ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

জন্মশতবর্ষে নানা আয়োজনে শওকত ওসমান স্মরণ

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৩ জানুয়ারি ২০১৭

জন্মশতবর্ষে নানা আয়োজনে শওকত ওসমান স্মরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিছক সাহিত্যের জন্য সাহিত্যচর্চা নয়, মানুষের জন্য সাহিত্য রচনা করেছিলেন শওকত ওসমান। স্বদেশের প্রতি দায়বোধ থেকেই কলম ধরেছিলেন সমাজমনস্ক এই সব্যসাচী লেখক। একদিকে ধর্মান্ধতাকে তুমুলভাবে আঘাত করেছেন অন্যদিকে শোষকের বিরুদ্ধে ছিল তাঁর সোচ্চার উচ্চারণ। লেখনীর মাধ্যমে বলেছেন শোষিতের কথা। সোমবার ছিল বরেণ্য এই কথাশিল্পীর শততম জন্মবার্ষিকী। জন্মশতবর্ষে নানা আয়োজনে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয় এই লেখককে। বিশিষ্টজনদের আলোচনায় উঠে আসে তাঁর বর্ণাঢ্য সাহিত্যজীবন এবং রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতি অঙ্গীকারের কথা। জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে শওকত ওসমানকে নিবেদন করে অনুষ্ঠিত হয়েছে নানা আয়োজন। সকাল থেকে আলোচনা, সঙ্গীত পরিবেশনা, নাট্য প্রদর্শনীসহ আনুষ্ঠানিকতায় লেখককে জানানো হয়েছে ভালবাসা। এদিন সকালে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের উন্মুক্ত চত্বরে দুই দিনব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন করেন রবীন্দ্র গবেষক, ভাষাসংগ্রামী ও লেখক আহমদ রফিক। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীতের পরিবেশনার সাথে উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা। এর আগে উদীচীর শিল্পীরা গেয়ে শোনান ‘আমরা পুবে পশ্চিমে’ ও ‘মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপা রে তুই’ গান দু’টি। এরপর ছিল আলোচনা পর্ব। আহমদ রফিকের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আন্দালিব রাশদী। আলোচনায় অংশ নেন হায়দার আকবর খান রনো, শওকত ওসমানের ছেলে আশফাক ওসমান এবং পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. রাকিবুল ইসলাম। যৌথভাবে এ উৎসবের আয়োজন করে কথাশিল্পী শওকত ওসমান স্মৃতি পরিষদ ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। বিকেলে গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে দ্বিতীয় পর্বের আয়োজনে শওকত ওসমানের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবং সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবু হেনা। অনুষ্ঠানে অতিথিরা শওকত ওসমান স্মারকগ্রন্থ এবং তাঁর ছবির এ্যালবামের মোড়ক উন্মোচন করেন। এ পর্বেও সভাপতিত্ব করেন আহমদ রফিক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘স্মরণ’ কবিতা পাঠ করেন সৈয়দ হাসান ইমাম। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, শওকত ওসমানের সারাজীবনের সাহিত্যকর্মে বিদ্রোহী সত্তার পরিচয় মেলে। ব্যক্তিজীবনে তিনি খুব বন্ধুবৎসল ও রসিক ছিলেন। বয়সের বিস্তর ব্যবধান থাকলেও আমরা বন্ধু ছিলাম। আহমদ রফিক বলেন, সাহিত্যে প্রগতির ধারাকে যুক্ত করেছিলেন শওকত ওসমান। গত শতকের তিরিশের দশক থেকে অবিভক্ত বাংলায় সমাজবাদী সাহিত্যের লেখক হিসেবে শওকত ওসমান ছিলেন উজ্জ্বল নক্ষত্র। শওকত ওসমানের জননী উপন্যাসটি ধ্রুপদী সাহিত্য। এই ভূখ-ের রম্যসাহিত্যেও তিনি যোগ করেছেন নতুন মাত্রা। সাহিত্যের ভুবনে স্যাটায়ারিস্ট হিসেবে তিনি ছিলেন অনন্য। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আমি শওকত ওসমানের সরাসরি ছাত্র ছিলাম না। তবে শিক্ষকতা ও সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি আমাদের জীবনের পাঠ দিয়েছেন। এ সমাজে এখন তাঁর মতো সাহসী মানুষের অভাব বোধ করি। বিশেষ করে যখন সমাজে মৌলবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তখন শওকত ওসমানের আরও বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে আবির্ভূত হন। পাকিস্তান আমলে তাঁর রচিত ‘ক্রীতদাসের হাসি’ আমার কাছে ছিল প্রেরণার উৎস। বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদে তিনি দেশত্যাগ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে যখন ফিরে আসেন তখনও তার প্রতিবাদী চরিত্র অটুট ছিল। পিতৃস্মৃতিচারণ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, আমার পিতা শুধু শিক্ষক ছিলেন না একজন সমাজসংস্কারক ছিলেন। সাধারণত আমাদের সমাজে পিতারা হন হেডমাস্টারের মতো। আমার পিতা এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী ছিলেন। তিনি সন্তানদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশতেন। আলোচনা পর্ব শেষে সন্ধ্যায় শওকত ওসমানের ‘ক্রীতদাসের হাসি’ উপন্যাস অবলম্বনে রচিত ক্রীতদাসের হাসি নাটক পরিবেশন করে নাগরিক নাট্যাঙ্গন। প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন লাকী ইনাম। এছাড়াও অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে প্রদর্শিত হচ্ছে শওকত ওসমানের জীবনের নানা পর্বে বিভিন্ন দুর্লভ আলোকচিত্র। আজ মঙ্গলবার উৎসবের শেষ দিনে শওকত ওসমানকে নিবেদিত আলোচনায় অংশ নেবেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত, শিল্পী হাশেম খান ও কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। এ উৎসবের বাইরেও শওকত ওসমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে সোমবার আরেকটি আয়োজন ছিল জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে। শওকত ওসমান জন্মশতবর্ষ উদ্্যাপন জাতীয় কমিটির বর্ষব্যাপী আয়োজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী। জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ড. আবুল আজাদের সভাপতিত্বে আলোচনা করেন কবি আজিজুর রহমান আজিজ, গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বিদেশে অবস্থানরত শওকত ওসমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র অধ্যাপক বুলবন ওসমানের পিতার স্মৃতিচারণে একটি লেখা পাঠ করেন জাতীয় কমিটির সদস্য-সচিব আনিস মুহম্মদ। অনুষ্ঠানে শওকত ওসমানকে নিবেদন করে কবিতা পাঠ করেন কবি কাজী রোজী, আইরিন খান, আইয়ুব হোসেন প্রমুখ।
×