষ রায় জনকণ্ঠকে জানান, ১৯৪৭ সালে সর্বপ্রথম মৃত হীরালাল রায় এ ফিল্টার আবিষ্কার করেন। কোন এক সময় এ শিল্পের জন্য মাধবপুর এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বিখ্যাত ছিল বলে জানা যায়। খাবার পানিকে ঠা-া ও বিশুদ্ধ রাখতে বেশ কার্যকর এ বিশেষ ধরনের ফিল্টার, ধানের তুষ, সিমেন্ট ও বালি ইত্যাদি দিয়ে তৈরি। বর্তমানে এতে মুজায়িক পাথরও লাগানো হচ্ছে। দামে সস্তা, মানে উন্নত বলে দ্রুত দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশেও এ ফিল্টার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। একসময় রফতানি হতো ভারত, পাকিস্তানসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। বর্তমান স্টিল ও এ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি ফিল্টার বাজারে সয়লাব। মাধবপুরের ফিল্টার এখন প্রায় উঠে যেতে বসেছে। এছাড়া ফিল্টার তৈরিতে খরচ বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় অনেক ব্যবসায়ীরা ভিন্ন ব্যবসায় মনোনিবেশ করেছেন। ফলে একদিকে যেমন কমেছে কদর ও অন্যদিকে বিলুপ্তির পথে সম্ভাবনাময় ফিল্টার শিল্প। জানা যায়, মাধবপুর উপজেলায় এখনও ছোট বড় ২৬টি কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় কমপক্ষে ৩ শতাধিক লোক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এদের বেশির ভাগই নারী শ্রমিক। দিন দিন এ শিল্পের অবনতি দেখে ভিন্ন পেশায় চলে যাচ্ছেন শ্রমিকরা। সরেজমিনে কয়েকটি কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, কাঁচামালের মূল্য উর্ধগতি ও চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে মালিকদের বেশির ভাগই এ পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। যারা এখনও এ পেশায় জড়িত তারাও হিমশিম খাচ্ছেন। প্রদীপ ফিল্টার হাউসের মালিক প্রদীপ রায় জনকণ্ঠকে জানান, ফিল্টারের উপকরণ যেমন- সিমেন্ট, বালু ও পালিশের দাম যেভাবে বাড়ছে তেমনিভাবে কমছে ফিল্টার বিক্রির চাহিদা তাতে ব্যবসা চালানো খুব কষ্টকর। পপুলার ফিল্টার হাউজের মালিক প্রণব রায় জনকণ্ঠ জানান, ২০ বছর ধরে ফিল্টার তৈরি করছি। একটি ফিল্টার ৬০০ থেকে ২০০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। এখন চাহিদা কম, শ্রমিক সঙ্কট ও খরচ বেশি হওয়ায় ফিল্টার উৎপাদন অনেক হ্রাস পেয়েছে। সরকার দেশীয় এ শিল্পকে ধরে রাখার উদ্যোগ নিলে দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশে রফতানি করে অর্থনীতিও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের অভিমত।
×