ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধা শরীফুন নেছার বাড়িতে আশ্রয় নেন তোফায়েল আহমেদ

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬

মুক্তিযোদ্ধা শরীফুন নেছার বাড়িতে আশ্রয় নেন তোফায়েল আহমেদ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেরানীগঞ্জ, ২৪ ডিসেম্বর ॥ মুক্তিযোদ্ধা শরীফুন নেছা বলেন, আমার বাবার বাড়ি কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া ইউনিয়নের আহাদীপুর গ্রামে। বাবা মুক্তিযোদ্ধা মোবারক হোসেন। আমি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি। আমার বাবা ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের সরকারী প্রেসের কর্মচারী। আমার তিন ভাই এবং আমি একমাত্র ছোট বোন। ’৭১-এ আমার বয়স ছিল ২১ বছর। তখন আমি অবিবাহিত ছিলাম। ২৫ মার্চ কালরাতে পাকবাহিনী রাজধানী ঢাকায় হামলার পর থেকে আমার বাবার বাড়ি কেরানীগঞ্জের আহাদীপুর গ্রামে এসে আশ্রয় নেন তোফায়েল আহমেদ, আঃ রাজ্জাক, নূরে আলম সিদ্দিকী, সিরাজুল আলম খানসহ জাতীয় নেতারা। তিনি বলেন, আমাদের বাড়িতে জাতীয় নেতারা দু-তিন দিন আশ্রয় নিয়ে ভারতে চলে গিয়েছিলেন। আমাদের পাঁচটি আধাপাকা টিনশেডের ঘর ছিল। একটিতে আমার মা, বাবা ও ভাইদের নিয়ে থাকতাম। অন্য চারটি ঘরে গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা ও জাতীয় নেতারা গাদাগাদি করে থাকতেন। আর বাড়ির পেছনে চলত প্রশিক্ষণ। আঃ রাজ্জাক, সিরাজুল আলম, শাহজাহান সিরাজ আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। সকালে নাস্তা রুটি পরোটা ডিম খাইয়েছি। তোফায়েল আহমেদ দাড়ি লাগিয়ে আমাদের বাসায় এসেছিলেন। চার দিন পর তারা ভারতে চলে যান। আমি তাদের দুই বেলা রান্না করে খাওয়াতাম। আর কাজ শেষে তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিতাম। নবেম্বর মাসের শেষের দিকে তুলশীখালী এলাকায় ধলেশ্বরী নদীতে অপারেশনে আমি রাত ২টার দিকে অংশগ্রহণ করি। ঢাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধা ওমর আমাদের বাড়িতে আসেন। সেদিন অপারেশনে গুলিবিদ্ধ হয়ে উনি মারা যান। অস্ত্র নিয়ে যাওয়ার সময় ওমর গুলিবিদ্ধ হন। দেশ স্বাধীন হয়েছে ঠিকই। দেশের মারামারি দেখলে মনে দুঃখ পাই। দেশ স্বাধীন না হলে আমাদের অস্তিত্ব থাকত না। শরীফুন নেছার স্বামী দেওয়ান আশরাফ বলেন, ’৭১ সালে আমি সেন্ট্রাল গবর্নমেন্ট প্রেসে চাকরিরত ছিলাম। ২৫ মার্চ ঢাকায় আক্রমণের পর জাতীয় নেতা ও মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের বাড়িতে আশ্রয় নেন। পানি বিস্কুট দিয়ে সাহায্য করি। আমার শ্বশুরবাড়িতে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে যেসব নারী মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য-সহযোগিতা করেছিল তাদের সম্পর্কে ভিন্ন মনোভাব ছিল। আমি তাদের শ্রদ্ধা করি। নারী মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান দিতে আমি শরীফুন নেছাকে বিয়ে করেছিলাম। মুক্তিযোদ্ধার স্বামী হয়ে আমি নিজেকে গর্বিত মনে করি। কেরানীগঞ্জের খোলামুড়া, নয়াগাঁও, আটি, আহাদীপুর, তালেবপুর, রুহিতপুর, পাড়াগ্রামে ৮-৯টি ক্যাম্প করা হয়। আহাদীপুর ক্যাম্প থেকে আবার যুদ্ধের পরিকল্পনা নেয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধা মোবারকের মেয়ে শরীফুন নেছা মুক্তিযোদ্ধাদের খাওয়ানো, গুলি-অস্ত্র লুকিয়ে রাখার তত্ত্বাবধানে ছিলেন। মোবারকের মেয়ে ’৭১ সালে আমাদের যেভাবে সহযোগিতা করেছে তা ভোলার নয়। সেদিন তার মতো অনেক মা-বোন আমাদের সহযোগিতা করেছে। ২৮ নবেম্বর কেরানীগঞ্জে পাক হানাদারবাহিনী অপারেশন চালালে আমি এক বিয়েবাড়িতে গিয়ে উঠি। তখন সে বাড়ির লোকজন বরকে সরিয়ে সে বাড়ির নববধূকে আমার সঙ্গে ঘুমাতে দেয়। একই কাঁথায় আমি নিজেকে রক্ষার জন্য ঘুমিয়ে থাকি।
×