ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের অভিমত

বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে, ব্যর্থ হয়েছে কার্বন নির্গমন কমাতে

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৭ নভেম্বর ২০১৬

বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে, ব্যর্থ হয়েছে কার্বন নির্গমন কমাতে

কাওসার রহমান, মারাকেশ, মরক্কো থেকে ॥ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মানুষকে বাঁচাতে হলে অভিযোজনের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ধনী দেশগুলোর কার্বন নির্গমন কমানোর (প্রশমন) যে লক্ষ্য ছিল তা ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা অপ্রতিরোধ গতিতে বাড়ছে। এ অবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো কার্যক্রম জোরদার ছাড়া জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মানুষকে বাঁচানো যাবে না। এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আতিক রহমান উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা হ্রাসে আমাদের কার্বন কমানোর যে লক্ষ্য ছিল তা ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বর্তমানে যে হারে তাপমাত্রা বাড়ছে তাতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা কম করে হলেও ২.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। ইতোমধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা দশমিক ৮৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। এতেই একের পর এক উত্তপ্ত বছরের রেকর্ড ভাঙছে। বিশ্ব বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। সেক্ষেত্রে বৈশ্বিক উষ্ণতা ৩ ডিগ্রী বাড়লে পৃথিবীতে কি ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে সেটা ভেবে আমি খুব উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, প্যারিস চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা দেড় ডিগ্রীতে সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব না হলেও দুই ডিগ্রীতে রাখার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়লেও পৃথিবীতে বন্যা, খরার তীব্রতা বাড়ছে। এতে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়বে। বন্যা খরার তীব্রতা যত বাড়বে তত রাজনৈতিক সহিংসতা বাড়বে। অস্ত্র ও অর্থের দৌরাত্ম্যে পৃথিবী অস্থিতিশীল হয়ে পাড়বে। ড. আতিক রহমান বলেন, সব দেশ যদি ঠিকঠাক মতো তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কার্বন নির্গমন হ্রাস করে তা হলেও বৈশ্বিক উষ্ণতা দুই ডিগ্রীর নিচে নামানো সম্ভব নয়। চীন প্রতি দুই ঘণ্টায় একটি করে উইন্ড মিল করছে। কয়লার ওপর চাপ কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে জোর দিচ্ছে। ভারত কয়লার বদলে জ্বালানি অন্য জগত খুঁজছে। তা সত্ত্বেও তাদের ৭৫ কোটি দারিদ্র্য মানুষের উন্নয়নের জন্য বিদ্যুত ও পানি দরকার। এজন্য তাদের উন্নয়ন দরকার। ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা দুই ডিগ্রীর নিচে রাখতে হলে আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। এ অবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো তথা অভিযোজন বা এডাপটেশনের চাহিদা বাড়বে। ফলে অভিযোজন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয় ও ক্ষতির (লস এনড ডেমেজ) ইস্যুটি আরও বড় হয়ে দেখা দেবে। ওয়ারশো ইন্টারন্যাশনাল ম্যাকানিজম অনুযায়ী, মারাকাশে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয় ও ক্ষতির ইস্যুটি পর্যালোচনরা করে একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের কথা ছিল। কিন্তু মারাকাশে এসে ওই পর্যালোচনার শুরু হয়েছে। তবে তা শেষ হতে আরও এক বছর লেগে যাবে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয় ও ক্ষতির বিষয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন পিছিয়ে যাবে। আবার ওই পরিকল্পনা কয় বছরের হবে তা নিয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো চাইছে ওই পরিকল্পনা পাঁচ বছরের জন্য করতে। কিন্তু উন্নত দেশগুলো তা দুুই বছরের জন্য করার চাপ দিচ্ছে। যদিও বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল আশা করছে ওই পরিকল্পনা পাঁচ বছর মেয়াদী হবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সমন্বয়কারী এবং পরিবেশ ও বন সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দখেছেন। তিনি আশা করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয় ও ক্ষতির ওয়ারশো ইন্টারন্যাশনাল ম্যাকানিজমের পার্যালোচনা দুই বছরের মধ্যে শেষ হবে এবং পাঁচ বছর মেয়াদী একটি পরিকল্পান প্রণয়ন করা হবে। বৈশ্বিক উষ্ণতা যত বাড়বে, তত জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয় ও ক্ষতির পরিধি বাড়বে। ফলে জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা বেড়ে যাবে। এতে উন্নত দেশগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি হবে।
×