ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

পৌষ সংক্রান্তি ঢাকার পুরানো উৎসব

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭

পৌষ সংক্রান্তি ঢাকার পুরানো উৎসব

চৌদ্দ জানুয়ারি পৌষ মাসের শেষ দিন। পৌষ সংক্রান্তির দিনই পালিত হয় পুরান ঢাকার এবং আদি ঢাকাইয়াদের ঐতিহ্যের সাকরাইন উৎসব। ভোরবেলা কুয়াশার আবছায়াতেই ছাদে ছাদে শুরু হয় ঘুড়ি ওড়ানোর উন্মাদনা। ছোট বড় সকলের অংশগ্রহণে মুখরিত ছিল প্রতিটি ছাদ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে উৎসবের জৌলুস। আর শীতের বিকেলে ঘুড়ির কাটাকাটি খেলায় উত্তাপ ছড়িয়েছে সাক্রাইন। এক দশক আগেও ছাদে ছাদে থাকতো মাইকের আধিপত্য। আজ মাইকের স্থান দখল করেছে আধুনিক সাউন্ড সিস্টেম। উৎসবের আমেজ পুরান ঢাকার সর্বত্র। গেন্ডারিয়া, তাঁতিবাজার, লক্ষ্মীবাজার, চকবাজার, লালবাগ, সূত্রাপুর মেতেছিল ঐতিহ্যের উৎসবে। আকাশে উড়েছে ঘুড়ি আর বাতাসে দোলা জাগিয়েছে গান। মাঝে মাঝে ঘুড়ি কেটে গেলে পরাজিত ঘুড়ির উদ্দেশ্যে ধ্বনিত হয়েছে ভোকাট্টা লোট শব্দ যুগল। সাকরাইনে পুরান ঢাকায় শ্বশুরবাড়ি থেকে জামাইদের নাটাই, বাহারি ঘুড়ি উপহার দেয়া এবং পিঠার ডালা পাঠানো ছিল অবশ্য পালনীয় অঙ্গ। ডালা হিসেবে আসা ঘুড়ি, পিঠা আর অন্যান্য খাবার বিলি করা হত আতœীয়-স্বজন এবং পাড়ার লোকদের মধ্যে। নীরব প্রতিযোগিতা চলত কার শ্বশুরবাড়ি হতে কত বড় ডালা এসেছে। আজ এই সব চমৎকার আচারগুলো বিলুপ্ত হতে চলেছে। পুরান ঢাকার আদি বসবাসকারী সকল মানুষ এই ঐতিহ্যগুলোর স্মৃতি রোমন্থন করেন। নতুন প্রজন্মকে শোনান সেই সব মুখরিত দিনের কথা। মনের খুব গভীরে পরম মমতায় লালন করেন ঐতিহ্যের পরম্পরা। স্বপ দেখেন এই সকল প্রাণময় ঐতিহ্যগুলো আবার পুনরুজ্জীবিত হবে। সন্ধ্যায় আধার ঘনাবার সঙ্গে সঙ্গে পুরান ঢাকা সকল জঞ্জাল আর কালিমা পুড়িয়ে ফেলার আর আতশবাজির খেলায় (ইংরেজীতে যাকে বলে ফায়ার ওয়ার্কস) মেতেছিল। রাতে কেউ কেউ উড়িয়েছে ফানুস। সাকরাইন এমনই সুন্দর আর অর্থপূর্ণ ঘুড়ি উড়ানোর উৎসব। প্রতিবছর ১৪ বা ১৫ জানুয়ারি পৌষের শেষদিনে পৌষ সংক্রান্তিকে ঘিরে লোকজন ঘুড়ি উৎসবে মেতে ওঠে। সাক্রাইন পৌষ মাসের শেষ দিন নতুন ধানের চালের পিঠাপুলি খেয়ে ঘুড়ি উড়িয়ে আনন্দ উৎসব করার রেওয়াজ বহু পুরনো। ঢাকায় এই উৎসব হচ্ছে প্রায় ৪০০ বছর ধরে। পুরানো ঢাকায় ঘুড়ি ওড়ানো বিনোদন শুরু হয়েছিল মুঘল আমলে। কথিত আছে ১৭৪০ সালে নবাব নাজিম মহম্মদ খাঁ এই ঘুড়ি উৎসবের সূচনা করেন। সেই থেকে এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে। এই ঘুড়ি উৎসব পশ্চিম ভারতের গুজরাটেও পালিত হয়। সেখানে মানুষ সুন্দর সুন্দর ঘুড়ির মাধ্যমে সূর্যদেবতার কাছে নিজেদের ইচ্ছা ও আকুতি প্রেরণ করেন। উত্তর ভারতীয় এ ঘুড়ি উৎসবটিকেও স্থানীয়রা ‘সাক্রাইন’ নামে অভিহিত করে।
×