ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে প্রধানমন্ত্রী

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিতে সরকার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছে

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিতে সরকার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছে

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধে একাত্তরের ঘৃণ্য ঘাতক, দালাল তথা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করে এ দেশকে কালিমামুক্ত করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। আর সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান ও দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সব ধরনের নাশকতা ও সহিংসতা প্রতিরোধ করে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদে টেবিলে উত্থাপিত প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তরপর্বে সংসদ সদস্যদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সরকারী দলের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার জন্য গঠিত স্পেশাল টাস্ক গ্রুপের (এসটিজি) মাধ্যমে অভিযান অব্যাহত আছে। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী হামলা সংক্রান্ত মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে সফলতার পরিচয় দিয়েছে। সংসদ নেতা জানান, ইতোপূর্বে সন্ত্রাসী, নাশকতামূলক ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের কর্মকা- ও গতিবিধি সম্পর্কে গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। জঙ্গী ও সন্ত্রাসীসহ সকল অপরাধীদের কর্মকা- রোধে তাদের অর্থের যোগানদাতা ও অর্থের উৎস সন্ধান করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকার ফলে দেশে সন্ত্রাসী কর্মকা- এবং জঙ্গীদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। ফলে দেশের সার্বিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে, বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি দৃঢ়তর হচ্ছে। মালয়েশিয়ায় সাড়ে ৩ লাখ বাংলাদেশী ওয়ার্ক পারমিট পাবে ॥ সরকারী দলের সংসদ সদস্য কামাল মজুমদারের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত আনুমানিক ৩ লাখ ৫০ হাজার বাংলাদেশী কর্মী সেদেশেই কাজের সুযোগ পাবে। তিনি বলেন, ‘গত ১৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোন আলাপের পরিপ্রেক্ষিতে মালয়েশিয়া সরকার বিদেশী কর্মীদের জন্য সাময়িক ওয়ার্ক পারমিট ইস্যুর ঘোষণা দিয়েছে। ফলশ্রুতিতে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত আনুমানিক ৩ লাখ ৫০ হাজার বাংলাদেশী কর্মী সেদেশেই কাজের সুযোগ পাবে। তা না হলে বাংলাদেশী কর্মীদের দেশে ফিরে আসতে হতো।’ বর্তমানে দেশের অর্থনীতির ভিত মজবুত ॥ জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম ওমরের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল আধুনিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে অর্থনৈতিকভাবে চাঙ্গা ও মজবুত করার লক্ষ্যে সামষ্টিক অর্থনীতির প্রধান বিষয় যেমন : মোট দেশজ আয়, প্রবৃদ্ধি, রফতানি আয়, কর্মসংস্থান, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি হ্রাসে সরকারের সাফল্য অভূতপূর্ব। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০১৬ সালের নমিন্যাল জিডিপি’র ভিত্তিতে বিশ্বে ৪৬তম এবং ক্রয়ক্ষমতার সমতার জিডিপির ভিত্তিতে ৩৩তম স্থান অধিকার করেছে। বর্তমানে (২০১৬) মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৬৫ মার্কিন ডলার। তিনি বলেন, দেশজ আয় ও প্রবৃদ্ধি অর্জনে সরকার অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণকালে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ১ শতাংশ, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭ দশমিক ১১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এটি দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বিদ্যুত-জ্বালানি-পরিবহনসহ ভৌত অবকাঠামো খাত উন্নয়ন ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ ক্রমশ ত্বরান্বিত করছে। বেসরকারী বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়ন প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। সরকারের ঐকান্তিক প্রয়াসের ফলে দেশে ও বিদেশে মিলে গত সাত বছরে প্রায় ১ কোটি ২২ লাখ নতুন কর্মসংস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এত কর্মসংস্থান আর অতীতে কখনও হয়নি। মাদারীপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ॥ প্রধানমন্ত্রী সংসদে জানান, পদ্মা সেতুর অপর প্রান্তে মাদারীপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের সমীক্ষার কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীতে পায়রা বন্দরের কার্যক্রম শুরু হওয়ার ফলে ঐ অঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকা- বৃদ্ধি পাচ্ছে। পায়রা বন্দরের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মৃতপ্রায় মংলা বন্দর লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ইলেকট্রিক ট্রেন ও পাতাল ট্রেনের সম্ভাবতা যাচাইয়ের কাজও চলছে। তিনি বলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এ সরকারের এক অন্যতম সাফল্য। বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। দেশে খাদ্য মজুদ ক্ষমতা বেড়ে ২০১৭ সালে ২০ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। আওয়ামী লীগ ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ পেরিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, সুখী এবং উন্নত জনপদে পরিণত করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পবন্ধ। মাত্র ৮ বছরেই বিদ্যুত উৎপাদন ১৫ হাজার মেগাওয়াট ॥ সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা বেগমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিদ্যুত খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এ পরিকল্পনার আওতায় ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুত সুবিধা নিশ্চিত করতে উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার কার্যক্রম চলছে। তিনি বলেন, ২০০১ সালে আমরা যখন ক্ষমতা হস্তান্তর করি তখন বিদ্যুত উৎপাদনের পরিমাণ রেখে আসি ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। ২০০৯ সালে আমরা যখন ক্ষমতা গ্রহণ করি, তখন দেশে বিদ্যুত উৎপাদনের পরিমাণ ছিল মাত্র ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। মানুষ দিনে ১০-১২ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা ভোগ করত, বিদ্যুতের অভাবে তখন শিল্প উৎপাদন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যহত হচ্ছিল। আমরা সরকার গঠনের পর বিদ্যুত প্রকল্পে অর্থের যোগানসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করি। ফলে মাত্র ৫ বছরে আমরা বিদ্যুতের উৎপাদন তিনগুণ বৃদ্ধি করে ২০১৩ সালে ১০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করেছি। দ্বিতীয় মেয়াদে মাত্র তিন বছরে আমরা বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ১৫ হাজার ৩৫১ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছি। সংসদ নেতা জানান, বর্তমানে ৯ হাজার ৮৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১২টি কয়লাভিত্তিক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। টেকসই বিদ্যুত উৎপাদন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নিউক্লিয়ার এনার্জিভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুর নিউক্লিয়ার বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। আগামী ২০২৪ সাল নাগাদ নিউক্লিয়ার বিদ্যুত কেন্দ্র হতে ২ হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন করা সম্ভব হবে। চাহিদা অনুযায়ী ইসিকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে সরকার ॥ জাসদের সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী বিভাগের কর্তব্য। দেশে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সকল নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুসারে সরকার তথা নির্বাহী বিভাগ সকল ধরনের সহায়তা প্রদান করেছে। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হওয়ায় নির্বাচিত দলীয় সরকারের অধীনে দশম জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকালীন সময়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনা এবং সরকারী ব্যক্তিবর্গের নির্বাচনী প্রচারণার বিষয় সুনির্দিষ্ট করে একটি আদর্শ আচরণ বিধিমালা প্রণয়ন করে। প্রত্যেকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নিবন্ধিত প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলসমূহ অংশগ্রহণ করে। প্রথমবারের মতো দলীয়ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে নির্বাচন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। সকল নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের চাহিদানুযায়ী সরকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োগসহ সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।
×