ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মধ্যপ্রাচ্যসহ সব দেশ থেকে রেমিটেন্স কমেছে

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ২০ জানুয়ারি ২০১৭

মধ্যপ্রাচ্যসহ সব দেশ থেকে রেমিটেন্স কমেছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিশ্বব্যাপী তেলের দাম কমে যাওয়ায় প্রবাসীদের উপার্জন কম হচ্ছে। অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্বের নানা সঙ্কটে ইউরো ও পাউন্ডের দামও কমে গেছে। পাশাপাশি প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলের পরিবর্তে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। সব মিলিয়ে হিসাব শেষে দেখা যাচ্ছে যে রেমিটেন্স কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, শীর্ষ রেমিটেন্স প্রেরণকারী দেশগুলোর প্রায় সব দেশ থেকেই কমেছে রেমিটেন্স। চলতি অর্থবছরের (২০১৬-১৭) জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ রেমিটেন্স কমেছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতার থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, ইতালি ও সিঙ্গাপুর থেকেও বিশাল অঙ্কের রেমিটেন্স দেশের আসে। বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রেরণকারী প্রথম সারির ১০টি দেশের পরিসংখ্যান দেখলে দেখা যায় যে তার মধ্যে ৮টি দেশ থেকেই রেমিটেন্স কমেছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, রেমিটেন্স প্রেরণকারী দেশের তালিকায় প্রথমে থাকা সৌদি আরব থেকে গত ছয় মাসে ১১৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ শতাংশ কম। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রেমিটেন্স প্রেরণকারী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ২৩ শতাংশ কম রেমিটেন্স এসেছে। এবছর এ দেশটি থেকে এসেছে ১০২ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। আর সবচেয়ে কমেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৮০ কোটি ৯৬ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা প্রায় ৩৫ শতাংশ কম। বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রেরণকারী দেশগুলোর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তৃতীয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের কারণেই ওই দেশ থেকে রেমিটেন্স কমেছে। একইভাবে মালয়েশিয়া থেকে কমেছে ১০ শতাংশ রেমিটেন্স। গত ছয় মাসে এদেশ থেকে ৫৯ কোটি এক লাখ ডলার এসেছে। আর গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে যুক্তরাজ্য থেকে ২৩ শতাংশ, সিঙ্গাপুর থেকে ১৪ শতাংশ, ওমান থেকে ছয় শতাংশ এবং কুয়েত থেকে দুই শতাংশ রেমিটেন্স কমেছে। ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ, প্রবাসীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনটি বড় কারণে রেমিটেন্স কমে যাচ্ছে। সেগুলো হলো তেলের দাম কমে যাওয়া, ইউরো এবং পাউন্ডের বিনিময় মূল্য পড়ে যাওয়া এবং হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ প্রেরণ। রেমিটেন্স কমার পেছনে বেশ কিছু কারণ শনাক্ত করেছে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে টাকার বিপরীতে পাউন্ড, ইউরো, রিয়ালের দর কমে গেছে। এ কারণে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠিয়ে টাকা পাচ্ছেন কম। যে জন্য তারা এখন রেমিটেন্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন। সম্প্রতি হুন্ডির প্রবণতা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যেসব রেমিটেন্স আসছে সেগুলোর বেশিরভাগই হচ্ছে হুন্ডি। এ ছাড়া হুন্ডি, মুদ্রাপাচার ও নগদ আকারে কিছু রেমিটেন্স আসছে। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের দেশগুলোয় বর্তমানে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। এ জন্য কাজের ক্ষেত্র যেমন সংকুচিত হয়েছে তেমনি বেতন-ভাতার পরিমাণও কমে গেছে। ফলে প্রবাসীদের আয়ও কমে গেছে। এসব কারণেই রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরি যাওয়ার কারণে প্রবাসীদের মধ্যে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠানোয় আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। রেমিটেন্স কমার সঙ্গে সঙ্গে দেশের অর্থনীতি স্বস্তিও কমে যাচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন।
×