ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী পাটকলে বাড়ছে লোকসানের বোঝা

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ৬ জানুয়ারি ২০১৭

রাজশাহী পাটকলে বাড়ছে  লোকসানের বোঝা

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ লোকসান থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না রাজশাহী পাটকল। ক্রমেই বাড়ছে লোকসানের বোঝা। বর্তমানে প্রতিটন পাটজাত পণ্যে লোকসান গুনতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ২৭ হাজার টাকা পর্যন্ত। দৈনিক হিসেবে তা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ টাকার কাছাকাছি। আর প্রতিমাসে লোকসানের পরিমাণ অন্তত ৭০ লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত। পাটকল কর্তৃপক্ষের দাবি, সিবিএ নেতাদের অসহযোগিতাসহ নানান কারণে ক্রমেই বাড়ছে লোকসান। রাজশাহী পাটকল সূত্র জানায়, ২৬০ লুমের এ মিলটিতে প্রতিদিনের উৎপাদন ২১ দশমিক ৭৮ টন। হেসিয়ান (চিকন) ও সেকিং (মোটা) বস্তা প্রস্তুত হয় এখানে। সব মিলিয়ে কর্মরত প্রায় ১১শ’ শ্রমিক রয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী শ্রমিক রয়েছেন ১ হাজার ২৮ জন। আর বদলি (কার্ডধারী) রয়েছেন আরও ৭৮৮ জন। সূত্র মতে, রাজশাহী পাটকলে প্রতি টন হেসিয়ান উৎপাদনে খরচ হয় ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। ১৮ হাজার টাকা লোকসান দিয়ে তা বিক্রি হয় ১ লাখ ১৯ হাজার টাকায়। তবে সেকিং এ লোকসান হয় ২৭ হাজার টাকা। ১ লাখ ১১ হাজার টাকায় উৎপাদিত প্রতিটন সেকিং বিক্রি হয় ৮৪ হাজার টাকায়। সব মিলিয়ে পাটকলে প্রতিদিনই অন্তত ৫ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠাটির এ পর্যন্ত লোকসান প্রায় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তবে এনিয়ে মুখ খুলতে রাজি নয় রাজশাহী পাটকল কর্তৃপক্ষ। রাজশাহী পাটকলের প্রকল্প প্রধান (উপ-মহাব্যবস্থাপক) প্রকৌশলী জিয়াউল হক বলেন, পাটকলের কোন বিষয়ে মিডিয়ার সামনে তারা কথা বলতে পারবেন না। ওপর থেকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে পাটকলে লোকসান হচ্ছে স্বীকার করে এ প্রকল্প প্রধান বলেন, মাসে অন্তত ৭০ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। কখনও কখনও তা কোটিতে গিয়ে দাঁড়ায়। নানান কারণে ধীরে ধীরে তা বেড়েছে। তিনি বলেন, লোকসানের কারণে আর্থিক সঙ্কটে রয়েছেন তারা। এতে বকেয়া পড়েছে শ্রমিকদের ৩ সপ্তাহের মজুরি। টাকার অংকে তা ছাড়িয়েছে ১০ কোটি ৫ লাখে। অর্থ বরাদ্দ পেলেই পরিশোধ হবে এ অর্থ। তিনি দাবি করেন, লোকসানের প্রধান কারণ অতিরিক্ত শ্রমিক মজুরি। প্রতিটন পাটপণ্য উৎপাদনে কেবলই শ্রমিকদের মজুরি বাবদ খরচ হয় ৪৫ হাজার ৫০২ টাকা। এছাড়াও প্রতিটন হেসিয়ান পাট কেনায় খরচ হয় ৫৪ হাজার ৪২৭ টাকা। অন্যান্য পণ্যে ৬ হাজার ৯১৫ টাকা এবং বেতন বাবদ ৯ হাজার ৪৮৪ টাকা খরচ হয়। বিশেষ করে শ্রমিক ব্যয় কমানো গেলে কমে আসবে উৎপাদন খরচ। কমবে লোকসানও। সিবিএ নেতাদের অসহযোগিতায় লোকসানের অন্যতম কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন যন্ত্রাংশের কর্মদক্ষতা হ্রাস এবং অন্যান্য অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয়েও ভারি হচ্ছে লোকসানের পাল্লা। তবে অসহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী পাটকলের সিবিএ সভাপতি জিল্লুর রহমান তা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, পাটকলের কর্মপরিবেশ নেই। এটি তৈরি করে দেয়ার দায়িত্ব পাটকল কর্তৃপক্ষের। এছাড়া শ্রমিক সঙ্কট রয়েছে। তবে অতিরিক্ত রয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এর পুরো দায় অদক্ষ ব্যবস্থাপনার। কয়েকটি খাতে আর্থিক অনিয়মের ফলে লোকসান দিন দিন বাড়ছে বলেও জানান তিনি। প্রসঙ্গত, ১৯৬৯ সালে রাজশাহী নগরীর উটকণ্ঠ শ্যামপুর এলাকায় স্থাপন করা হয় উত্তরাঞ্চলের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত এ পাটকল। ৪৯ দশমিক ০২ একর এলাকাজুড়ে এটি স্থাপন করা হয়। স্বাধীনতার পর এটিকে জাতীয়করণ করা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে লোকসানে চলছে পাটকলটি।
×