ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আকিল জামান ইনু

চীন-মার্কিন বাণিজ্য দ্বৈরথ

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

চীন-মার্কিন বাণিজ্য দ্বৈরথ

চায়নার অর্থনীতির আয়তন গত বছর বৃদ্ধি পেয়েছে ৬.৭% বলে দাবি সরকারের। কিন্তু তারপরও জিডিপি গত ২৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর কারণ হিসেবে ভাবা হচ্ছে-ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা মোতাবেক আসন্ন চীন-আমেরিকা বাণিজ্য সংঘাত। বছরের প্রথম ভাগে চায়নার অর্থনীতির বৃদ্ধি ছিল ৬.৮% কিন্তু বার্ষিক জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬.৭% বলে জানায় চায়নার সরকারী সূত্র। ১৯৯০ এরপর থেকে যা সবচেয়ে কম। তারপরও তথ্যের বিশ্বস্ততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা। গত কয়েক বছর ধরেই তারা সন্দেহ করছেন সরকারী এই তথ্য কেবল দেশের নাগরিকদের প্রভাবিতকরনে ব্যবহার করা হচ্ছে। যার সত্যতা প্রশ্নসাপেক্ষ। উত্তর-পূর্ব চায়নার ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিয়াওনিং প্রভিন্সের গবর্নর জানান, এই প্রবৃদ্ধি কেবল ২০১১-১৪ পর্যন্ত কাগজ-কলমে সংখ্যা বৃদ্ধিতেই সীমাবদ্ধ। তবে সরকার নির্ধারিত সম্ভাব্য বৃদ্ধি ৬.৫-৭% ধরলে ৬.৭% কে খুব একটা খারাপ বলার উপায় নেই। কিন্তু সমস্যা অন্যত্র। তথ্যের বিশ্বস্ততা। চায়নার অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ জুলিয়ান ইভান্স তার গবেষণালব্ধ তথ্যে জানান, চায়না যদি তারা ত্রৈমাসিক প্রবৃদ্ধি ৬.৭% হারে ধরে রাখতে পারে তবে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির জন্য তা হবে একটা বড় অর্জন এবং এই ধারাবাহিকতা নিরসন করবে সব সন্দেহের। চায়নার জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো দাবি করছে তাদের তথ্য সঠিক এবং বিশ্বাসযোগ্য। চায়নার অর্থনীতির জন্য ২০১৬ ছিল কঠিন সময়। অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করেছিলেন মুখ থুবড়ে পড়বে তা। বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা বেরিয়ে গেছে রিজার্ভ থেকে। তবে অনেকেই বলছেন কঠিন সময় পাড়ি দেয়া চায়নার জন্য জিডিপির অর্জন এক ধরনের সাফল্য। অন্তত সন্দেহবাদীদের জন্য তা চমৎকার উত্তর। হেলেন জু, ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং চায়না ইকুইটিস এট ব্ল্যাকরকের প্রধান সিএনবিসিকে জানান, আমার ধারণা এই উপাত্ত সঠিক। এক বছর আগে চায়নার বাজার ব্যবস্থা ছিল প্রশ্নের মুখে অন্তত ২০১৬ সালের জন্য। যে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে এবং অনেকের ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত করে ২০১৬ ছিল সাফল্যের বছর। ক্যামেল মেলাহি। ওয়্যার উইক বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক হেলেন জুকে সমর্থন করে বলেন, চায়নার নীতি নির্ধারকরা নতুন জীবন ফিরে পাবেন এ তথ্য থেকে। চায়নার অর্থনীতি জেগে উঠেছে আবার তা সত্ত্বেও এ থেকে নিশ্চিত কোন সিদ্ধান্তে আসার উপায় নেই। চায়নার অর্থনীতি সব সময়ই আশঙ্কা নিয়ে পথ পাড়ি দিয়েছে। তারপরও ২০১৬-এর সাফল্য ২০১৭-এর অর্থনীতিকে ইতিবাচকভাবেই প্রভাবিত করবে বলে বিশ্বাস, বা আসন্ন বাণিজ্য যুদ্ধে চায়নাকে এগিয়ে রাখবে। ট্রাম্প ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছেন চায়নার সঙ্গে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি যে কোন মূল্যে কমানোর। তার ভাষায় এই ঘাটতি আর নিজ দেশের অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তিনি এমনকি চাইনিজ পণ্যের ওপর ৪৫% শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। বিপরীতে চায়না সরকার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছে। যদিও দু’পক্ষের কেউই তাদের বাণিজ্য পরিকল্পনার কথা স্পষ্ট জানায়নি। ক্যামেল মেলাহির ধারণা এই অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আর তা ছাপ ফেলবে চীন-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্কে। তার ধারণা যত গর্জে তত বর্ষে না। চায়নার দিক থেকে আপাতত কঠোর কোন ব্যবস্থা নেয়ার সম্ভাবনা নেই। চায়না খুঁজছে চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ এড়ানোর একটি সম্মানজনক সমাধান সূত্র। মেলাহি আরও বলেন এই সমাধান সূত্র খোঁজা চায়নার দুর্বলতা নয়। তারা চাইছে একটি বাণিজ্য যুদ্ধ এড়িয়ে যেতে। কিন্তু মার্কিন তরফ থেকে কোন যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হলে তা মোকাবেলার ক্ষমতাও চীন রাখে।
×