ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

আজ হানাদারমুক্ত দিবস

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬

আজ হানাদারমুক্ত দিবস

মোরেলগঞ্জ স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ দীর্ঘ ৯ মাসের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় মোরেলগঞ্জ। মোরেলগঞ্জ ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি ডাঃ মোসলেম উদ্দিনের নেতৃত্বে ১১জনের দল মোরেলগঞ্জকে হানাদার মুক্ত করেন। ডাঃ মোসলেম উদ্দিন জানান, দলটি ১৩ডিসেম্বর মধ্যরাতে মংলা থেকে মোরেলগঞ্জে আসে। প্রথমে তারা টাউন স্কুল মাঠে অবস্থান নিয়ে ভোর ৪টার দিকে গুলি ছোড়ে। এ সময় মোরেলগঞ্জের ৬টি রাজাকার ক্যাম্পে শতাধিক রাজাকার নদী পার হয়ে পালিয়ে যায়। সকাল ৭টার দিকে রাজাকারদের অন্যতম ঘাঁটি রায়দের বিল্ডিংয়ে অবস্থান নিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ডাঃ মোসলেম উদ্দিন। সকাল ১০টায় পথসভা করে সকলকে স্ব স্ব কর্মে যোগদান ও স্বাভাবিক থাকার আহ্বান জানান। এ সময় তার সাথে ছিলেন নীল রতন মিস্ত্রি, এমকে আজিজ, কচুবুনিয়ার সুলতান আহমেদ, চিংড়াখালীর আঃ রশিদ বক্স, শরণখোলার খায়রুল আলম, অমূল্য কুমার রায়, ভাটখালীর আব্দুল খালেক, কাঁকড়াতলীর চিরানন্দ ম-ল, জিউধরার আব্দুর রাজ্জাক ও রাজেন ম-ল। সাভার নিজস্ব সংবাদদাতা, সাভার থেকে জানান, ১৪ ডিসেম্বর সাভার মুক্ত দিবস। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নাস্তানাবুদ হয়ে পশ্চাৎপসারণকারী হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানার জিরাব এলাকার ঘোষবাগ-গঙ্গাবাগ গ্রামে নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা গ্রুপের সম্মুখযুদ্ধের মাধ্যমে সাভার হয়েছিল শত্রুমুক্ত। ওই যুদ্ধে গোলাম মোহাম্মদ দস্তগীর টিটু নামে অকুতোভয় কিশোর শহীদ হন। তাঁর লাল রক্তে সাভারের লাল মাটি রঞ্জিত হয়ে সেদিন সাভার হয়েছিল শত্রুমুক্ত। মানিকগঞ্জের উত্তর শেওতা গ্রামের তৎকালীন রাজনীতিবিদ ন্যাপ নেতা বাবা গোলাম মোস্তফার অনুপ্রেরণায় ২৭ মার্চ টিটু তার চার সহোদর ভাই জাহাঙ্গীর, আলমগীর, শাহগীর ও বন্দেগীরের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ করার সংকল্পে ভারত যায় প্রশিক্ষণ নিতে। টিটু তখন ১০ম শ্রেণীর ছাত্র। ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশারফের বাহিনীতে সে যুক্ত হয়। এরপর তাকে পাঠানো হয় ঢাকায় যুদ্ধে দায়িত্ব নিয়ে আসা ‘মানিক’ গ্রুপের সাথে। তখন সাভারের আশুলিয়ার তৈয়বপুর এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ক্যাম্প ছিল। ওই ক্যাম্পে নাসিরউদ্দিন ইউসুফ, রাইসুল ইসলাম আসাদসহ বেশ কয়েক মুক্তিযোদ্ধা আসতেন। ঢাকা থেকে নৌকায় তখন ওই এলাকায় আসতে হতো। ১৯৭১ সালের শেষের দিকে পাকবাহিনীর সদস্য এবং তাদের দোসররা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নাস্তানাবুদ হচ্ছিল। তাই তারা পিছু হটে ঢাকার দিকে ফিরছিল। এ সময় ঢাকা উত্তর গেরিলা ইউনিটের প্রধান শহীদ রেজাউল করিম মানিকের গেরিলা গ্রুপটির মূল দায়িত্ব ছিল ঢাকার উত্তরাঞ্চলের কোথাও সেতু উড়িয়ে দিয়ে, ব্যারিকেড দিয়ে অথবা রাস্তা কেটে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে শত্রুবাহিনীর যোগাযোগ বা চলাচলে বিঘœ ঘটানো। এমনই এক অভিযানে ধামরাইয়ের কালামপুরের অদূরে ডাউটিয়া সেতুটি ডিনামাইটের সাহায্যে উড়িয়ে দেয়ার অপারেশনে গ্রুপ কমান্ডার মানিকসহ কয়েক মুক্তিযোদ্ধা ১৩ নবেম্বর শহীদ হন। এরপর বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হওয়া পর্যন্ত গ্রুপটির কমান্ডার ছিলেন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। পার্বতীপুর নিজস্ব সংবাদদাতা,পার্বতীপুর থেকে জানান, যে বিহারীরা পার্বতীপুরকে বিহারীস্থান ঘোষণা দিয়ে নির্বিচারে বাঙালী নিধনে মেতে উঠেছিল তারা শেষ পর্যন্ত হার মেনে কাপুরুষের মতো পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। এই শহরের বাসিন্দা ছিল শতকরা নব্বইভাগ অবাঙালী। মুক্তিযুদ্ধের শেষ মুহূর্তে পরাজয় নিশ্চিত জেনে ১৫ ডিসেম্বর রাত এগারোটার দিকে লুণ্ঠিত মাল ফেলে দিয়ে তারা শহর ছেড়ে বিশেষ ট্রেনযোগে ১৫ কিমি দূরে সৈয়দপুরে পালিয়ে যায় । ওই মুহূর্ত থেকে পুরো এলাকা শত্রুমুক্ত হয়। তার আগে পাকিস্তানী সৈন্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে ধরা পড়ে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর হাতে। গভীর রাতেই মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী হাজারো মানুষ শহরে প্রবেশ করে । মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁকা ফায়ার আর জয়বাংলা সেøাগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে এলাকা। যোল ডিসেম্বর সূর্য ওঠার আগেই শহর পরিণত হয় জনসমুদ্রে।
×