ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিচারকদের শৃঙ্খলা

বিধিমালার গেজেট প্রকাশে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দিল সুপ্রীমকোর্ট

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭

 বিধিমালার গেজেট প্রকাশে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দিল সুপ্রীমকোর্ট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে রবিবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সাত বিচারপতির আপীল বেঞ্চ নতুন করে এ সময় দেন। রাষ্ট্রপক্ষে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আরও চার সপ্তাহের সময়ের আবেদন জানিয়েছিলেন। রবিবার সকালে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গেজেট না নিয়েই আপীল বিভাগে হাজির হন। আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে তিনি গেজেট জারির জন্য আরও একমাস মৌখিকভাবে সময় প্রার্থনা করেন। এ পর্যায়ে আদালত বলে, আমরা আপনার মুখে হাসি দেখতে পাচ্ছি। এই হাসি আনন্দের নাকি কষ্টের? আমাদের মনে হয়, এটি কষ্টের হাসি। আদালত বলে, আপনি মৌখিকভাবে সময় প্রার্থনা করেছেন। কিন্তু কোন লিখিত আবেদন আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এ পর্যায়ে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আবেদনে কি লিখব বুঝতে পারছি না। আদালত বলে, সরকার আপনাকে কি উপদেশ দিয়েছে সেটা তো আমরা বলতে পারব না। আর মৌখিকভাবে যে সময় চেয়েছেন এটি মঞ্জুর করা যাবে না। লিখিত সময় আবেদন নিয়ে আসুন। আমরা বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধিমালার গেজেট বিষয়ে কোন ছাড় দেব না। এরপর বিরতির পর বেলা সাড়ে ১১টায় এ্যাটর্নি জেনারেল লিখিতভাবে সময় আবেদন আদালতে দাখিল করেন। পরে আদালত সময় আবেদন মঞ্জুর করে পরবর্তী দিন ধার্য করে দেয়। সর্বশেষ গত বছরের ১২ ডিসেম্বর আপীল বিভাগের তলবে আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব আবু সালেহ শেখ মোঃ জহিরুল হক ও মোহাম্মদ শহিদুল হক হাজির হন। ওইদিন এ্যাটর্নি জেনারেলের আবেদনে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছিল সর্বোচ্চ আদালত। এর আগে ৮ ডিসেম্বর নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশ না করায় আইন মন্ত্রণালয়ের ওই দুই সচিবকে হাজির করতে এ্যাটর্নি জেনারেলকে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছিল আপীল বিভাগ। এর মধ্যে ৭ ডিসেম্বর নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশের প্রয়োজন নেই বলে সিদ্ধান্ত দেন রাষ্ট্রপতি। আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মোঃ জহিরুল হক এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক পরদিন আদালতের তলবে হাজির হলে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিধিমালা নিয়ে ‘রাষ্ট্রপতিকে ভুল বোঝানো হয়েছে।’ এ সময় আদালত বলে সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে সংবিধান অনুয়ায়ী প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ছাড়া রাষ্ট্রপতির আর কোন ক্ষমতা নেই। সেদিন শুনানি করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেয় আপীল বিভাগ। ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় (বিচার বিভাগ পৃথককরণ) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়া হয়। ওই রায়ের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। আপীল বিভাগের নির্দেশনার পর ২০১৫ সালের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধি প্রস্তুত করে সুপ্রীমকোর্টে পাঠায়। গত বছরের ২৮ আগস্ট শুনানিকালে আপীল বিভাগ ওই খসড়ার বিষয়ে বলেন, শৃঙ্খলা বিধিমালা সংক্রান্ত সরকারের খসড়াটি ছিল ১৯৮৫ সালের সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালার হুবহু অনুরূপ। যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী। এর পরই সুপ্রীমকোর্ট কোর্ট একটি খসড়া বিধিমালা করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। একইসঙ্গে ৬ নবেম্বরের মধ্যে তা প্রণয়ন করে প্রতিবেদন আকারে আদালতকে অবহিত করতে আইন মন্ত্রণালয়কে বলা হয়। গত বছরের ৬ নবেম্বর সে অনুসারে মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষে এ্যাটর্নি জেনারেল এ বিষয়ে কোন অগ্রগতি জানাতে পারেননি। পরে আপীল বিভাগ বিধিমালা চূড়ান্তের বিষয়ে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা লিখিতভাবে জানাতে এ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়ে ৭ নবেম্বর আদেশের দিন ধার্য করে। ওই দিন এ্যাটর্নি জেনারেল আট সপ্তাহের সময়ের আবেদন জমা দেন। যাতে বিধিমালাটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর কথা উল্লেখ করেন তিনি। সর্বোচ্চ আদালত ২৪ নবেম্বর পর্যন্ত সময় দেন। ২৪ নবেম্বর এ্যাটর্নি জেনারেল গেজেট প্রকাশে আরও এক সপ্তাহ সময় চাইলে আপীল বিভাগ তা মঞ্জুর করে। পরে ১ ডিসেম্বর আইনমন্ত্রী ফিলিপিন্সে রয়েছেন বলে ফের এক সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়। সময় মঞ্জুরের পর ৮ ডিসেম্বর আবেদনটি আবার কার্যতালিকায় আসে। এরপরও গেজেট না করায় দুই সচিবকে ১২ ডিসেম্বর আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেয় আপীল বিভাগ।
×