ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

তিন বাহিনীর প্রধান পদের মেয়াদ সর্বোচ্চ চার বছর

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬

তিন বাহিনীর প্রধান পদের মেয়াদ সর্বোচ্চ চার বছর

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধান পদের মেয়াদ সর্বোচ্চ চার বছর নির্ধারণ করে আইন করতে যাচ্ছে সরকার। এ আইন কার্যকর হলে একটি বাহিনীর প্রধান তার অবসরের বয়স ৫৯ বছর পার হওয়ার পরও নির্ধারিত চার বছর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, যদি সরকার তাকে অবসরে না পাঠায়। এই সুযোগ রেখে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রধান (নিয়োগ, অবসর এবং বেতন ও ভাতাদি) আইন, ২০১৬’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সচিবালয়ে ওই বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, সংবিধানের ৬১ থেকে ৬৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে, আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সংসদ প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর প্রধানদের নিয়োগ ও বেতন-ভাতা নির্ধারণ করবে। যেহেতু সংবিধানে বলা আছে, কিন্তু ৪৪ বছরে কোন আইন হয়নি, এজন্য আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতদিন জয়েন্ট সার্ভিসেস ইন্সট্রাকশনস (জেএসআই) নামে একটি নির্দেশাবলীর মাধ্যমে এ বিষয়টি ঠিক করা হতো। সেখানে বাহিনী প্রধান পদে চাকরির সময় নির্ধারণ করা ছিল না। শফিউল আলম বলেন, রাষ্ট্রপতি তিন বাহিনীর প্রধানদের নিয়োগ দেবেন। জনস্বার্থে অবসর না দেয়া হলে বা বাহিনী প্রধান স্বেচ্ছায় অবসরে না গেলে একসঙ্গে বা বর্ধিতকরণসহ সর্বোচ্চ চার বছর ওই পদে থাকা যাবে। চাকরির বয়স থাকুক আর নাই থাকুক, যোগ দেয়ার পর মেয়াদ চার বছর থাকবে। চাকরি থাকলে মাইনাস ধরে নেন, সব মিলিয়ে চার বছর। এর ব্যাখ্যায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চাকরি এক বছর থাকা অবস্থায় কেউ কোন বাহিনীর প্রধান পদে নিয়োগ পেলে তিনি সরকারের ইচ্ছায় আরও তিন বছর সময় পেতে পারেন। জনস্বার্থে অবসরের আদেশ প্রদান না করলে বা বাহিনী প্রধান স্বেচ্ছায় মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই অবসর না নিলে বাহিনী প্রধানের নিয়োগের মেয়াদ একসঙ্গে বা বর্ধিতকরণসহ নিয়োগের তারিখ থেকে অনুর্ধ চার বছর হবে। যেমন ধরুন, জেনারেল হিসেবে অবসরে যাওয়ার কথা ফিফটি নাইনে (বছরে), ওই সময় উনি আর্মি চীফ হলেন। তখন থেকেই উনার (চাকরির মেয়াদ) চার বছর যুক্ত হবে। অবসরের বয়সসীমা ৫৯ বছর এক্ষেত্রে কার্যকর হবে না জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যেদিন নিয়োগ পাবেন সেদিন থেকে সর্বোচ্চ চার বছর ওই পদে চাকরি করতে পারবেন। চাকরি কত বছর আছে না আছে এটি গুরুত্বপূর্ণ না। চাকরি থাকতে থাকতে যোগ দিলে তারপরে উনার চার বছর শুরু হয়ে যাবে। নতুন আইনে তিন বাহিনীর প্রধানদের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সমান, অর্থাৎ ৮৬ হাজার টাকা মূল বেতন রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে শফিউল বলেন, অন্যান্য ভাতাও তারা পাবেন। এককালীন আউটফিট ভাতা পাবেন। বিধি মোতাবেক ভ্রমণ ভাতা পাবেন। দুটো উৎসব ভাতা পাবেন। নববর্ষ ভাতা, শ্রান্তিবিনোদন ভাতা পাবেন। এর বাইরেও তিন বাহিনীর প্রধানরা বিশেষ আবাসিক সুবিধা, আবাসিক সংশ্লিষ্ট সুবিধা, সার্বক্ষণিক গাড়ি, সামরিক হাসপাতালে বিনা খরচে নিজে ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা, রেশন, ভবিষ্যত তহবিল ও সহায়ক জনবল সুবিধা পাবেন। বাহিনী প্রধান পদ থেকে অবসর নেয়ার দিন থেকেই তিনি অবসরপ্রাপ্ত বলে গণ্য হবেন। বেসামরিক কর্মকর্তাদের মতো এক বছরের অবসরোত্তর ছুটিও (পিআরএল) পাবেন। কোন বাহিনী প্রধান অবসর নেয়ার