ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

আইসিডিডিআরবির গবেষণায় তথ্য

বেসরকারী হাসপাতাল ক্লিনিকে ৬২ ভাগ সরকারী চিকিৎসক

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৪ জানুয়ারি ২০১৭

বেসরকারী হাসপাতাল ক্লিনিকে ৬২ ভাগ সরকারী চিকিৎসক

নিখিল মানখিন ॥ সর্বক্ষণিক পর্যাপ্ত চিকিৎসকের অভাবে চরমভাবে ব্যাহত হয় বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকের স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা। অথচ সরকারী ও বেসরকারী চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ ব্যক্তিমালিকানাধীন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে কাজ করেন। যদিও ওসব প্রতিষ্ঠানে তারা বেশিক্ষণ অবস্থান করেন না। রোগ ও রোগীর অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসকদের ডেকে নেয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক বেসরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে সঙ্কটাপন্ন রোগীর প্রয়োজনে সঠিক সময়ে চিকিৎসক পাওয়া যায় না। ফলে চিকিৎসক আসার আগেই অনেক রোগীর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ উঠে। ক্লিনিকগুলো মূলত সরকারী চিকিৎসকদের ওপর নির্ভরশীল। সম্প্রতি নগর স্বাস্থ্যসেবায় বেসরকারী খাতের ভূমিকা নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)। গবেষণায় দেখা গেছে, ৬২ শতাংশ চিকিৎসক ব্যক্তিমালিকানাধীন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে কাজ করেন। অন্যদিকে সরকারী খাতের ৮০ শতাংশ চিকিৎসকও ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) হিসাবমতে, দেশে নিবন্ধিত চিকিৎসকের সংখ্যা ৭৩ হাজার ৩০০। ঢাকা, খুলনা ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকার বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকের তথ্য আইসিডিডিআরবির গবেষকরা সংগ্রহ করেছেন। এতে হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ৪৭ মালিক, ২০ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপক ও ২০ রোগীর সাক্ষাতকার নেয়া হয়েছে। এছাড়া ৩০ প্রতিষ্ঠানের ওপর পর্যবেক্ষণ তথ্য গবেষণায় ব্যবহার করা হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সর্বক্ষণিক চিকিৎসক রাখা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। অস্ত্রোপচারের সময় চিকিৎসকের উপস্থিতি প্রায় নিশ্চিত থাকে। ক্লিনিকগুলো মূলত সরকারী চিকিৎসকদের ওপর নির্ভরশীল। দেশের আইনে বলা আছে, ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা নিজের প্রতিষ্ঠানের বাইরে রোগী দেখতে পারবেন না। কিন্তু অনেক বেসরকারী ক্লিনিকে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা রোগী দেখেন। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের একটি হিসাব এতে দেয়া হয়েছে। ওষুধের ও চশমার দোকান বাদ দিয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সরকারী-বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা ৭ হাজার ৩৪৭। প্রতি এক লাখ মানুষের জন্য সরকারী-বেসরকারী মিলিয়ে হাসপাতাল বা ক্লিনিক আছে ১০৫। গবেষণায় বলা হয়, আইসিডিডিআরবির সেন্টার ফর ইক্যুইটি এ্যান্ড হেলথ সিস্টেমস এই গবেষণা করেছে। এতে অর্থায়ন করেছে ব্রিটেনের দাতা সংস্থা ডিএফআইডি। আট গবেষক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আনোয়ার ইকবাল। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, এমন ধারণা প্রচলিত আছে যে, ওষুধ কোম্পানিগুলো চিকিৎসকদের একটি অংশকে দিয়ে ব্যবস্থাপত্রে নিজেদের ওষুধ লিখিয়ে নেয়। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর যৌথ লাভের সম্পর্ক গড়ে উঠছে। এতে চিকিৎসার ক্ষেত্রে লাভ ও ক্ষতি-দুটোই হতে পারে। চিকিৎসকেরা কোম্পানি থেকে ওষুধ সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য পান, আর প্রতিষ্ঠানের ওষুধ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত হয়। কিন্তু একই ধরনের ওষুধ ব্যবহারের চাপ থাকার কারণে কিছু জীবাণু ওষুধ-প্রতিরোধী হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অন্যদিকে বাধ্য হয়ে কিনতে হয় বলে রোগীর খরচের বোঝা বড় হতে পারে। গবেষকেরা বলছেন, চিকিৎসাসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক বড় ভূমিকা রাখলেও এ খাতে জনবলের স্বল্পতা একটি বড় সমস্যা। সিলেটের ২০ ও খুলনায় ৩০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে সর্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকেন না। দিনে চিকিৎসক স্বল্পতা বেশি প্রকট। উচ্চশিক্ষার সঙ্গে চিকিৎসক স্বল্পতার একটি সম্পর্ক আছে বলে গবেষকেরা মনে করেন। যেমন খুলনায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রীর কোন ব্যবস্থা নেই। তরুণ চিকিৎসকরা ঢাকায় বা চট্টগ্রামে চলে যান। তাই এই শহরে তরুণ চিকিৎসক তুলনামূলক কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিকাংশ বেসরকারী হাসপাতালে সব বিভাগের স্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক থাকে না। বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসকরা ওসব হাসপাতালে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন। হাসপাতালে যে বিভাগের রোগীর আগমন ঘটে, সেই বিভাগের চিকিৎসককে ডেকে আনা হয়। এমনকি অনেক বেসরকারী হাসপাতালের আইসিইউ রোগীর জন্য তাৎক্ষণিক চিকিৎসক পাওয়া যায় না। হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের কল পেয়ে চিকিৎসকের পৌঁছতে পৌঁছতে যে সময় ব্যয় হয়, তাতে চিকিৎসাধীন রোগীর জরুরী চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয়। অনেক সময় রোগীর দুর্ঘটনাও ঘটে। হাসপাতালের ভবন ও চিকিৎসকের তালিকার দিকে তাকিয়েই অনেক রোগী সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্স এবং অবকাঠামোর বিষয়ে তাদের জানার সুযোগ থাকে না। এতে প্রতারিত হওয়ার পাশাপাশি যথাযথ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয় রোগীরা।
×