ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

নাসিক নির্বাচন

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আজ বৈঠকে বসছে ইসি

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১০ ডিসেম্বর ২০১৬

 আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আজ বৈঠকে বসছে  ইসি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ও জেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আজ শনিবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে বসছে ইসি। বেলা এগারোটায় এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ সভাপতিত্ব করবেন। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট বাহিনীকে বৈঠকে উপস্থিত থাকতে কমিশনের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আগামী ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এছাড়া এ মাসের ২৮ তারিখে দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হবে ৬১ জেলা পরিষদ নির্বাচন। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইসির আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রার্থীরা এখন ভোট প্রার্থনায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। অপরদিকে আগামী ১২ ডিসেম্বর থেকে জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারে নামবেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে ইতোমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এজন্য তারা নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে। অবশ্য নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভীও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বাধ্য করতে হবে। এছাড়া তিনি অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের আহ্বান জানিয়েছেন নির্বাচনের আগেই। বিএনপি প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান সেনাবাহিনী মোতায়েনের পাশাপাশি ২২ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগেই বৈধ অস্ত্রও জমা নেয়ার আহ্বান জানান। এমন পরিস্থিতিতে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করতে তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী সম্প্রতি ভোটার ও প্রার্থীদের আশ্বস্ত করে বলেন, কমিশন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। কমিশন সুত্রে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আজকের বৈঠকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন কিভাবে সুষ্ঠু করা যায় আলোচনায় সে বিষয়ের ওপরই বেশি জোর দেয়া হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও ইসির পক্ষ থেকে দেয়া হবে। এছাড়াও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতিও বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। আলোচনার ভিত্তিতেও নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া ইসির পক্ষ থেকে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় একটি প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। ইসির এ প্রস্তাবনাও এই বৈঠকে অনুমোদন করা হতে পারে বলে জানা গেছে। তবে জানা গেছে, বিএনপি দাবি করলেও এ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা ভাবছে না ইসি। নির্বাচন কমিশনার মোঃ শাওনেওয়াজ সম্প্রতি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বৈঠকে পরিস্থিতি বোঝার পর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। যেকোন নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত হয় কমিশন। আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে তিনি এও উল্লেখ করেন পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জে গত নির্বাচনে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যারা দায়িত্বে ছিলেন তা যথেষ্ট ছিল। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে বিদায় বেলায় এ নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হবে তাদের। তাদের মতে রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন বাদ দিলে এ কমিশনের অধীনে অধিকাংশ নির্বাচনই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তাই বিদায়ের শেষ মুহূর্তে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না তাও নির্ভর করছে মূলত কমিশনের কর্মকা-ের ওপর। অবশ্য কমিশন বলছে, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। নির্বাচন কমিশনে সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১৭৪টি। অবশ্য ইসির পক্ষ থেকে এখনও ঝুঁকিপুর্ণ কেন্দ্রের তালিকা করা হয়নি। অবশ্য এ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান ১৭৪ ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৫৩টি ভোট কেন্দ্র অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলে দাবি করেছেন। ইতোমধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র তালিকা দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তবে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আজকের বৈঠকে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা করা হবে। বিশেষ করে এসব কেন্দ্রে সাধারণ কেন্দ্রের চেয়ে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাধারণ কেন্দ্রে যেখানে অস্ত্রধারীসহ মোট ২২ জন নিরাপত্তা প্রহরী মোতায়েতন করা হবে সেখানে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ২৪ জন সদস্য। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে আলোচনার জন্য ইসির পক্ষ থেকে যে নিরাপত্তা প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে সেখানে পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার, র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েনের কথা বলা হয়েছে। দেশে প্রথমবারেরর মতো নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এছাড়া নির্বাচনে একজন মেয়র ছাড়াও ২৭ জন কাউন্সিলর ও ৯ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর নির্বাচনে ভোট দেবেন ভোটাররা। আগামী ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। মেয়র পদে দলীয় ভিত্তিতে হলেও বাকি কাউন্সিলর পদে ভোট হচ্ছে নির্দলীয় ভিত্তিতে। তবে জানা গেছে, কাউন্সিলর পদে নির্দলীয় ভোট হলেও রাজনৈতিক দলের সমর্থনে এ পদে প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থী ছাড়া ২৭ কাউন্সিলর ও ৯ সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদেও এ দুটি দলের সমর্থিক প্রার্থীরা অংশ নিচ্ছেন। এছাড়া দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরাও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বলে জানা গেছে।
×