ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

আজ বাংলাদেশ ভারত লড়াই শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আজ বাংলাদেশ ভারত লড়াই শুরু

মিথুন আশরাফ, হায়দরাবাদ থেকে ॥ বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম ও প্রধান কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে দুপুরে অনুশীলনের আগে উইকেট দেখে গভীর আলোচনায় ব্যস্ত। ঠিক একই দৃশ্য সকালেও ঘটল। ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও কোচ অনীল কুম্বলেও উইকেট দেখে গভীর আলোচনা করছেন। বোঝাই যাচ্ছে, হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আজ শুরু হতে যাওয়া বাংলাদেশ-ভারত ‘ঐতিহাসিক’ টেস্টে উইকেট অনেক বড় ভূমিকা নিয়ে হাজির হচ্ছেন। আর সেই উইকেট দেখেই টেস্ট শুরুর একদিন আগে বুধবার দুইদলের অধিনায়ক ও কোচ বিশদ ভাবনায় পড়েছেন। কিন্তু কেন এই ভাবনা? সবারই তো জানা, স্টেডিয়ামের উইকেট ব্যাটিং ও স্পিননির্ভর। আসলে দুইদলই ভাবনায় আছে একাদশ গঠন নিয়ে। প্রথম দুইদিন পেসাররাও উইকেট থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা পাবেন। দুইদিন পর গিয়ে স্পিনাররা ম্যাচের ভাগ্য বদলে দেবেন। রিভার্স সুইং করতে পারা বোলারেরই দাপট থাকবে প্রথম দুইদিন। আর তাতে পেসার বেশি খেলানো হবে, না ব্যাটসম্যান; এ নিয়েই চলছে সেশন। স্পিনার তো দুইদলেরই শক্তি। সেখানে কোন কাটাছেঁড়া হওয়ার সম্ভাবনাই নেই। আর তাতে মুস্তাফিজুর রহমানের অভাববোধ ভালভাবেই মিলছে। তিনি সুইংটা ভালই করাতে পারেন। তিনি ছাড়া এখন দলে সুইং করানোর মতো পেসার যে নেই। আর তাই স্পিনারের সংখ্যা বাড়িয়ে পেসার একজন নিয়ে খেলতে নামতেও পারে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশের ভাবনার চেয়ে বোধহয় ভারতের চিন্তাটাই বেশি। তাদের সুইং করানোর মতো পেসার একাধিক। পেসার ও স্পিনার, দুইদিকের আধিক্য নিয়ে একাদশ গঠন করবে ভারত, না পেসার একজন কমিয়ে স্পিনার মজবুত রেখে ব্যাটিংটা শক্তিশালী করা হবে? সেই চিন্তায় মশগুল তারা। বাংলাদেশের এত চিন্তা-ভাবনা নেই। পেসার দুইয়ের অধিক খেলানোর সুযোগই নেই। আবার ভাবনায় এক পেসারও আছে। ইমরুল কায়েস আবারও ইনজুরিতে পড়ে দল থেকে ছিটকে পড়ায় শুরুতে তামিম ইকবালের সঙ্গী হচ্ছেন সৌম্য সরকার। সৌম্যকে দিয়ে পেসটাও চালানোর ভাবনা আছে। এরপর মুমিনুল হক রয়েছেন। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এখন যতই অফফর্মে থাকুন, অভিজ্ঞতার জোরে একাদশে থাকছেন। তারপর সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম আছেন। মুশফিক ব্যাটিং করতে পারা ও দলকে নেতৃত্ব দিতে পারলেও উইকেটরক্ষকের ভূমিকায় থাকতে পারবেন না। আর তাই যতদূর জানা গেছে, লিটন কুমার দাসের একাদশে থাকা নিশ্চিত। ব্যাটিংয়ে জোর দেয়ায় সাব্বির রহমান রুম্মনও থাকছেন। স্পেশালিস্ট স্পিনার হিসেবে মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম, দুইজনই খেলতে পারেন। তাহলে একজন পেসার নিয়েই নামবে বাংলাদেশ দল। সেটি খানিক বেশি অভিজ্ঞতার জোরে কামরুল ইসলাম রাব্বিও হতে পারেন, আবার তাসকিন আহমেদও হতে পারেন। বুধবার দুপুরে অনুশীলনের আগে রাব্বিকে একটু বেশিই হাস্যোজ্জ্বল