ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তর আমেরিকায় ইহুদী সেন্টারে বোমাতঙ্ক

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ৪ মার্চ ২০১৭

উত্তর আমেরিকায় ইহুদী সেন্টারে বোমাতঙ্ক

জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৩৩ অঙ্গরাজ্য এবং কানাডার দুটি প্রদেশের শতাধিক ইহুদী কমিউনিটি সেন্টারে বোমা হামলার হুমকি দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে সর্বস্তরে আতঙ্ক বিরাজ করছে। খবর সিএনএন অনলাইনের। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো মনে করছে, যে এসব হুমকির বেশিরভাগই দেশের বাইরে থেকে আসা ফোন কল এবং এ পর্যন্ত কোন হুমকিই বাস্তবায়িত হয়নি। তবে অভিজ্ঞ ও সচেতন মহলের ধারণা, বোমা হামলার বিধ্বংসী রূপের চেয়ে এই হুমকি কম আতঙ্ক বা দুশ্চিন্তার নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যের জুইশ কমিউনিটি সেন্টারের (জেসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ষাট বছরেরও বেশি সময় ধরে তার পরিচালনাধীন এই প্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যেই তিনবার বোমা হামলার হুমকি দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি এই বোমা আতঙ্কের সঙ্গে যোগ হয়েছে ইহুদী সমাধি ক্ষেত্রে সুপরিকল্পিত হামলা এর মধ্যে সেন্ট লুইস ও ফিলাডেলফিয়ার ইহুদী সমাধি ক্ষেত্রে তা-ব চালানো হয়। এ সময় ইহুদীদের কবরগুলো তছনছ করে নাম ফলকগুলো ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। জেসিসিগুলোতে এসব হামলার দরুন শুধু যে, ইহুদীরাই আতঙ্কিত বা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা নয়। এসব কমিউনিটি সেন্টারে যারা ইহুদী নয় তারাও ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের জন্য ভীত। তাই এসব স্থানে বোমা হামলার হুমকি দেয়া হলে তাদের মধ্যেও চরম আতঙ্ক বিরাজ করে। নিউইয়র্কের প্লেইন ভিউতে মিড আইল্যান্ড জেসিসির প্রধান নির্বাহী রিক লুইস বলেছেন, এসব হুমকির ফলে তিনি ব্যক্তিগতভাবে এবং পেশাগত জীবনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কেননা, তিনি আড়াই শ’ শিশু নিয়ে একটি নার্সারি স্কুল পরিচালনা করেন এবং যে কোন দুর্ঘটনার জন্য তিনি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন না। সম্প্রতি অরল্যান্ডো ও ফ্লোরিডায় দুটি জেসিসিতে বোমা হামলার হুমকি দেয়া হলে ভয়াবহ আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। বাবা-মা ও স্কুল কর্তৃপক্ষ দিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য হয়ে তাদের সন্তানদের টেনেহিঁচড়ে স্কুল থেকে বের করে আনেন। নিউইয়র্কের এ্যালবানি থেকে ১২ পরিবার তাদের সন্তানদের স্কুল থেকে ছাড়িয়ে আনেন। সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহে এ ধরনের অসংখ্য বোমা হামলার হুমকি সারা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জেসিসিতে দেয়া হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে কমিউনিটিভুক্ত মানুষের দৈনন্দিন জীবন চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ত্যক্ত বিরক্ত ভুক্তভোগী মানুষ ফেডারেল সরকারের অযোগ্যতার অভিযোগ তুলে তাদের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করছে। আবার অনেকের মনে প্রশ্ন এটি সে দেশে নতুন করে ইহুদী বিদ্বেষ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার পূর্ব লক্ষণ কি না। এ বিষয়ে এফবিআইয়ের বক্তব্য হচ্ছে, জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের মানবাধিকার বিভাগ এসব হুমকি মানবাধিকারের পরিপন্থী কি না তা তদন্ত করে দেখছে। তবে এ বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে বিস্তারিত আর কিছু জানানো হয়নি। এগুলো কি শুধুই হুমকি না এর পেছনে কোন শক্তিশালী চক্র আছেÑ একক কোন ব্যক্তি এর সঙ্গে জড়িত বা বহু লোকের প্রয়াসÑ তার কোন জবাব মেলেনি এফবিআই তদন্তে। তাই উত্তর আমেরিকা জেসিসি সংস্থা সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়ে বলেছে, তাদের কমিউনিটির বিরুদ্ধে এ ধরনের ইহুদীবিরোধী তৎপরতা কোন ক্রমেই মেনে নেয়া যায় না। এ বিষয়ে তারা জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, এফবিআই, হোয়াইট হাউস, কংগ্রেস ও স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবি করেছে। বিগত কয়েক সপ্তাহে অবস্থা এতটাই নাজুক হয়ে পড়েছে যে, মুসলমানদের প্রতি ঘৃণার আগুন উস্কে দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইলের পক্ষাবলম্বন করে ক্ষমতায় আসেনÑ তিনিই কংগ্রেসের দেয়া তার প্রথম ভাষণে বলেন, আমাদের সব ধরনের ঘৃণা ও বিদ্বেষের প্রতি নিন্দা জানাতে হবে। এ সময় তিনি কানসাসে দুই ভারতীয়কে গুলি করার ঘটনার কথা উল্লেখ করেনÑ যাদের একজন ঘটনাস্থলেই মারা যায়। উল্লেখ্য করা যেতে পারে, হামলাকারী গুলি করার সময় সেøাগান দিয়েছিল ‘আমার দেশ থেকে বিদায় হও।’
×