ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার এলাকায় বিএনপি নেতৃবৃন্দ

হাইকোর্টের নির্দেশে ধান কাটতে পেরে উৎফুল্ল সাঁওতালরা

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৯ নভেম্বর ২০১৬

হাইকোর্টের নির্দেশে ধান কাটতে পেরে উৎফুল্ল সাঁওতালরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা, ১৮ নবেম্বর ॥ গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার এলাকায় বপন করা ধান কাটার জন্য হাইকোর্টের নির্দেশ পেয়ে দারুণ উৎফুল্ল সাঁওতালরা। ফলে বিলম্বে হলেও তারা নতুন চালের পিঠা তৈরি করে এবার নবান্ন (সাঁওতালদের ভাষায় লবান) উৎসব পালন করতে পারবে। এদিকে গোবিন্দগঞ্জে সাপমারা ইউনিয়নের মাদারপুর সাঁওতাল পল্লী পরিদর্শন করেছে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। শুক্রবার সকালে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও প্রতিনিধি দলের প্রধান জয়নুল আবদিন ফারুকের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন বিএনপি নেতা সাবেক মন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলু, গ্রাম বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি আনিচ্ছুজ্জামান খান বাবু, এ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী, জয়ন্ত কুমার কু-ু, ধর্মবিষয়ক সহ-স¤পাদক অমলেন্দু দাস অপু, সুশীল বড়ুয়া প্রমুখ। এ সময় জেলা বিএনপির সাংগঠনিক স¤পাদক এ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান মিজান, উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান ম-ল, পৌর বিএনপির সাধারণ স¤পাদক আলতাব হোসেন পাতাসহ জেলা ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ময়মনসিংহ জেলার আদি ক্ষুদ্র-জনগোষ্ঠীর একটি প্রতিনিধি দল সাঁওতাল পল্লী পরিদর্শন করেন। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সংঘর্ষের ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং সাঁওতালদের বর্তমান অবস্থার খোঁজ খবর নেন। পরে সাঁওতাল পল্লীতেই তাৎক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলনে জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, সরকারী দলের মদদে পুলিশের ছত্রছায়ায় ৬ নবেম্বর সাঁওতালদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছিল। আমরা ক্ষমতায় গেলে অক্ষরে অক্ষরে এর বিচার করা হবে। এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন সাবেক মন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলু। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যন্ত্রই স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে আদিবাসী সাঁওতালদের ওপর হামলা, অত্যাচার ও নিপীড়ন চালিয়েছে। পরে ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসী সাঁওতালদের মধ্যে শাড়ি, লুঙ্গি ও বিভিন্ন প্রকার ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। উৎফুল্ল সাঁওতালরা ॥ সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের চিনিকল কর্তৃপক্ষের জমি রয়েছে ১৮শ’ ৪২ একর। এরমধ্যে জয়পুর ও মাদারপুর গ্রাম সংলগ্ন ইক্ষু খামারের জমি দখল নিয়ে সেখানে গত ১ জুলাই বসতি স্থাপন করে এবং আখের জমিতে আমন ধান চাষ করে। গেল ৬ নবেম্বর ওই এলাকা থেকে তাদের উচ্ছেদ করে মিল কর্তৃপক্ষ ওই জমির চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে দেয় এবং পরিত্যক্ত জমিগুলোতে আখের বীজ রোপণ শুরু করে। সাঁওতালদের রোপণকৃত জমির ধান পেকে কাটার উপযোগী হলেও তারা তা কাটতে পারছিলেন না। হাইকোর্টের এ নির্দেশ প্রাপ্তির পর তারা নিজেরাই কাটতে পারবেন এমন খবর পেয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের জয়পুর ও মাদারপুর সাঁওতাল পল্লীর সাঁওতালদের মধ্যে উৎফুল্ল ভাব দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে সাঁওতাল ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির কোষাধ্যক্ষ রাফায়েল হাসদার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি জানান, আমরা খুব খুশি যে আমাদের নিজেদের ধান কাটতে পারব। কিন্তু ওই এলাকায় মিল কর্তৃপক্ষের কাঁটা তারের বেড়া থাকায় আমরা কিভাবে সেখানে গিয়ে ধান কাটতে পারব সেটা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। তবে ধান কাটার ব্যাপারে স্থানীয় সাঁওতাল নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে আমরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব বলে তিনি জানান। গত ৬ নম্বের, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের আখের বীজ কাটাকে কেন্দ্র করে খামারের জমি দখলকারী আদিবাসী সাঁওতালের সঙ্গে শ্রমিক-কর্মচারী ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এ সময় সাঁওতালদের নিক্ষিপ্ত তীর-ধনুকের আঘাতে ১০ পুলিশ তীরবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানায় ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত সাড়ে ৩শ’ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে।
×