ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বার্ষিক ব্যাংকিং কনফারেন্সের সমাপনী সেশনে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ

ব্যাংক পরিচালকদের ‘আজীবন’ দাবি অযৌক্তিক

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ৬ ডিসেম্বর ২০১৬

ব্যাংক পরিচালকদের ‘আজীবন’ দাবি অযৌক্তিক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বেসরকারী খাতের ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকরা ‘আজীবন’ ব্যাংকের পরিচালক থাকতে চাইলেও তার সঙ্গে বিরোধিতা করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ। তিনি বলেছেন, ব্যাংক খাতে এ ধারা পুনরায় ফিরিয়ে আনা হলে ব্যাংক একটি স্বার্থান্বেষী মহলের দখলে চলে যেতে পরে। এতে অন্য শেয়ারহোল্ডাররাও তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন। ব্যাংকিং খাতের এ ধারা আমানতকারীদের অধিকারও সুরক্ষা করে না। এটি পুরোপুরি অযৌক্তিক। সোমবার সকালে রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত বার্ষিক ব্যাংকিং কনফারেন্সের দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে মূল প্রবন্ধে তিনি এ কথা বলেন। বিআইবিএম মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ এতে সভাপতিত্ব করেন। ইব্রাহীম খালেদ মূল প্রবন্ধে বলেন, বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) দাবি ঠিক নয়। ব্যাংকিং খাতের মোট পরিচালনা মূলধন আসে দুটি উৎস থেকে। একটি উদ্যোক্তাদের পরিশোধিত মূলধন, অন্যটি গ্রাহকের আমানত। উদ্যোক্তাদের মূলধন ১০ শতাংশের নিচে। কিন্তু গ্রাহকের আমানত হলো ৯০ শতাংশ। ফলে যদি কোন ব্যাংক ব্যর্থ হয়ে যায়, তাতে উদ্যোক্তারা হারাবেন ১০ শতাংশ। কিন্তু ৯০ শতাংশ অর্থ যাবে আমানতকারীদের। তাই আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় উদ্যোক্তোদের পরিচালকদের দুই মেয়াদের থাকতে দেয়া যাবে না। তিনি আরও বলেন, পরিচালকদের মেয়াদ নির্ধারণ শুধু বাংলাদেশে নয়। এটি বিশ্বের অনেক দেশেই পরিপালন করা হয়ে থাকে। মূল প্রবন্ধে তিনি আরও বলেন, বিএবি দাবি করেছে, একই পরিবারের যারা কর দিয়ে থাকেন এবং পূর্ণ বয়স হয়েছে তাদের পরিবারের সদস্য হিসেবে বিবেচনা না করে পর্ষদে যাতে আনা যায়। এটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এটা গ্রাহকের স্বার্থ নষ্ট হবে। এতে তিনি বলেন, ব্যাংক পরিচালক নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানূমতির প্রক্রিয়াটি ঠিক নয় বলে বিএবি দাবি করেছে। কিন্তু এটা ঠিক নয়। তারা এটি প্রধান নির্বাহী নির্বাচনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে মিলিয়েছেন। তবে মনে রাখতে হবে, প্রধান নির্বাহীও কিন্তু পদাধিকার বলে ব্যাংকের পরিচালক। তিনি বলেন, সাংসদদের এ প্রক্রিয়ায় আসতে হয়। বিএবি এবং এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ মিলে গিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করায় সাবেক এই ডেপুটি গবর্নর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ আলাদাভাবে চলে। এতে ভারসাম্য আছে। কিন্তু এখানে সেটি থাকেনি। করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে ব্যয়কে বিএবি করমুক্ত রাখার দাবি করেছে। এই দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন ইব্রাহীম খালেদ। তিনি বলেছেন, এটি সামাজিক নিরাপত্তায় যাচ্ছে। এখানে করমুক্ত রাখতে হবে। ২০১৩ সালে সংশোধিত ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী, ব্যাংকের পরিচালকরা টানা দুই মেয়াদ (৬ বছর) পরিচালক থাকতে পারেন। মাঝখানে বিরতি দিয়ে পরে আবার তারা পরিচালক পদে ফিরতে পারেন। শ্রম আইন অনুযায়ী ব্যাংকের মুনাফার একটা অংশ শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে দেয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু ব্যাংকের মালিকরা সেটি চান না। বিএবিএর এই দাবিরও বিরোধতা করেছেন ইব্রাহীম খালেদ। দুই দিনব্যাপী ব্যাংকিং কনফারেন্স রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির উদ্বোধন করেন। কনফারেন্সে ২৩টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। সোমবার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান।
×