‘আপনারা আমাকে একজন ভাল মানুষ হতে সাহায্য করেছেন।’ আমেরিকার জনগণের উদ্দেশে বিদায়ী চিঠিতে বারাক ওবামা এ কথা লিখেছেন। বৃহস্পতিবার তিনি হোয়াইট হাউসে শেষ পূর্ণ কর্মদিবস অতিবাহিত করেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে সব সাফল্যের জন্য জনগণকে কৃতিত্ব দিয়ে ওবামা লেখেন, আপনারা আমাকে একজন ভাল মানুষ ও একজন ভাল প্রেসিডেন্ট হতে সাহায্য করেছেন। বিবিসি খবর ইয়াহু নিউজের।
আমেরিকায় বিদায়ী প্রেসিডেন্টরা সাধারণত উত্তরসূরির জন্য একটি চিঠি লিখে রেখে যান। পাশাপাশি ওবামা এবার জনগণকে উদ্দেশ করে এ চিঠি লিখলেন। ফেসবুকে পোস্ট করা ওই চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘৪৫তম প্রেসিডেন্টের কাছে নোট লিখে যাওয়ার আগে জনগণের উদ্দেশে আমি কিছু বলতে চাই। ৪৪তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনে আমাকে সহযোগিতা করার জন্য আমি আমেরিকার জনগণকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যা কিছু আমি শিখেছি সব আপনাদের কারণেই শিখতে পেরেছি। আপনারা আমাকে একজন ভাল প্রেসিডেন্ট ও একজন ভাল মানুষ হতে সাহায্য করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন আট বছর প্রেসিডেন্ট থাকাকালে সব ধরনের জনগণের সঙ্গে মেশার সুযোগ তার হয়েছে। ওবামা লেখেন, ‘আমেরিকার জনগণ, আপনাদের মধ্যে আমি শিষ্টাচার, একাগ্রতা, রস বোধ ও উদারতা লক্ষ্য করছে। নাগরিক হিসেবে আপনাদের দৈনন্দিন কর্মকা- আমার প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয়েছে। ভবিষ্যতের অফুরান সম্ভাবনা আপনাদের মধ্যে আমি দেখতে পাচ্ছি।’
হোয়াইট হাউস ছাড়ার আগে ওবামার বেশিরভাগ সময় কেটেছে জনগণের খুব কাছাকাছি থেকে। চিঠিতে ওবামা লেখেন, ‘আমেরিকার জনগণের কঠোর পরিশ্রমে আত্মনিয়োগ পরিচ্ছন্ন। কঠোর শ্রম ছাড়া কোন পরিবর্তন সম্ভব নয়।’ তিনি সবসময় জনগণের সঙ্গে থাকবেন বলেও চিঠিতে জানিয়েছেন। ওবামা বলেন, ‘গণতন্ত্রের সবচেয়ে শক্তিশালী শব্দ হলো ‘আমরা’, ‘আমরা জনগণ’, ‘আমরা অবশ্যই এগুলো করব’, ‘আমরা সব বাধা দূর করব’ এবং আমরা সেটি করে দেখিয়েছি।’ হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর তিনি এবং তার স্ত্রী মিশেল বারাক ওবামা ফাউন্ডেশন নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। যারা এই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে ইচ্ছুক তাদের ফাউন্ডেশনের মেইল লিস্ট যুক্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ওবামা। গত বছর সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে বক্তৃতা দেয়ার পর থেকে মূলত বিদায়ের প্রস্তুতি শুরু করেন ট্রাম্প। তিনি এ সময় দেশের বিভিন্ন জায়গা সফর করেন এবং অসংখ্য বিদায়ী সাক্ষাতকার দেন। দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাবনায় তার আস্থা পুনর্ব্যক্ত করে বললেন, ‘আমি আমেরিকায় বিশ্বাস করি, আমেরিকার জনগণে বিশ্বাস করি। বিশ্বে অশুভ শক্তি রয়েছে, এ কথা মানি, কিন্তু আমরা যা সঠিক বলে অনুভব করি, সে লক্ষ্য অর্জনে যদি একযোগে কাজ করি, তাহলে অল্প অল্প করে হলেও পৃথিবী সুন্দরতর হয়ে উঠবে।
এর আগে বুধবার তিনি হোয়াইট হাউসে সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে উত্তরসূরি ট্রাম্পকে কিছু পরামর্শ দেন। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, তার অনেক নীতি ও কাজ ট্রাম্প প্রশাসন বাতিল করে দিতে পারে। এর ফলে রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধ বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। তেমন কিছু হলে তিনি চুপ করে থাকবেন না। ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পর অবসরে গেলেও তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন বলে ইঙ্গিত দেন। যেমন ব্যক্তি বা কমিউনিটির বিরুদ্ধে বৈষম্য বৈধ করার চেষ্টা অথবা কারও ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করা হলে তিনি নীরব থাকবেন না। যেসব অভিবাসীর যুক্তরাষ্ট্রে বড় হয়েছে এবং যাদের তিনি অস্থায়ীভাবে বৈধতা দিয়েছেন, তাদের অধিকার কেড়ে নেয়ার চেষ্টা হলে তিনি হস্তক্ষেপ করবেন।