ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে আলোচনা

সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৯ মার্চ ২০১৭

সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে

সংসদ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী-এমপিরা সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার ওপর জোর দিয়ে বলেছেন, আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংবিধানের বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও নেই। সংবিধান অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারাবাহিকতা রক্ষায় দেশের মানুষ আবারও শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করে অগ্নিসন্ত্রাসী খালেদা জিয়ার দুষ্কর্মের জবাব দেবে। বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় তারা এসব কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, হুইপ মাহবুব আরা গিনি, সরকারী দলের ছবি বিশ্বাস, বেগম মাহজাবিন খালেদ, পংকজ দেবনাথ, তাজুল ইসলাম, গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস, জেবুন্নেসা হক, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আবদুল মতিন, ওয়ার্কার্স পার্টির মোস্তফা লুৎফুল্লা, বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙা, আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, স্বাধীনতার মহানায়ক হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু আর উন্নয়ন-অগ্রগতির মহানায়ক হচ্ছেন তার কন্যা শেখ হাসিনা। ১৯ বার মৃত্যুকে জয় করে শেখ হাসিনা দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। এখনও তাকে বুলেট তাড়া করছে। ২১টি বছর শেখ হাসিনা পিতৃহত্যার বিচার পাননি। প্রচলিত আইনেই বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার হয়েছে, রায়ও কার্যকর হয়েছে। ড. ইউনূসের সমালোচনা করে তিনি বলেন, একজনকে ঠকিয়ে এই ব্যক্তিকে গ্রামীণফোনের লাইসেন্স দেয়া ছিল আমাদের বড় ভুল। এখান থেকে টাকা নিয়ে দেশকে তিনি প্রতিদিন ঠকিয়ে যাচ্ছেন। এদের মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচন হয়ে গেছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের সমালোচনা করে তিনি বলেন, একজন রাজনৈতিক নেত্রী (খালেদা জিয়া) কোনদিন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের ব্যাপারে কোন কথা বলেননি, বরং আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া ছাড়াও খুনীদের পক্ষে হরতাল দিয়েছিলেন। শত ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর হয়েছে। অন্ধকার দেশ এখন আলোকিত বাংলাদেশ। দেশের উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রাখতে হলে সরকারের ধারাবাহিকতা রাখতে হবে। জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য শেখ হাসিনাকে আবারও ক্ষমতায় রাখতে হবে। উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন, একাত্তরের শত্রুরা ছিল প্রকাশ্য। এখন খালেদা জিয়া দেশের শত্রু। এদের সঙ্গে কোন আপোস হতে পারে না। এরা পাকিস্তানের দোসর, স্বাধীনতাবিরোধী। তিনি বলেন, সংবিধানের বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা শেখ হাসিনারও নেই। তার অধীনে সঠিক সময়েই আগামী নির্বাচন হবে, সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। নির্বাচনের মাঠে খালেদা জিয়ার সঙ্গে খেলতে চাই এবং পরাজিত করতে চাই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সত্যিকারভাবেই দেশকে বদলে দিয়েছেন। খাদ্যের ঘাটতির দেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিদ্যুতের কোন অভাব নেই। দেশের জঙ্গীবাদ মূলোৎপাটন করতে সরকার বন্ধপরিকর। দেশ ও সরকারকে বিপর্যস্ত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে ভয়াবহ জঙ্গী হামলা করা হয়েছিল। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর হস্তে ষড়যন্ত্র দমন করেছে। জঙ্গীবাদ মূলোৎপাটন করতে না পারলেও তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৫০ হাজার পুলিশ সদস্য নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। দেশের মানুষ সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ চায় না, উন্নয়ন-অগ্রগতির বাংলাদেশ চায়। জনতা জেগে গেলে কোন অপশক্তিই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না তা প্রমাণ হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙা বলেন, বাংলাদেশ আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়, উপচে পড়া দেশ। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি দেখে বিস্মিত বিশ্বনেতারা বাংলাদেশের কাছে কারণ জানতে চান। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যিনি কথিত একটি ব্যাংক থেকে ৪০ ভাগ সুদ নিয়ে গরিব মানুষকে চুষে খেয়েছেন, তার পক্ষে কেউ সাফাই গাইলে কষ্ট লাগে। আন্দোলনের নামে খালেদা জিয়ারা ১৯০ শ্রমিককে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন। ওয়ার্কার্স পার্টির মোস্তফা লুৎফুল্লা পাঠ্যপুস্তকে হেফাজতীকরণের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, একাত্তরের গণহত্যার কথা লিখেছিলেন বলে পাঠ্যপুস্তক থেকে নরেশ দাসগুপ্তের লেখা ‘মাল্যদান’ বাদ দেয়া হয়েছে। স্বাধীনতা, পতাকা, মুক্তিযুদ্ধের ভাবাদর্শ ধ্বংসকারী হেফাজতীদের সঙ্গে কোন ধরনের আপোস হবে ভয়ঙ্কর, আত্মঘাতী। হুইপ মাহবুব আরা গিনি বলেন, সুদখোর ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুধু ৪০ ভাগ সুদই নেননি, সুদ দিতে না পেরে অনেক গরিব মানুষ আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছে। পংকজ দেবনাথ বলেন, দুর্নীতির বরপুত্র ও জঙ্গীবাদের পৃষ্ঠপোষকরা দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নের বুকে পেছন থেকে ছুরি মারার চেষ্টা করছে। এসব ষড়যন্ত্রকারীকে মোকাবেলা এবং জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের কঠোরহস্তে দমন করেই দেশ উন্নয়নের মহাসড়কের দিকে এগিয়ে যাবেই। সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফের কন্যা বেগম মাহজাবিন খালেদ বলেন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধার নামে ছিলেন পাকিস্তানের আইএসএসের এজেন্ট। স্বাধীনতাবিরোধীদের পক্ষ নিয়ে জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অসংখ্য সেনা কর্মকর্তা, সৈনিক ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে বিনা বিচারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে। জিয়ার এমন বর্বোরচিত হত্যাকা-ের বিচার হয়নি। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে জিয়ার মরণোত্তর বিচার দাবি করছি। খালেদা জিয়াও তার স্বামীর পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন। সরকারী দলের তাজুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত জিয়াউর রহমান। সামরিক উর্দি পরে বিএনপিকে জন্ম দিয়েছেন তিনি। এরশাদকে স্বৈরাচার বলা হলে জিয়াউর রহমানকে বলা হবে না কেন? বোমাবাজ, জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের নিয়ে বিএনপি আবার কোন নাশকতার চেষ্টা করলে জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবেই তা মোকাবেলা করবে।
×