পর কোন সামরিক বা অসামরিক পদে পুনঃনিয়োগ লাভে যোগ্য হবেন না। তবে চুক্তিভিত্তিতে কোন অসামরিক পদে নিয়োগ পেতে পারেন। অবসরপ্রাপ্ত তিন বাহিনী প্রধানরা প্রজাতন্ত্রের কোন কাজে সামরিক বা বেসামরিক নিয়োগের অযোগ্য বিবেচিত হলেও সাংবিধানিক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বাধা থাকবে না। সীমান্ত হাট বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বর্ডার-হাট (সীমান্ত হাট) স্থাপন ও পরিচালনা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক পুনঃস্বাক্ষরের জন্য খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ২০১০ সালের ২৩ অক্টোবর সীমান্ত হাটগুলো তিন বছরের জন্য শুরু হয়। এরই মধ্যে তিন বছর পার হয়ে গেছে। সেজন্য আবার নবায়নের প্রয়োজন দেখা দেয়। নবায়ন করতে গিয়ে একটু সংশোধন করা হয়েছে। চারটি জায়গায় হাট রয়েছে, সাফল্যের সঙ্গে সে হাট কাজ করছে। আরও কিছু জায়গায় হাট স্থাপনের প্রস্তাব আছে। মেয়াদ তিন বছরের জায়গায় পাঁচ বছর করার প্রস্তাব রয়েছে। তিনি জানান, বর্ডার হাটে বিক্রেতার সংখ্যা ২৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ জন করা হয়েছে। পণ্য ক্রয়সীমা ১০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে হয়েছে ২০০ ডলার করা। হাটে অনুমতি দেয়ার ক্ষমতা জেলা প্রশাসক বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হলেও প্রস্তাবে রাখা হয়েছে এ পদের কর্মকর্তার অনুমোদিত কর্মকর্তাও (অথরাইজড অফিসার) দিতে পারবেন। মৌলভীবাজারের জুড়ি-বটুলী, কমলগঞ্জের কোমরাঘাট, মেঘালয় সীমান্তে আরও চারটিসহ মোট ছয়টি হাট লাইনে রয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। বীজ আইন চাষাবাদের জন্য বীজের মান নির্ধারণ ও প্রত্যয়ন করতে ‘বীজ আইন, ২০১৬’ খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ১৯৭৭ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী বীজের কার্যাক্রম চলে। পরিবর্তনের মধ্যে বীজের সংজ্ঞা, বীজ বোর্ড নিয়ে একটি সংস্থার প্রস্তাব করা হয়েছে। বীজের মান নির্ধারণ করবে বোর্ড। কৃষি সচিব তার চেয়ারম্যান হবেন। সরকারী বীজাগার থাকবে, সেখানে বীজ টেস্ট করা হবে। বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি নামে একটি সংস্থা বীজ প্রত্যয়ন করে সনদ দেবে। মিস ইউজ করলে বীজের সনদ প্রত্যাহার করতে পারবে। বীজের ব্যবসা করতে গেলে সনদ লাগবে। বীজের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পপি বীজকে বীজ হিসেবে নয়, মাদক হিসেবে গণ্য করা হবে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন-২০১৬, ১৯৭৩ সালের প্রথম আইন করে ১৯৯৬ সালে বড় রকমের সংশোধনী আনা হয়। উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী বাধ্যবাধকতা থাকায় দুটো বিষয়কেই শুধু বাংলায় রূপান্তর করা হয়েছে। নীতিগত অনুমোদন দিয়ে আইনে অল্প কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। ইনস্টিটিউটের কার্যাবলী একটু ডিটেইল করে পাঁচটির জায়গায় বাড়ানো হয়েছে। আইনে কাউন্সিল ও বোর্ডের গঠন সম্পর্কে বলা হয়েছে। ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক হবেন বোর্ড চেয়ারম্যান। অর্থ, কৃষি, কাউন্সিলের মনোনীত একটি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। চার মাস পর পর মিটিং করবে বোর্ড। চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে ডিগ্রী বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (সংশোধন) আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয় মন্ত্রিপরিষদ সভায়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০১৩ সালে একটি আইন হয়েছে, ছোট ছোট কিছু সংশোধনী করা হয়েছে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা দিতে পারবে।
×