ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

পৌষের সন্ধ্যায় ছায়ানটে নান্দনিক নৃত্য উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৭ জানুয়ারি ২০১৭

পৌষের সন্ধ্যায় ছায়ানটে নান্দনিক নৃত্য উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির সম্মিলনে দর্শকরা দেখতে পেলেন নানা আঙ্গিকের নান্দনিক নাচ। নৃতশিল্পীর নূপুরের নিক্কনে সচকিত হলো মিলনায়তন। কখনও একক আবার কখনও পরিবেশিত হলো সম্মেলক নাচ। আর সবগুলো পরিবেশনাই ছিল শাস্ত্রীয় আঙ্গিকের নৃত্যে সাজানো। শুক্রবার সন্ধ্যায় পৌষের সন্ধ্যায় এমনই মনোগ্ধকর নাচের আসর বসেছিল ধানম-ির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে। শাস্ত্রীয় ধারার এ নৃত্য উৎসবে নৃত্যপ্রেমীদের আগমনে মিলনায়তন ছিল পরিপূর্ণ। শাস্ত্রী নৃত্যের পাঁচটি ধারায় ভাগ করা হয় আয়োজনটি। উৎসবের সূচনা হয় মনিপুরী নাচ দিয়ে। মাঝে পরিবেশিত হয় ওড়িশি, ভরতনাট্যম ও গৌড়ীয় নৃত্য। কত্থক নাচের উপস্থাপনা দিয়ে শেষ হয় উৎসব। উৎসবের উদ্বোধন হয় ছায়ানটের কার্যকরী সংসদের সদস্য প্রাবন্ধিক মফিদুল হকের স্বাগত কথনে। জঙ্গীবাদ মোকাবিলায় সংস্কৃতিচর্চার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রকৃত শিক্ষার জন্য সংস্কৃতির যোগ জরুরী। সঙ্গীত ও নৃত্য চর্চা যত প্রসার পাবে সমাজ তত অগ্রসর হবে। জঙ্গীবাদ ও মৌলবাদকে রুখতে হলে শিক্ষার সঙ্গে সংস্কৃতির যোগ ঘটানোর কোন বিকল্প নেই। শিক্ষা আইনে এবং পাঠ্যপুস্তকে শিক্ষার সঙ্গে সংস্কৃতির যোগ ঘটানো না গেলে সে শিক্ষা পূর্ণাঙ্গ রূপ নেয় না। নৃত্যগুরু শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সোনিয়া রশীদের সঙ্গে ছায়ানটের শিক্ষার্থীদের দলীয় মনিপুরী নৃত্য পরিবেশনা দিয়ে শুরু হয় উৎসব। এ নাচের বিষয় ছিল ‘রাধা রূপ পরেং’। এরপর মনিপুরী নৃত্য পরিবেশনায় সিলেটের শান্তনা দেবী উপস্থাপন করে ‘দশবতার’, সুইট দাশের পরিবশেনায় ছিল ‘শিবপঞ্চক’, ধৃতি নর্তনালয় পরিবেশন করে ‘দ-রাস’, ছায়ানটের শিল্পী সামিনা হোসেন প্রেমা পরিবেশন করেন ‘শুকসারীদ্বন্দ্ব’ এবং তামান্না রহমান ও তার দল উপস্থাপন করে ‘ঢোল-করতাল চলম্’। চট্টগ্রামের প্রমা অবন্তি অভিনয় শীর্ষক বিষয়ের ওপর ওড়িশি নৃত্য পরিবেশন করেন। এরপর ভরতনাট্যমে ‘সাবেরীযতিস্মরম’ শীর্ষক দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে ছায়ানট, সৃষ্টি কালচারাল সেন্টার উপস্থাপন করে ‘শব্দম’ এবং জাগো আর্ট সেন্টার পরিবেশন করে ‘তিলনা’। ভরতনাট্যমে একক পরিবেশনায় অংশ নেন অমিত চৌধুরী ও তামান্না রহমান তন্দ্রা। একক গৌড়ীয় নৃত্য দিয়ে দর্শকদের হৃদয় জয় করেন র‌্যাচেল প্রিয়াংকা প্যারিস। কত্থক নাচের একক পরিবেশনা উপস্থাপন করেন মুনিরা পারভীন হ্যাপি ও মেহরাজ হক তুষারের। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে কত্থক নৃত্য সম্প্রদায় এবং মুনমুন আহমেদ ও তার দল। গণগ্রন্থাগারে সায়েন্স ফিকশন ফেস্টিভ্যাল ॥ বাংলাদেশ সায়েন্স ফিকশন সোসাইটির আয়োজনে তৃতীয়বারের মতো রাজধানীতে শুরু হলো সায়েন্স ফিকশন ফেস্টিভ্যাল। শুক্রবার সকালে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার চত্বরে কল্পবিজ্ঞান বইয়ের এ উৎসবের উদ্বোধন করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সায়েন্স ফিকশন সোসাইটির সভাপতি মোশতাক আহমেদ। কল্পবিজ্ঞান লেখা প্রসঙ্গে মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, পাগলের মতো সায়েন্স ফিকশন লিখলে হয় না। এজন্য সায়েন্সের ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হয়। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে সায়েন্স ফিকশন লিখতে শুরু করেছিলাম। এ লেখার ভেতরে অন্যরকম এক আনন্দ আছে। যদি লিখতে না পারি তবে কেমন যেন উসখুশ করে মন। আনিসুল হক বলেন, সায়েন্স ফিকশনের লেখাগুলোকে ভিত্তি করেই বিজ্ঞানীরা নতুন আবিষ্কারে মেতে উঠেন। আজ বাংলাদেশের তরুণরা ‘রিবো’ ও ‘ইবো’ রোবট বানাচ্ছেন। এই রোবট একদিন পৃথিবী জয় করবে। ফেস্টিভ্যালের নানা উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য প্রসঙ্গে মোশতাক আহমেদ বলেন, বিজ্ঞানচর্চাকে আরও সহজতর করে তোলাই আমাদের উদ্দেশ্য। খুদে বিজ্ঞানীদের উৎসাহ-প্রণোদনা প্রদানের পাশাপাশি আমরা সায়েন্স ফিকশন রাইটারদের এক প্ল্যাটফর্মে হাজির করতে চাই। এবারের ফেস্টিভ্যালে গত দুবছরের কার্যক্রমের মূল্যায়ন করে ৫ জনকে ক্রিয়েটিভ সদস্য সম্মাননা, সায়েন্স ফিকশন লেখক দীপু মাহমুদকে ‘সায়েন্স ফিকশন সাহিত্য পুরস্কার-২০১৫’ প্রদান, সায়েন্স ফিকশন ছোটগল্প ক্যাটাগরিতে আসিফ চৌধূরীকে পুরস্কার প্রদান করে সায়েন্স ফিকশন সোসাইটি। বিচিত্র এ ফেস্টিভ্যালে কল্পবিজ্ঞান বইমেলার পাশাপাশি ছিল সিমিউলেশন ভিডিও গেম প্রতিযোগিতা, মাস্টার টাইপার প্রতিযোগিতা, বিজ্ঞান আনন্দ পত্রিকার মোড়ক উন্মোচন, সায়েন্স ফিকশন লেখকদের সঙ্গে আড্ডা ও এলিয়েন উৎসব। মজার এ উৎসবে রিমোট কন্ট্রোল চেপে গাড়ি চালানো প্রতিযোগিতা, কল্পবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিখ্যাত চরিত্র, রোবট আর এলিয়েনদের টুডি ইমেজের সঙ্গে ছবি তোলার সুযোগ পেয়েছে উৎসবে আসা খুদে শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে ছিল সায়েন্স ফিকশন সোসাইটির সদস্য হওয়ার সুযোগ। সায়েন্স ফেস্টিভ্যালের অন্যতম আকর্ষণ ছিল মানুষের মতো দেখতে রোবট ‘ইবো’। মানুষের মতো কথা বলতে পারা রোবটটিকে ঘিরে মেলায় আসা কিশোর-কিশোরীদের ছিল দারুণ আগ্রহ। ‘এসো এসো, সায়েন্স ফিকশন ফেস্টিভ্যাল ২০১৭ তে এসো; হারিয়ে যাও কল্পবিজ্ঞানের রোবট এলিয়েনের অজানা জগতে’ সেøাগানে অনুষ্ঠিত ফেস্টিভ্যালে বিভিন্ন প্রকাশনার বিজ্ঞান বিষয়ক বই ২৫ শতাংশ মূল্যছাড়ে কেনা যাবে। উৎসবের সর্বোচ্চ সংখ্যক বই ক্রেতাকে বিশেষ পুরস্কারে ভূষিত করা হবে। সায়েন্স ফিকশনে বিশেষ অবদানের জন্য আজ শনিবার ফেস্টিভ্যালের দ্বিতীয় দিনে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে সম্মাননা প্রদান করবে সোসাইটি। সম্মাননা প্রদানের পর অনুষ্ঠিত হবে লেজার শো ও এলিয়েন উৎসব। শিক্ষার্থীদের স্বহস্তে তৈরি কিংবা আঁকা এলিয়েনের মধ্য থেকে নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ এলিয়েন নির্মাণকারী শিক্ষার্থীদের বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হবে। সব শেষে এলিয়েনদের উড়িয়ে দেয়া হবে মহাশূন্যে। এর মাধ্যমে শেষ হবে দুদিনের এই তারুণ্যের উৎসব। ‘লাইফ লাইন ফর ঢাকা’ ॥ প্রদর্শনীর মাধ্যমে উপস্থাপিত হলো ঢাকার মেট্রোরেল স্টেশনের নকশা। রাজধানীর আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার লা গ্যালারিতে সূচনা হওয়া এ প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘লাইফ লাইন ফর ঢাকা’। শুকবার বিকেলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগ আয়োজিত প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক মো. কায়কোবাদ। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার পরিচালক ব্রুনো প্লাস অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। মেট্রোরেলের মতো একটি প্রকল্প যেমন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে হাজারো নগরবাসীর জন্য, তেমনি সেটা শহরের সার্বিক অবস্থা এবং নগরবাসীর চাহিদাগুলো মাথায় রেখে না করা হলে পুরো উদ্যোগটিই ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে। এ স্থাপনাশিল্পী প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে মেট্রোরেল স্টেশনের যথাযথা নকশার বিষয়টি সবার সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। আসলে কেমন এই মেট্রোরেল? প্রতিদিনের কর্মব্যস্ত যাত্রাপথে সত্যিই কি একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারবে নগরবাসী? শহরের বুক চিরে এগিয়ে যাবে যে মেট্রো লাইন, শহরবাসীর প্রতিদিনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠবে যে স্টেশনগুলি, কেমন হচ্ছে সেগুলোর নকশা? এমন নানা প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ‘এফিমেরাল : পেরেনিয়াল’ ॥ শুক্রবার শুরু হলো বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ভিস্যুয়াল আর্ট বিভাগ আয়োজিত ‘এফিমেরাল : পেরেনিয়াল’ শীর্ষক প্রদর্শনী। বিকেলে রাজধানীর ডেইলি স্টার-বেঙ্গল আর্টস প্রিসিঙ্কটে যৌথভাবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও শিল্প সমালোচক আবুল মনসুর। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত পারফরম্যান্স আর্ট সপ্তাহের ধারাবাহিকতায় আয়োজন করা হয়েছে এই প্রদর্শনী। যৌথভাবে প্রদর্শনীর কিউরেট করেছেন শিল্পী মাহবুবুর রহমান ও তানজীম ওয়াহাব। দিনব্যাপী শিশু সাহিত্যিক সম্মেলন ॥ বাংলাদেশ শিশুসাহিত্যিক ফোরামের উদ্যোগে শুক্রবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো প্রথম জাতীয় শিশুসাহিত্যিক সম্মেলন। রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পৌষের সকালে ছিল সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানিকতা। শিশু একাডেমি চত্বরে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার সঙ্গে বর্ণিল বেলুন উড়িয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন লেখক ও গবেষক হায়াৎ মামুদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সারাদেশ থেকে আগত শিশুসাহিত্যিকরা।
×