ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

আতঙ্ক

রাজশাহীর বাঘা সীমান্তে বেপরোয়া ছিনতাই চক্র

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৫ জানুয়ারি ২০১৭

রাজশাহীর বাঘা সীমান্তে বেপরোয়া ছিনতাই চক্র

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ বাঘা ও নাটোরের লালপুরসহ সীমান্ত এলাকায় ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ স্বশস্ত্র মোটরসাইকেল ছিনতাইকারী চক্র। কখনও গুলি করে, কখনও মারপিট করে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে বিভিন্ন এলাকায়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার গুলি করে কলেজ শিক্ষককে হত্যা করে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনায় এলাকায় আতঙ্কাবস্থা বিরাজ করছে। ভাবিয়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও। বৃহস্পতিবারের ঘটনার পর থেকে অনেকেই মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় বের হতেও ভয় পাচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, থানা পুলিশের টহলে গাফিলতির কারণে দিনে-রাতে এমন ঘটনা বেড়েই চলেছে। রাজশাহীর সীমান্তবর্তী উপজেলা বাঘা। জেলার দক্ষিণ-পূর্ব সীমানায় এ থানার অবস্থান। একদিকে ভারতের সীমানা-অন্যদিকে নাটোরের লালপুর এবং ঈশ্বরদী ঘেঁষা এ উপজেলার রাস্তাঘাট অনেকটা ফাঁকা। এ সুযোগ নিয়ে সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্ত মাঠে নেমেছে। প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে তারা যখনই কোন মোটরসাইকেল আরোহীকে পাচ্ছে তখনই সুযোগ মতো অস্ত্রের ভয়, গুলি অথবা মারপিট করে মোটরসাইকেল ছিনতাই করছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বাঘা ও নাটোরের লালপুর উপজেলার সীমান্তে লালপুরের মহরকয়া কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক মোশারফ হোসেনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে তার মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিয়েছে চক্র। অথচ ঘটনার তিনদিন পেরিয়ে গেলেও এ চক্রের টিকিও ধরতে পারেনি পুলিশ। উদ্ধার হয়নি কলেজ শিক্ষকের মোটরসাইকেল। এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে গত ৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় আড়ানী-বাঘা সড়কের আড়ানী পৌরসভা সীমান্তের পিলারের কাছে ছিনতাইকারীদের খপ্পরে পড়েন একই মোটরসাইকেল আরোহী সোনাহদ গ্রামের উৎসব আহম্মেদ জীবন, কুদরত মেহেদী হাসান ও পান্নাপাড়া গ্রামের তোহা আলী। তারা মোটরসাইকেলে আড়ানী বাজারে যাচ্ছিলেন। আড়ানী পৌরসভার সীমান্তের পিলারের কাছে এলে ৫/৬ জনের একটি ছিনতাইকারীর দল তাদের পথরোধ করে। এ সময় উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটে। পরে তাদের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যায়। তবে ছিনতাইকারীর মারপিট ও ছুরির আঘাতে তারা আহত হয়। এর আগে ২ জানুয়ারি দুপুরে উপজেলার দিঘা স্কুল ও কলেজের ভূগোল বিভাগের প্রভাষক সাইদুর রহমানের মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেয়। তিনি কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে দিঘা-চিথলিয়া সড়কের ফাঁকা স্থানে পথরোথ করে ছিনতাইকারিরা। এর পর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে মোটরসাইকেলটি ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। একই দিন বেলা ১২ টার সময় বাউসা হেদাতিপাড়া গ্রামের আবদুল আজিজ ব্যাটারি চালিত ভ্যানে নববিবাহিত মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। ছিনতাইকারীরা পথরোধ করে তাদের নগদ ৪০ হাজার টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাই করে পালিয়ে যায় । এছাড়া ৯ জানুয়ারি দুপুরে বাঘা মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী কেয়ার কান থেকে স্বর্ণের দুল ছিনতাই করে পালিয়ে যায় দুই ছিনতাইকারী। গত ৭ ডিসেম্বর বিকেলে বাঘা-আড়ানী সড়কের চকসিংগা গ্রামের পাকা রাস্তায় মারপিট করে শাহাদাত হোসেনের মোটরসাইকেল ও টাকা ছিনতাই করা হয়। ঘটনার পরদিন বাঘা থানা পুলিশ তার মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করলেও এখন পর্যন্ত কোন আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি। স্থানীয়রা জানান, বাঘা ও লালপুর সীমান্তবর্তী গ্রামীণ সড়কে মোটরসাইকেল, সাইকেল, ভ্যান ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও পুলিশ এ চক্রের বিষয়ে পুরোপুরি অন্ধকারে রয়েছে। সর্বশেষ কলেজ শিক্ষককে গুলি করে হত্যার পর মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ও তোলপাড় সৃষ্টি হলেও উদ্ধার হয়নি মোটরসাইকেল। বাঘা উপজেলার ব্যবসায়ী সমিতির নেতা কামাল হোসেন বলেন, লোকজন এখন রাস্তায় চলাচল করতে ভয় পাচ্ছে। যেভাবে দুর্বৃত্তরা একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে তাতে জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে অনেকেই শঙ্কিত। বিশেষ করে কলেজ শিক্ষককে যেভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে তাতে এ আতঙ্ক আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এ বিষয়ে বাঘা থানার ওসি আলী মাহামুদ দাবি করে বলেন, এলাকায় আইনশৃঙ্খলার অবস্থা ভাল। ছোটখাট বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও সব বিষয়ে থানায় অভিযোগ আসে না। যেসব অভিযোগ এসেছে তার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, থানায় রিজার্ভ ফোর্স ৪/৫ টি গ্রুপ করে টহল দেয়। তারপরও চক্রটি সুযোগ বুঝে অপকর্ম চালাচ্ছে। পুলিশ এখন আরও সক্রিয় হয়েছে বলে জানান তিনি।
×