ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

আজ হানাদার মুক্ত দিবস

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ৭ ডিসেম্বর ২০১৬

আজ হানাদার মুক্ত দিবস

সাতক্ষীরা স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ ৭ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে সাতক্ষীরার দামাল ছেলেরা থ্রি নট থ্রি আর এসএলআরের ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে সাতক্ষীরা শহরে প্রবেশ করে। ওড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা। দীর্ঘ ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে সেদিনের সাহসী সস্তানরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। শত্রুর বুলেটের আঘাত সহ্য করেও সাতক্ষীরার সন্তানরা অন্তত ৫০টি যুদ্ধের মোকাবেলা করেছিল। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ সাতক্ষীরা শহরে পাকিস্তানবিরোধী মিছিলে পাকিরা গুলি করে হত্যা করে আব্দুর রাজ্জাককে। আর এখান থেকে শুরু হয় সাতক্ষীরার দামাল ছেলেদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া। ৮ম ও ৯ম সেক্টরের অধীনে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ট্রেনিং শেষে ২৭ মে ভোমরা সীমান্তে প্রথম সম্মুখযুদ্ধ শুরু হয় । এ সময় পাক সেনাদের দুই শতাধিক সৈন্য নিহত হয়। ১৭ ঘণ্টাব্যাপী এ যুদ্ধে শহীদ হন তিন মুক্তিযোদ্ধা। আহত হন আরও দুই মুক্তিযোদ্ধা। এরপর থেমে থেমে চলতে থাকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের গুপ্ত হামলা। এসব যুদ্ধের মধ্যে ভোমরার যুদ্ধ, টাউন শ্রীপুর যুদ্ধ, বৈকারী যুদ্ধ, খানজিয়া যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। এসব যুদ্ধে শহীদ হন ৩৩ মুক্তিযোদ্ধা। লাইটের আলোয় অসুবিধা হওয়ায় ৩০ নবেম্বর টাইমবোমা দিয়ে শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত পাওয়ার হাউস উড়িয়ে দেন মুক্তিযোদ্ধারা । রাতের আঁধারে বেড়ে যায় মুক্তিযোদ্ধাদের গুপ্ত হামলা। পিছু হটতে শুরু করে পাক সেনারা। ৬ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের হামলায় টিকতে না পেরে বাঁকাল, কদমতলা ও বিনেরপোতা ব্রিজ উড়িয়ে দিয়ে পাক বাহিনী সাতক্ষীরা থেকে পালিয়ে যায়। ৭ ডিসেম্বর জয়ের উন্মাদনায় জ্বলে ওঠে সাতক্ষীরার দামাল ছেলেরা। মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ, স্বাধীনতার ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলেও সাতক্ষীরার বধ্যভূমি গণকবরগুলো সংরক্ষণ করা হয়নি। অযতেœ আর অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে বধ্যভূমি ও গণকবরের স্মৃতিচিহ্ন। গাইবান্ধা নিজস্ব সংবাদদাতা গাইবান্ধা থেকে জানান, আজ ৭ ডিসেম্বর গাইবান্ধা হানাদার মুক্ত দিবস। এ দিনে কোম্পানি কমান্ডার মাহবুব এলাহী রঞ্জুর (বীরপ্রতীক) নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের কালাসোনার চর থেকে বালাসীঘাট হয়ে গাইবান্ধা শহরে প্রবেশ করে। এর আগের রাতেই স্টেডিয়ামে অবস্থিত পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যরা তাদের তল্পিতল্পা গুটিয়ে রংপুর ক্যান্টনমেন্টের উদ্দেশে পালিয়ে যায়। এর আগের দিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশ-ভারতের সম্মিলিত যৌথ বাহিনীর বিমান গাইবান্ধা রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। ফলে পাকবাহিনী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে শহরে র‌্যালি, দোয়াখায়ের ও আলোচনা সভা। মাগুরা নিজস্ব সংবাদদাতা মাগুরা থেকে জানান, আজ মাগুরা মুক্ত দিবস । ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর মাগুরা পাক হানাদার মুক্ত হয়েছিল । দিবসটি পালন উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা ইউনিট কমান্ড বিভিন্ন কর্মসূচীর আয়োজন করেছে । কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে বিজয় র‌্যালি, মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামান মিলনায়তন প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা , স্মৃতিচারণ, দোয়ামাহফিল । আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন মুক্তিযোদ্ধা সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব) এটি এম আব্দুল ওয়াহহাব এমপি । বিশেষ অতিথি থাকবেন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য কামরুল লায়লা জলি এমপি । প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব এ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর । সভাপতিত্ব করবেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার মোল্লা নবুয়ত আলী। শেরপুর নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর থেকে জানান, আজ ৭ ডিসেম্বর; শেরপুর পাক হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধারা শেরপুর অঞ্চলকে শত্রুমুক্ত করেন। এদিন ভারতীয় সেনা বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার ও মিত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা হেলিকপ্টারযোগে শেরপুর শহীদ দারোগ আলী পৌরপার্ক মাঠে অবতরণ করেন। ওই সময় শেরপুরের মুক্তিকামী ছাত্রজনতা জেনারেল অরোরাকে এক সংবর্ধনা দেন। তিনি সংবর্ধনা সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে শেরপুরকে হানাদারমুক্ত বলে ঘোষণা দেন। ওইসময় মুক্ত শেরপুরে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
×