ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিমানের দায়ের করা ‘চেক ডিজঅনার’ মামলায় পলাতক সিনিয়র পাইলট

প্রকাশিত: ০৮:৫০, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বিমানের দায়ের করা ‘চেক ডিজঅনার’ মামলায় পলাতক সিনিয়র পাইলট

আজাদ সুলায়মান ॥ বিমানের দায়ের করা ‘চেক ডিজঅনার’ এর মামলায় এক সিনিয়র পাইলট পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া পাইলট আলী আশরাফ খান অভিযোগ করেন, চুক্তির শর্তভঙ্গ করে বিমান এই অযৌক্তিক মামলা করেছে। তার বিরুদ্ধে আরও মামলার হুমকি দেয়া হচ্ছে। এ কারণে জামিন নিয়েও তিনি ভয়ে পলাতক রয়েছেন। বিমান চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল ইনামুল বারি জানিয়েছেন, এ ধরনের মামলার কথা তার জানা নেই। তিনি বিষয়টি খোঁজ করে দেখবেন বলে জনকণ্ঠকে জানান। আশরাফ খান অভিযোগ করেন, বিমানের পাইলটদের দলাদলি ও নোংরা রাজনীতির শিকার হয়েছেন তিনি। বিমানের শীর্ষ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও পর্ষদের কাছে আবেদন করেও তিনি কোন প্রতিকার পাননি। তিনি বলেন, এটিপি থেকে বোয়িং ট্রিপল সেভেন পর্যন্ত সব ধরনের উড়োজাহাজই আমি চালিয়েছি। প্রায় ১৯ হাজার ঘণ্টা ফ্লাই করলেও ছিল না কোন দুর্ঘটনা। রয়েছে পেশাদার বৈমানিকের সুনাম। যে কারণে ৫৭ বছর চাকরি শেষ হবার পরও বিমানের স্বার্থেই আমাকে ডেকে নিয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের পরও আমি ২৭০ ঘণ্টা উড্ডয়ন করেছি। এ অবস্থায় হঠাৎ আমার বাসায় পুলিশ হানা দিলে আমি জানতে পারি মামলার কথা। পরদিন আদালত থেকে জামিন নেই। আরও মামলায় জড়ানোর হুমকি দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ৫ জুলাই বিমান আমাকে এক বছরের চুক্তিতে নিয়োগ দেয়। বিমানের সঙ্গে নবায়নযোগ্য এই চুক্তির শর্ত ছিল নিজের টাকায় সিঙ্গাপুরে গিয়ে সিমুলেটর (বোয়িং ৭৭৭ চালানোর জন্য বাধ্যতামূলক ট্রেনিং) করে আসতে হবে। ট্রেনিংয়ের সময় আপাতত বিমান এ টাকা পরিশোধ করবে। পরে কাজে যোগ দেবার পর তার বেতন থেকে মাসিক কিস্তিতে এ টাকা কেটে রাখা হবে। এ জন্য বিমান তার কাছ থেকে পঁচিশ লাখ টাকার একটা ব্ল্যাঙ্ক চেক লিখিয়ে নেয়। সেই চেক ক্যাশ করার জন্য দু্িট শর্ত থাকে। প্রথমত: আমি যদি ইনিশিয়াল সিমুূলেটরে ফেল করি এবং দ্বিতীয়ত: যদি চাকরিতে যোগ দেয়ার পর এক বছরের আগেই তা ছেড়ে দেই তবেই কেবল বিমান এই চেক ব্যাংকে জমা দিয়ে ২৫ লাখ টাকা তুলে নিতে পারবে। আমি কোন শর্তই ভঙ্গ করি নাই। পরীক্ষায় ফেল করিনি। চাকরিও ছাড়িনি। অথচ আমার নামে আদালতে গিয়ে ২৫ লাখ টাকার চেক ডিজঅনার মামলা দায়ের করেছে বিমান। এই ঘটনার প্রতিকার চেয়ে আমি নিয়মানুযায়ী কোম্পানি সেক্রেটারির কাছেই বোর্ড মেম্বারদের নামে চিঠি দেই। সেক্রেটারি চিঠিগুলো বোর্ড মেম্বারদের কাছে জমা দেননি। মামলার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিমান প্রশাসন শাখার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার সর্তে জনকণ্ঠকে জানায়, প্রথম কারণ হচ্ছে পাইলটদের সংগঠন বাপার বর্তমান নেতৃবৃন্দ কেউই চায় না আলী আশরাফ খানের মতো টপ মোস্ট সিনিয়র কোন পাইলট বিমানে চুক্তিভিক্তিক চাকরি করুক। তাকে এ ধরনের অভিযোগে হেনস্থা করে বিমান থেকে বের করে দিতে পারলে চুক্তিতে থাকা অন্য পাইলটদেরও বের করা যাবে। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে এই আলী আশরাফ খান ২০১০ সালে বাপার সভাপতি থাকার সময় তার প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত কয়েকজন পাইলট হঠাৎ করে ধর্মঘট ডেকে বিমান অচল করে দেয়। তখন ছিল হজের মওসুম। হজকে জিম্মি রেখে যারা পাইলট ধর্মঘটে অংশ নেয় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন আলী আশরাফ খান। বিষয়টি তখন প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত গড়ায়। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দু’পক্ষকে ডেকে এ ধর্মঘট প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তখন থেকেই এ গ্রুপটি তার প্রতি প্রতিশোধ নেয়ার অপেক্ষায় ছিল। বিমানের বর্তমান পর্ষদ দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই পাইলটদের ওই গ্রুপ শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং প্রতিশোধ হিসেবে তার নামে এই মামলা দায়ের করা হয়। এ কারণেই আলী আশরাফ খান্ বিমানের শীর্ষ মহলের কাছে বার বার আবেদন নিবেদন করেও সুবিচার পাননি। বিমানের চেয়ারম্যান এয়ারমার্শাল ইনামুল বারির কাছে জানতে চাইলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, মাস তিনেক আগে আলী আশরাফ খান আমার কাছে এসেছিলেন। বেতন ভাতাদি নিয়ে একটা ঝামেলা হয়েছিল্। এটা এতদিনে মিটমাট হয়ে যাবার কথা। কেন হয়নি তা দেখতে হবে। মামলা দায়ের ও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কিছুটা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, বিমান তাহলে এতদিনে মামলা মোকদ্দমায় এত ফাস্ট হয়ে গেছে। এক প্রশ্নের জবাবে এয়ারমার্শাল ইনামুল বারি বলেন, রিকারেন্ট পরীক্ষায় ফেল করলে তো তাকে আর বিমান নিজের পয়সা দিয়ে ট্রেনিং করাবে না। এসব বিষয় ফাইলপত্র দেখে বলতে হবে। ্উভয়পক্ষের কথাই শুনতে হবে।
×