মনে হলো। তিনি আবার বিরাট কোহলির উইকেট শিকার করার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করে আছেন। এমন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ পেসারই শেষ পর্যন্ত সুযোগ করে নিতে পারেন। ভাগ্যবান হয়ে উঠতে পারেন। তবে সবার মাথাতেই যেন কাজ করছে কে হয়ে উঠতে পারবেন ব্যাটিংয়ে আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও বোলিংয়ে নাঈমুর রহমান দুর্জয়। ২০০০ সালে বাংলাদেশ যখন ইতিহাসের প্রথম টেস্ট খেলে, প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। যে ভারত ১৬ বছর পর বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো নিজ দেশে টেস্ট খেলতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সেই ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে উজ্জ্বল নৈপুণ্য দেখিয়েছিলেন সাবেক অধিনায়ক ব্যাটসম্যান বুলবুল ও প্রথম টেস্টের অধিনায়ক স্পিনার দুর্জয়। বাংলাদেশেরই প্রথম টেস্ট, তাই নিজের জীবনেরও প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসেই ৫৩৫ মিনিট খেলে ১৪৫ রানের জলজ্যান্ত ইনিংস খেলেছিলেন বুলবুল। দলও তাই ৪০০ রানের ওপরে করেছিল। এরপর ভারতের প্রথম ইনিংসেই ৬ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন দুর্জয়। ২০০০ সালের ১০ নবেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট শুরুর আগে বুলবুল বলেছিলেন, ‘বড় ইনিংস খেলতে চাই।’ তিনি তার কথা রেখেছিলেন। দুর্জয় বলেছিলেন, ‘দেশের মানুষের প্রত্যাশা মেটাতে চাই।’ তিনিও তার কথা রেখেছিলেন। এবার বুলবুল ও দুর্জয় কে হতে পারবেন? ব্যাটিংয়ে তামিম, সাকিব, মুশফিকের দিকেই সবার দৃষ্টি। এ তিনজন ভাল ব্যাটিং করতে পারলে এখন পর্যন্ত যে ৮ টেস্ট খেলে ৬টিতেই ভারতের বিপক্ষে হার হয়েছে, দুটি বৃষ্টির সুবাদে ড্র হয়েছে, এবার লড়াই করেই অন্তত ড্র ফল আনা যাবে। এরপর দুর্জয় হওয়ার জন্য নজরে রয়েছেন সাকিব ও মিরাজ। এ দুইজনের ওপরই বোলিংয়ের ভরসা রয়েছে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত তারা কি করতে পারেন। তামিম ইকবাল অনুশীলন শুরুর আগে অল্প সময়ের কথোপকথনে বললেন, ‘দোয়া করবেন যেন শতক করতে পারি।’ সাকিব আল হাসান জানালেন, ‘বিশেষ কিছু করার ইচ্ছাই আছে।’ মুশফিকুর রহীম জানালেন, ‘এমন কিছু করতে চাই, যেন ভারত বারবার আমাদের আমন্ত্রণ জানায়।’ আর মিরাজ বলেছেন, ‘সর্বোচ্চ কিছু করার চেষ্টাই থাকবে।’ এই চার ক্রিকেটার যদি সত্যিই নিজেদের কথামতো কাজ করতে পারেন, তাহলে বাংলাদেশ ‘ঐতিহাসিক’ টেস্ট থেকে ভালই কিছুই অর্জন করতে পারবে। ভারত টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল হয়েও তখন বিপাকে পড়বে। তবে বিপদ ঘনিয়েও আসতে পারে, যদি ব্যাটিংয়ে বিরাট কোহলি ও বোলিংয়ে স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে নিয়ন্ত্রণ করা না যায়। মুশফিক তো আবার আরও কিছু বলছেন, ‘দুইজন শুধু নয়, ভারতের পুরো দলই হুমকি।’ এ হুমকি উল্টো প্রবাহিত হলেই হয়, মুশফিক, তামিম, সাকিব, মিরাজরা এখন আতঙ্ক হয়ে ধরা দিতে পারলেই হয়। বাংলাদেশের প্রথম টেস্টের মতো আজ শুরু হতে যাওয়া ‘ঐতিহাসিক’ টেস্টটিও তাহলে স্মরণীয় হয়েই থাকবে।
×