ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ব্যাকের চক্রটি রিজার্ভের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল করেছে ॥ সিআইডি

প্রকাশিত: ০৮:০৬, ১০ ডিসেম্বর ২০১৬

বাংলাদেশ ব্যাকের চক্রটি রিজার্ভের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল করেছে ॥ সিআইডি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরের একটি চক্র রিজার্ভ চুরির ঘটনায় জড়িত। আর এই অর্থ চুরির ঘটনায় বিদেশী চক্রকে সহায়তা করেছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ওই চক্রটি। তিনটি ধাপে পরিকল্পিতভাবে এই রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটেছিল। সিআইডির তদন্ত দলটি এই চুরির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। ইতোমধ্যে সিআইডির হাতে চুরিতে সহায়তাকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের চিহ্নিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নামের তালিকা তাদের হাতে এসেছে। যে কোন মূহূর্তে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন সিআইডি। এদিকে রিজার্ভ চুরির বিষয়ই বাংলাদেশে মামলার তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। তাদের তদন্ত প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। সিআইডি পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি ও তদন্ত দলের প্রধান শাহ আলম জনকণ্ঠকে জানান, এই চক্রটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা অরক্ষিত করে হ্যাকিংয়ে বা অর্থ চুরিতে সহায়তা করেছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তারা এই চক্রটিকে চিহ্নিত করেছেন। তিনি জানান, ফিলিপিনোসহ বিদেশী ২৩ জন নাগরিক এই চুরির সঙ্গে জড়িত। তাদের মধ্যে ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মূল হোতাদের ধরা সম্ভব। তিনি জানান, আপাতত রিজার্ভ চুরির সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই চক্রটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হোতাদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ পাওয়া যাবে। উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারিতে নিউইয়র্কে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশের রিজার্ভের আট কোটি দশ লাখ ডলার চুরি হয়। সিআইডি তদন্ত দলটি এখন নিশ্চিত হয়েছেন যে, অর্থ চুরির ঘটনায় বিদেশী চক্রকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা সহায়তা করেছেন। তদন্ত দলের প্রধান শাহ আলম জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরের চক্রটি রিজার্ভের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ধীরে ধীরে দুর্বল করেছে। এর ফলে হ্যাকাররা বা বিদেশী চক্র সহজেই অর্থ চুরি করতে পেরেছে। সিআইডি পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি এবং তদন্ত দলের প্রধান শাহ আলম বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরের চক্রটি রিজার্ভের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ধীরে ধীরে দুর্বল করেছে। এরফলে হ্যাকাররা বা বিদেশী চক্র সহজেই অর্থ চুরি করতে পেরেছে। তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কর্মকর্তাদের এবং মূল হোতা বা বিদেশী চক্রটিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখনও বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই চক্রটি প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পরবর্তীতে রিজার্ভ চুরির সঙ্গে জড়িত ফিলিপিনোসহ বিদেশী ২৩ নাগরিকের মধ্যে চিহ্নিত ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেয়া হবে। সিআইডির কর্মকর্তা শাহ আলম বলেছেন, রিজার্ভ চুরির পেছনে পরিকল্পিত তিনটি ধাপ ছিল। প্রথম ধাপেই বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে দুর্বল বা অরক্ষিত করা হয়েছে। সেটা ব্যাংকেরই সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তা করেছেন। তিনটি ধাপের এই কর্মকাণ্ডের ব্যাপারেই সুস্পষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ তদন্তদল পেয়েছেন। শাহ আলম আরও জানান, রিজার্ভের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই সুরক্ষিত ছিল। সেই সিস্টেমকে ধাপে ধাপে দুর্বল বা অরক্ষিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা এবং দেশের বাইরের কিছু ঠিকাদার বা বিদেশীরা মিলে এই কাজ করেছে। আর এই অরক্ষিত করার ফলেই হ্যাকিং করা সম্ভব হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা যারা সিস্টেম বা বিষয়গুলো জানেন বা বোঝেন। তারাই বিদেশীদের প্ররোচনায় সিস্টেমকে অরক্ষিত করেছেন। এর সুনির্দিষ্ট প্রমাণ আমরা পেয়েছি। তবে সিআইডি পুলিশ এই মুহূর্তে চিহ্নিত কর্মকর্তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি নয়। তিনি বলেছেন, প্রথম ধাপে মূল হোতারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তার মাধ্যমে রিজার্ভের নিরাপত্তার সিস্টেমকে দুর্বল করে হ্যাকিংয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে। দ্বিতীয় ধাপে বিদেশীরা হ্যাকিং করেছে। আর তৃতীয় বা শেষ ধাপে দুর্বল ব্যবস্থাপনা ব্যাংক বা অর্থ চুরির ঘটনার জের ধরে পদত্যাগ করেছিলেন সে সময়কার গবর্নর আতিউর রহমান। অন্যদিকে গত বৃহস্পতিবার সরকারী তদন্ত কমিটির প্রধান এবং সাবেক গবর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে উদ্ধৃত করে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রিজার্ভ চুরিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঁচজন কর্মকর্তার অবহেলা এবং অসতর্কতার প্রমাণ সরকারী কমিটির তদন্তে পাওয়া গেছে। তবে সরকারী কমিটি মে মাসে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর কয়েক দফায় সেই প্রতিবেদন প্রকাশ করার কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, দেশের স্বার্থে তা প্রকাশ করা হচ্ছে না। তবে রিজার্ভ চুরির বড় অংক ফিলিপিন্স থেকে উদ্ধারের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সম্প্রতি দেশটিতে সফরে গিয়েছিলেন। আনিসুল হক বলেছেন, অর্থ আদায়ের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই তদন্তের এসব অগ্রগতি সম্পর্কে এখন ফিলিপিন্সকে জানানো হবে। কারণ তার সফরের সময় ফিলিপিন্স সরকার বাংলাদেশের তদন্তের অগ্রগতি জানতে চেয়েছে। তিনি বলেছেন, তারা শুধু তদন্তের অগ্রগতি জানতে চেয়েছে। সেটা জানাতে সমস্যা নাই। সেটুকুই বাংলাদেশ জানাবে। রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর গবর্নর আতিউর রহমানকে বিদায় নিতে হয়েছে। কিন্তু কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
×